নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বৌমার উপর ধনদেবীর ভর। আর তা দেখেই নিজের বাড়িতে মা লক্ষীর আরাধনা শুরু করেন গড়বেতার গদাধর সাহা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার খড়কুশমা একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এই গ্রামেই বাস করতেন গদাধর সাহা। জমি জায়গার অভাব ছিল না।
ফলে জমিতে চাষাবাদ করেই সংসার চালাতেন৷ স্ত্রী আর দুই পুত্র কে নিয়ে সংসার। দুই পুত্র নারায়ণ ও ফকির। দুই পুত্রের বিয়েও দিয়ে দেন তিনি। ফকির সাহার বিয়ে হয় বিজন বালা সাহার সঙ্গে। বিজন বালা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী ও খুব করিৎকর্মা। একা হাতেই সংসারের পুরো দায়িত্ব সামলাতেন। এক শরতে আগমনীর সুর বেজে উঠেছে। মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের আগায় বিন্দু বিন্দু শিশিরের প্রলেপ। ঠিক এমনই এক সন্ধ্যায় বাড়িতে সবাই যখন বসে আগামী দিনের গল্পে মশগুল সেই সময় হঠাৎ করেই বিজন বালা দেবীর উপর মা লক্ষীর ভর হয়। প্রথমে বাড়ির সকলেই হতচকিত হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনঃ প্রাচীন ঘোষ বাড়ির পুজো কে ঘিরে কার্যত নিরাশ কোলাঘাটের বাড়বরিশার গ্রামবাসীরা
পরে মা লক্ষী স্বয়ং ভরে বার্তা দেন তার আরাধনা করার। সেই দিন রাত্রেই গদাধর সাহা যখন ঘুমাচ্ছিলেন সেই সময় দেবী তাকে ফের স্বপ্নে দেখা দিয়ে নিজের বাড়িতে তার আরাধনার কথা জানান৷ স্বপ্নের ঘোরেই তিনি দেখেন যে চারিদিকে যেন আলোর রোশনাইয়ে ভরে উঠেছে। বাজছে শাঁখ, কাঁসর ঢোল সানাইয়ের বাদ্য৷ সকালে উঠেই তিনি পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছে তার রাত্রের স্বপ্নের কথা জানালে সেদিনই সকলেই ঠিক করেন দেবীর আরাধনার কথা৷ কিন্তু হাতে সময় কম থাকায় তাড়াতাড়ি প্রতিমা বানিয়ে বাড়ির উঠোনে পুজো শুরু হয়। পরের বছর আলাদাভাবে বাঁশ খড় দিয়ে মন্ডপ বানিয়ে তাতে পুজো হয়। তার পর থেকে ওই মন্ডপেই পুজো হয়ে আসছে। বর্তমানে মন্দির সংস্কার করে মার্বেল পাথর বসানো হয়েছে।
গদাধর সাহার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা পুজোর দায়িত্ব নেয়। প্রায় একশ বছর এই ভাবেই পুজো হয়ে আসছিল। কিন্তু ফকির সাহা ও নারায়ণ সাহার মৃত্যু হলে তাদের ছেলেরা প্রতি বছর এক একজন করে পুজোর দায়ভার নিয়ে পুজো করতে শুরু করে। কিন্তু এবছর পুজো ১২৬ বছরে পড়লো। পুজো পরিচালনা করার অন্যতম কর্ণধার ভোলানাথ সাহা জানান আমাদের এই পুজো কয়েক বছর ধরে পরিবার হিসেবে ভাগ করে পুজো করা হলেও আদতে সাহাদের পারিবারিক পুজো৷ এই পুজোতে পরিবারের সকল সদস্য যেমন একসঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে তেমনই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু- বান্ধব সকলেই হাজির হয় পুজোর দিনে। তবে আমাদের পুজোর বিশেষত্ব হলো আগে পরিবারের পারিবারিক সন্ন্যাসী বাবার পুজো হওয়ার পর লক্ষী পুজো শুরু হয়।
আরও পড়ুনঃ দুঃস্থ মানুষদের বস্ত্র বিতরণ ফালাকাটার গুয়াবরনগর গ্রামে
আর পুজোতে ঢোল সানাইয়ের নহবতের সুরে ঘট ডুবানোর কাজ শুরু হয়৷ সেই ধারা বজায় রেখে সাহা পরিবারের সদস্যরা এখনও ঢোল সানাই নহবতের সুরে ঘট ডুবাতে যান। তবে বর্তমানের এই করোনা অতিমারির কারণে এবার সেই পারিবারিক ঐতিহ্যের কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷ নাম মাত্র কয়েকজন সানাই বাদক নিয়েই এবার ঘট ডুবানোর কাজ হবে। পরিবারের সদস্য শান্তনু সাহা বলেন , আমাদের এই সাহা পরিবারের পুজো প্রতিবছর বারি করে পালিত হয়।
এবার পুজোর বারি পড়েছে আমাদের ওপর ৷ চারদিন ধরে এই পুজোতে যেখানে পরিবারের সকল আত্মীয়- স্বজন আসতেন এবার তা হচ্ছে না৷ আর যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক অবশ্যই থাকবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুজো- অর্চনা হবে৷ প্রতিদিন মন্ডপ স্যানিটাইজ করা হবে।তবে খড়কুশমার সাহাদের পরিবারের এই লক্ষী পুজো সাহা পরিবারের হলেও বর্তমানে তা গ্রামের সকলের পুজো হয়ে উঠছে। সাহাদের এই পুজোতে গ্রামের মানুষের পারিবারিক অংশগ্রহণ এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে ৷
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584