পর্যটক টানতে নবরূপে সেজে উঠছে কর্ণগড়

0
162

নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

রাজা কর্ণের গড়, কর্ণগড় । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনি ব্লকের কর্ণগড় নতুন রূপে সাজতে চলেছে । দীর্ঘদিন ধ্বংসস্তূপে পরিণত থাকার পর নতুন করে সাজানোর কাজ চলছে কর্ণগড়কে । রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে খুব শীঘ্রই জায়গা করে নেবে এই কর্ণগড় নামটি৷

debris | newsfront.co
গড়ের ধ্বংসস্তূপ ৷ নিজস্ব চিত্র

কর্ণগড়ের যাবতীয় আকর্ষণ স্থানীয় মহামায়া মন্দিরকে কেন্দ্র করে। মন্দিরে মহামায়া ও দণ্ডেশ্বরের বিগ্রহ রয়েছে। উৎকল শিল্পরীতিতে তৈরি মন্দিরটিতে পঞ্চমুণ্ডির আসনও রয়েছে। কর্ণগড়ের নিসর্গও মনোরম। গাছগাছালি, নদী দিয়ে চারদিক ঘেরা। মেদিনীপুর শহর থেকে জায়গাটি খুব বেশি দূরেও নয়। তাই এক সময় এই এলাকাটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, রাস্তা তৈরি হবে, হবে পার্ক। এখন অবশ্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে , রাস্তা সারাইয়ের কাজও চলছে।

trench | newsfront.co
ঐতিহাসিক পরিখা ৷ নিজস্ব চিত্র

অবশিষ্ট রয়েছে শুধু মহামায়ার মন্দির। সংরক্ষণের অভাবে বাকি সব হারিয়ে গিয়েছে। বহু খুঁজেও দু-চারটে ইটের বেশি কিছু মিলবে না। চুয়াড় বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত রানি শিরোমণির গড়ের এখন এমনই দশা। গড় অর্থাৎ দুর্গের আর অস্তিত্ব নেই। ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় শেষ অপুত্রক রাজা অজিত সিংহের। তাঁর দুই রাণী ছিলেন ভবানী ও শিরোমণি। রাণী শিরোমণি ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনদের এককাট্টা করে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। এই জন্য ইংরেজদের কোপে পড়েন রাণী ।

dm | newsfront.co
রশ্মি কুমার ,জেলা শাসক ৷ নিজস্ব চিত্র

তাঁকে বন্দীও করা হয়। নাড়াজোলের রাজা আনন্দলাল খানের মধ্যস্থতায় চরম সাজা না হলেও তাঁকে আবাসগড়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।কর্ণগড় ছাড়াও আরও দুটি গড় ছিল রাজবংশের , আবাসগড় ও জামদারগড়। মেদিনীপুর শহরের উত্তরে বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তায় পড়ে। সেখানেও কিছু নিদর্শন মেলে। কিন্তু সময়ের চোরাস্রোতে হারাতে বসেছে সেইসব ইতিহাসের সূত্র।

historic arch | newsfront.co
ঐতিহাসিক তোরণ ৷ নিজস্ব চিত্র

১৬৯৩ থেকে ১৭১১ সাল প‌র্যন্ত এই গড়ে রাজ করেছিলেন রাজা রাম সিংহ। পরে রাণী শিরোমণি এবং নাড়াজোলের রাজা মোহনলাল খাঁ এই গড়ের উন্নয়ন করেছিলেন।মেদিনীপুর শহর থেকে উত্তর দিকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে কর্ণ রাজবংশের রাজধানী ছিল, তার প্রমাণ আজও মেলে। প্রধান গড় ছিল কর্ণগড় মেদিনীপুরের প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ব্যস ধরলে বিস্তৃত ছিল । এই গড়ের নিজস্ব চরিত্রটি অদ্ভূত ৷

আরও পড়ুনঃ দেশজুড়ে পদব্রজে করোনা সচেতনতা প্রচার করে নজির গড়লেন হাওড়ার বাসিন্দা

জঙ্গলমহলের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে জলস্রোত নদীর আকার ধারণ করে ‌যেখান দিয়ে বয়ে ‌যেত সেটি গড়ের অন্দরমহল। নদীটি খুবই ছোট, নাম পারাং। গড়ের দু দিক দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়ে একসঙ্গে মিলিত হত পারাং নদী। অনেকটাই পরিখার মতো। এই গড়ের মধ্যেই ছিল, কুল দেবতাদের মন্দির অধিদেবতা দণ্ডেশ্বর এবং অধিষ্ঠাত্রী দেবী ভগবতী মহামায়া।

আরও পড়ুনঃ মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার সমর্থনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিল

তবে মহামায়ার মন্দিরটি এখনও অটুট রয়েছে যেখানে বসে কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য সাধনা করতেন। প্রচলিত রয়েছে, এখানে বসেই রামেশ্বর শিবায়ন কাব্য রচনা করেছিলেন। রামেশ্বরের কাব্যে কর্ণগড়ের উল্লেখও রয়েছে
‘যশোবন্ত সিংহ/ সর্বগুণযুত/ শ্রীযুত অজিত সিংহের তাত। মেদিনীপুরাধিপতি/ কর্ণগড়ে অবস্থিতি/ ভগবতী যাহার সাক্ষাৎ।’

তবে রাণী শিরোমণি স্মরণে মেদিনীপুর শহরেই গেস্ট হাউস আছে, এমনকি ভারতীয় রেল রাণী শিরোমনির স্মৃতির উদ্দেশ্যে আদ্রা-হাওড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনও চালু করেছে ৷গেস্ট হাউসের কথা কেউ মনে রাখতে না পারলেও এই ট্রেনটির কথা তো অনেকেই জানেন ৷পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল জানান ,গড়ের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন খাতে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।

আরও পড়ুনঃ বুধবার বিকেল চারটে নাগাদ প্রথম করোনা ভ্যাকসিন নেবেন ফিরহাদ হাকিম

মন্দিরের উন্নয়নকল্পে রাজ্য সরকার নিজে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ের উন্নয়নের কাজ হওয়ায় খুশি এলাকার মানুষ। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের বক্তব্য ইতিমধ্যেই আনুমানিক প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে ৷

আরও প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হবে আগামী দিনে। তবে আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে কর্ণগড়ের পর্যটন কেন্দ্র।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here