নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ার একদা মুকুটহীন সম্রাট তিনি। আলিমুদ্দিন তাকে বহিষ্কার করার পর ভারত নির্মাণ মঞ্চ গড়েছিলেন। বিজেপিতে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন কিছু না করতে পেরে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে গত লোকসভায় প্রার্থীও হয়েছিলেন তমলুকে। গো-হারা হারতে হয়েছিল তাকে।
শেষমেশ এবার কি তৃণমূলে? বৃহস্পতিবার দুপুরে হলদিয়ায় ক্ষুদিরাম বসুর জন্মদিবস উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মণবাবু। তাত্পর্যপূর্ণ হল, ওই মঞ্চে থাকবেন প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। এতদিন পর্যন্ত তৃণমূল বলত, লক্ষ্মণ শেঠই নন্দীগ্রামে রক্ত ঝরানোর মূল হোতা। হার্মাদ বাহিনীর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনিই।
তার সঙ্গে একই মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলের মুখপাত্র! বৃহস্পতিবার কুণালবাবুর সঙ্গে যখন যোগাযোগ করা হয় তখন তিনি হলদিয়ার পথে রওনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মণ শেঠ তৃণমূলে যোগ দেবেন বলে আমি জানি না। এটা একটা অরাজনৈতিক কর্মসূচি। সেখানে উদ্যোক্তারা কাকে কাকে ডাকবেন সেটা তো আর আমার হাতে নেই। ওরা আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আমি যাচ্ছি।’ ইদানীং শুভেন্দু অধিকারীর সব অরাজনৈতিক সভাকে অনেকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেখছেন, এই সভাকেও অনেকে সেভাবেই দেখছেন।
কুণালবাবু এদিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমায় লক্ষ্মণ শেঠ ফোন করেছিলেন। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে তার কোনও ভূমিকাই ছিল না। তত্কালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার শিল্পায়ন দেখানোর জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে রাইটার্সের আস্ফালণের ফলে সেই সময়ে ওই ঘটনা ঘটে। তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে সবটা করা হয়েছিল। তিনি দলের নির্দেশ কেবল পালন করেছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠান করছেন মধুসূদন মণ্ডল।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় পতাকা হাতে তমলুকে পদযাত্রা শুভেন্দুর
কোনও রাজনৈতিক দল নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আগে মধুসূদনরাই ছিলেন সেই আন্দোলনের একেবারে গোড়ার দিকের সেনানী। তারা যদি লক্ষ্মণ শেঠকে ডাকেন তার মানে তো কোনও একটা ব্যাপার আছেই!’ পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ব্যাপারটা সোজা করে দেখতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এমন সময় কুণাল-লক্ষ্মণ এক মঞ্চে বসতে চলেছেন তা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। কেন? তাদের মতে, মেডিকেল কলেজ দুর্নীতি কাণ্ডে সিপিএম বহিষ্কার করার পর লক্ষ্মণ শেঠ যখন ফ্যা ফ্যা করে ঘুরছেন তখন তৃণমূলে মাথা গলানোর চেষ্টা করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে মুর্শিদাবাদে প্রকাশ্য সমাবেশ মানবিক যোদ্ধার
কিন্তু শোনা যায় শুভেন্দু অধিকারীর জন্যই তা সম্ভব হয়নি। এমনকি ২০১৯-এর লোকসভার কয়েক মাস আগে যখন রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র জল্পনা তৈরি হয়েছিল একদা নিমতৌড়ির সুকুমার সেনগুপ্ত ভবনের বিগ বস তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে, তখন তা সরকারি সভা থেকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দুকে মঞ্চে বসিয়ে বাজকুলের সভা থেকে বলেছিলেন, ‘কোনও হার্মাদকে আমরা জায়গা দেব না!’ আর এখন যখন শুভেন্দু-তৃণমূল সম্পর্ক সুতোয় ঝুলছে তখন যেন লক্ষ্মণ নিয়ে অন্য সুর শোনা যাচ্ছে শাসকদলের মুখপাত্রের গলায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584