শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
পেটিএম, ফোন পে, গুগল পে-এর মত অ্যাপগুলিতে কেওয়াইসি করে দেওয়ার নাম করে মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে একাধিক ধরনের জালিয়াতি। খুব সহজেই ভোটার, আধার নম্বর জেনে বা শুধুমাত্র ইউপিআই পিন জেনে ব্যাঙ্ক থেকে গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ৪ ঘন্টা গ্রাহকের সম্মতির জন্য সময় থাকলেও ওয়ালেট অ্যাপসে টাকা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা আরও অন্যান্য ওয়ালেটে দ্রুত পাঠিয়ে নেওয়া যায়। তাই চলতি সপ্তাহে লালবাজারে এক বিশেষ বৈঠকে সমস্ত ওয়ালেট অ্যাপ কর্তৃপক্ষকে কেওয়াইসিতে ভোটারের সঙ্গে প্যান কার্ড বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিলেন লালবাজারের আধিকারিকরা।
লালবাজারের পরামর্শ, জালিয়াতি রুখতে কেওয়াইসি হিসেবে শুধুমাত্র ভোটার কার্ড দিলেই হবে না। সঙ্গে যুক্ত করতে হবে প্যান কার্ডও। অর্থাৎ ভোটার বা আধার কার্ডের সঙ্গে প্যান কার্ড দিলে তবেই কেওয়াইসি সম্পন্ন হবে। লালবাজার সূত্রে খবর, এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ দিদিকে বলো তে ফোন করে মিললো চিকিৎসার সাহায্য
সম্প্রতি কলকাতা শহরে পেটিএমে কেওয়াইসি করার নাম করে জালিয়াতির শিকার হয়ে কয়েক কোটি টাকা খুইয়েছেন বহু মানুষ। এই সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জমা পড়ার পর ঝাড়খণ্ডের জামতারা থেকে প্রায়শই বহু যুবককে গ্রেফতারও করে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু তারপরেও কেওয়াইসি করে দেওয়ার নাম করে এই জালিয়াতির ঘটনা রোখা যাচ্ছে না।
এই নিয়েই লালবাজারে পেটিএম, ফোন পে, গুগল পে-সহ একাধিক ই-ওয়ালেট সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে বৈঠক করে লালবাজার। সেই বৈঠকেই পেটিএম-সহ অন্যান্য ই-ওয়ালেট সংস্থাগুলিকে বলা হয়, তাদের গ্রাহকদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে।
আর সে কারণেই গুরুত্ব দিতে হবে কেওয়াইসি-র বিষয়টিতেই। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ অফিসার বলেন, ‘ই-ওয়ালেট সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে শুধু ভোটার কার্ড নয়, কেওয়াইসি সম্পূর্ণ করতে হলে প্যান কার্ডও যুক্ত করতে হবে। তাতেই গ্রাহক নিরাপত্তা শক্ত করা সম্ভব।’
লালবাজার সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত করা বাধ্যতামূলক নয়, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার পর থেকেই বাড়তে থাকে অনলাইন জালিয়াতি। জাল নথি দিয়ে ভোটার কার্ড বানিয়ে তা দিয়ে কেওয়াইসি করে ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খোলে জালিয়াতরা।
আরও পড়ুনঃ এবার বদলি ২০০২ নারোদা গাম দাঙ্গা মামলার বিচারক
তারপর ই-ওয়ালেট অ্যাপ থেকেই বেছে বেছে গ্রাহকদের কাছে কেওয়াইসি করার নাম করে এসএমএস পাঠানো হয়। সেই এসএমএসেই পাতা থাকে ফাঁদ, যাতে থাকা নম্বরে ফোন করলেই জালিয়াতের খপ্পরে পড়বে গ্রাহক। প্রথমে কথার মাধ্যমে সুকৌশলে গ্রাহকদের কাছে একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই হ্যাক হয়ে যাবে গ্রাহকের মোবাইল। তারপর মোবাইলে গ্রাহক যখনই তাদের এমপিন দিয়ে টাকা পাঠাবেন, তখনই গ্রাহকের তথ্য চলে যাবে জালিয়াতদের হাতে। কলকাতায় এরকম প্রায় ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে যাতে কয়েক কোটি টাকা খুইয়েছে মানুষ।
লালবাজারের ওই বৈঠকে যে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডাররা ছিলেন, তাদের সিম বিক্রির সময় ভালভাবে নথিপত্র যাচাই করতেও বলা হয়েছে।
তথ্য যাচাই না করে সিম ছেড়ে দিলে তা দিয়েই মানুষকে ঠকানোর রাস্তা খুলে যাচ্ছে জালিয়াতদের সামনে। তাই এক্ষেত্রে তাঁদেরও যতটা সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে বলে অভিমত লালবাজারের শীর্ষকর্তাদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584