উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
বাম যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযানে স্লোগান উঠল ‘খেলা হবে’। মিছিলের প্রথমেই হাতে ফুটবল নিয়ে মুখে ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে কলেজ স্ট্রিট থেকে নবান্নের দিকে এগোতে থাকে যুব কংগ্রেস,ছাত্র পরিষদ ও দশটি বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের এই মিছিল। কিন্তু তার আগেই ধর্মতলায় পুলিশের বাঁশ ও অ্যালোমোনিয়ামের দুটি
ব্যারিকেডে আটকে যায় বামেদের নবান্ন অভিমুখের মিছিল। তারপরই চলে মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার অবস্থা।
বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ডোরিনা ক্রসিং এলাকা। কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল ডোরিনা ক্রসিংয়ে আসতেই পুলিশ বাধা দেয়। তারই জেরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় মিছিলকারীদের। এরপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয় ও জলকামান ছোড়া হয়। লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন বেশ কিছু বাম কর্মী। কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই।
আবার, পুলিশের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয় যে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয় মিছিলের তরফ থেকে। ইঁটের ঘায়ে আহত হয়েছেন যাদবপুরের ডেপুটি কমিশনার রশিদ মুনির খান। পুলিশের দাবি, মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে মাইকিং করা হয়। তারপর ছোঁড়া হয় জলকামান। করা হয় লাঠিচার্জ।
বাম ছাত্র-যুবরা আগেই হুঙ্কার তুলেছিলেন ‘খেলা হবে’। সেই স্লোগান নিয়েই মূল কর্মসূচি শুরু করেন কলেজ স্ট্রিট থেকে। সেখানে জড়ো হয় ১০ টি বাম ছাত্র-যুব সংগঠন। এছাড়াও এই মিছিলে শামিল হয় যুব কংগ্রেস ও ছাত্রপরিষদের কর্মীরা। তাদের মুখে স্লোগান, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়। এটা ট্রেলর। নবান্ন অভিযান। পুরো পিকচার দেখবেন ব্রিগেডে।’
বাস্তবিক বিগত পাঁচ বছরে বামেদের মিছিলে এত লোক ও এত উদ্দীপনা দেখা যায়নি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে নবান্ন অভিযান শুরুর আগেই নবান্নের গেটে বেঁধে যায় দক্ষযজ্ঞ। বাস্তবিকই
নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগেই নবান্নের গেটে পৌঁছে যান জনা দশেক বামকর্মী। নবান্নে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। পুলিশ গ্রেফতার করে বাম যুব কর্মীদের।
এরপর পাঁশকুড়ার সিপিআইএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলি সহ আরও বেশ কিছু বাম সমর্থক জোর করে নবান্নে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ মোট দশ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের সঙ্গে আবার একদফা ধস্তাধস্তি শুরু হলে তাঁদের শিবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল ট্যাঙ্কার,জখম ২
আন্দোলনকারীদের আটকানোর জন্য সবরকমের ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। হাওড়াতেই মোট ৬ টা জায়গায় ব্যারিকেড করে পুলিশ। ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালানো হয়। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান। হাওড়া ব্রিজের পাশে পড়ে থাকা ইঁট-পাটকেল জেসিবি মেশিন দিয়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এত প্রস্তুতির পরেও রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। আহত হয় বেশ কিছু সংখ্যক বাম কর্মী, আহত হন পুলিশও।
কর্মসংস্থান, শিক্ষা, শিল্পের দাবিতে এবং রাজ্যে সরকার বদলের ডাক দিয়ে বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযান কর্মসূচি নিয়েছিল দশটি বামপন্থী যুব ও ছাত্র সংগঠন, সঙ্গে কংগ্রেসও। তাদের অন্যান্য দাবির সঙ্গে ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিও। কলেজ স্ট্রিট থেকে এই মিছিল শুরু হবার আগে হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে দুটি বড় মিছিল আসে। এছাড়াও ছোট – বড় গাড়ি করে কলেজ স্ট্রিটে বাম সমর্থকরা জমা হতে থাকেন। বেলা যত গড়াতে থাকে,মিছিলে মারমুখী বাম সমর্থকদের দেখে এসএন ব্যানার্জি রোডে অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। এরপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানোয় অসুস্থ হয়ে পড়ে কয়েকজন আন্দোলনকারী।
আরও পড়ুনঃ এগরাতে লরির চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু যুবকের
পাল্টা লাঠির ও ইঁটের আঘাতে আহত হয়েছেন কিছু পুলিশকর্মীও। এরপর প্রচুর র্যাফ ও পুলিশ
বিক্ষোভকারীদের উপর দৃষ্টিকটু ভাবে লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জ করে পুলিশ হতদ্যোম না হয়ে
কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ধর্মতলায় অ্যালুমিনিয়াম শিট দিয়ে তৈরি ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা।
ধর্মতলা ছাড়াও মতিশীল স্ট্রিট ও এস এন ব্যানার্জির ক্রশিং এ আর একটি বাঁশের ব্যারিকেডও ভাঙার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন ধর্মতলায় চার হাজারের বেশি র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স, মহিলা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে৷ একই সঙ্গে নবান্নের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা ছিল ৷ ধর্মতলার মোড়ে রাখা ছিল স্পেশালাইজড ফোর্সের ওয়াটার ক্যানন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584