জৈদুল সেখ, মুর্শিদাবাদঃ
কান্দি থানার জীবন্তি মুসলিম প্রধান গ্রামে সম্প্রীতি বার্তা দিয়ে একশো সতেরো বছর ধরে স্বমহিমায় পুজো হয়ে আসছে মিত্র পরিবারে। কবির ভাষায় “হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?” কেবলমাত্র হিন্দুরাই নয়, লক্ষীনারায়নপুর, উদয়চাঁদপুর, দূর্গাপুরসহ ছয়টি গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সেকেন্দার শেখ, সফিউর রহমান, তফেজুলরা মিত্র পরিবারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর সামাজিক অনুষ্ঠান করছেন বছরের পর বছর। তাঁদের চিন্তাভাবনা, ফুটে ওঠে শিল্পকাজের মধ্যে দিয়ে।
মিত্রর পারিবারিক পুজো হলেও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের যোগদানে হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। তাঁরা সমাজকে দিতে চান সম্প্রীতির বার্তা..এই পৃথিবীকে ভালোবাসি…. এক নীড়ে থাকি পাশাপাশি।
উল্লেখ্য, আজ থেকে প্রায় একশো সতেরো বছর আগে এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রথিতযশা ডাক্তার তারক নাথ মিত্র ও তার স্ত্রী আতর মোহিনী দাসী। এই পুজো প্রচলনের পিছনেও একটি ইতিহাস আছে সেই গল্প শোনালেন মিত্র পরিবারের সদস্য অনিব্রত মিত্র– জীবন্তি থেকে কিছুটা দূরে মহলন্দী গ্রামে তারকনাথ বাবুর শ্বশুরবাড়ি সেখানে প্রতিবছর দুর্গাপূজা হত, কোন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ওই বছর পুজো করা সম্ভব হয়নি তখন তারকনাথ বাবু ও তার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন ওই পূজোর সেই বছর তাদের বাড়িতেই হবে। পরের বছর শ্বশুরবাড়িতে আবার পুজো আরম্ভ হলেও তারকনাথ বাবু তার পুজো বন্ধ করেননি এই ভাবেই মিত্র বাড়ির পুজোর প্রচলন হয়।
এই পুজোর বিশেষত্ব হল, পূজার সমস্ত রীতি-নীতি নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সহিত এই পুজো হয়। শাক্ত মতে পুজো হলেও কোন প্রাণী বলি দেয়া হয় না। তার পরিবর্তে বাড়িতে বানানো একটি বিশেষ ছানাবড়া, সেটাই বলি দেওয়া হয়। অতীতে সন্ধি পূজার সময় বন্দুক কাটানো হত কিন্তু বর্তমান শব্দবাজির আইনে তা বন্ধ করা হয়েছে। এই পুজোর আর একটি বিশেষত্ব হলো গ্রামের এবং আশেপাশের অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিম সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ তো করেন এবং নবমীর দিন বিশেষ অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন মিত্র পরিবার।
মুসলিম এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাধ্যমে তাদের সম্মানও জানানো হয়। যদি করোনা পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কভিড বিধি মেনে আপ্যায়ন করা হয়। সারাবছর মিত্র বাড়ি ফাঁকা থাকলেও পুজোর সময় সমস্ত আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবে বাড়ি ভরে ওঠে যারা বাইরে থাকেন তারাও পুজোর চার দিন এখানে চলে আসেন।
আরও পড়ুনঃ ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ গানের নতুন ভিডিও প্রকাশ করল রেলমন্ত্রক
পূজা মন্ডপ এর বাইরে ছোটখাটো গ্রাম্য মেলা বসতে দেখা যায়। এই মেলার বিশেষত্ব হল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা দোকানের যেমন পসরা সাজায় তেমনি মেলায় ভিড় দেখা যায় ছয়টি মুসলিম গ্রামের কচিকাঁচা থেকে বড়দের। নিয়ম মেনে দশমীর দিনেই পাশের বাকিনালাতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। বর্তমান সদস্যা দীপ্তি মিত্র, মৃত্যুঞ্জয় মিত্র, অনিব্রত মিত্র। অনিব্রত মিত্র বলেন ” সত্যি কথা বলতে আমরা যে মুসলিম গ্রামে বাস করি তা কখনোই মনে হয় না। কারণ আমাদের পরিবারকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসেন”।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584