সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ
পি ডব্লু ডি-সহ ইরিগেশনকে জায়গার উপরে দোকান নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো দোকান সংস্করণ করতে গেলে দিতে হবে টাকা। এর সূত্র ধরেই, হাজার হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে গ্রামসভার সদস্য শামসুদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। না দিলে মিলছে হুমকি, মারধর, গালিগালাজ।
ঘটনাটি কুলপি ব্লকের শ্যামবসুরচক বাজার এলাকার ঘটনা। তৃণমূলের পার্টি অফিসের নাম করে হাজার হাজার টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে শামসুদ্দিন মোল্লার নামে। জানা গেছে, তিনি গ্রামসভার সদস্য ওরফে তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা।
আরও পড়ুনঃ এনবিএসটিসির পেনশোনার্সদের আন্দোলন কোচবিহারে
তাঁর নামে অভিযোগ, তিনি তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় নির্মাণের নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলছেন। ভয়ে সংশয়ে অনেকেই বন্ধ করছে দোকান। প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে দাবি অভিযোগকারীদের।
এর নেপথ্যে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সচিব সৈদুল পাইক ওরফে ময়না। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও মেলেনি কোনও সমাধান। জানানো হয়েছে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতেও।
উল্টে প্রশাসনকে জানিয়ে আরও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি অনেকের। ফলে পি ডব্ল ডি, ইরিগেশন জায়গার উপরে বেআইনি ভাবে গড়ে ওঠা ঘর, দোকানপাট ঘিরে রমরমিয়ে তোলা চাইতে শুরু করেছে। এগুলি নিয়ে যথেষ্ট জল্পনাও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। হুগলী নদী-সংযোগ খাল বন্ধ করায় জল না পেয়ে সমস্যায় পড়ছে চাষিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার সোনাপট্টি বাজার বলতে শ্যমবসুরচক বাজার। রয়েছে সপ্তাহে দু’দিন বাজার-হাট। কুলপি ব্লকের চারটি গ্রামপঞ্চায়েতের মানুষ আসেন এই শ্যামবসুরচক বাজারে। রাজারামপুর, কামারচক, কুল্পি, ঈশ্বরীপুর, গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষ আসেন সপ্তাহে দু’দিন হাটে।
আরও পড়ুনঃ আলিপুরদুয়ারে পুরসভার ভোট প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কংগ্রেসের
এখান থেকেই ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টাকা উপার্জন করেন। এমনকী বাইরে থেকে লোকজন উপার্জনের আশায় এই বাজারে আসেন। এটাকে কাজে লাগাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস দলের একশ্রেনী সর্মথক।
অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে ঠিকই কিন্তু তারাও রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়াতেই ।
কিন্তু ব্যবসায়ী সমিতিকে না জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রামসভার সদস্য শামসুদ্দিন মোল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জানা গেছে, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য কুল্পি বিধানসভার বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদারের অনুগামী।
অন্যদিকে রয়েছে যুব গোষ্ঠী। যুব ও মাদার গোষ্ঠীর মধ্যে বরাদ নিয়ে দ্বন্দ্ব বেঁধেই রয়েছে প্রতিনিয়ত। যদিও যুব গোষ্ঠীকে এড়িয়ে মাদার গোষ্ঠী তোলা তোলার কাজে হাত লাগিয়েছে বলে দাবি অভিযোগকারীদের। এই বাজারে রয়েছে কয়েক হাজার দোকান।
১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গড়ে ওঠা নির্মিয়মান দোকান এবং নতুন দোকান থেকেই টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠছে এই সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকী খাল বুজিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে, দাবি করেছেন অভিযোগকারিরা।
সদস্য শামসুদ্দিন মোল্লা এবং শহিদুল পাইক ওরফে ময়না বিধায়কের অনুগামী। দীর্ঘ দু’বছর ধরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে এই সদস্য। জানা গেছে, নতুন দোকান করতে গেলে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা।
পি ডব্ল ডি অথবা ইরিগেশন জায়গা নিতে গেলে দিতে হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। খালের উপরে ঘর করতে গেলে সেখানেও রয়েছে মোটা টাকার রফা, যা হাত সাফাই হয়ে চলে যাচ্ছে দলের এক শ্রেণির কাছে।
প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ফুলে ফেঁপে শুরু হয়েছে ব্যবসা। বিষয়টি নিয়ে কুলপির বিধানসভার বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার, কুলপি ব্লকের বিডিও, ডায়মন্ড হারবার এসডিওকে জানিয়ে আজও কোনও সমাধান পাননি ব্যবসায়ীরা।
বেআইনি নির্মাণ গড়ে উঠছে দিনের পর দিন। বন্ধ হচ্ছে নিকাশী। নোংরা আর্বজনায় জোয়ার ভাটা হারাচ্ছে শ্যামবসুরচক খাল। নেপথ্যে রয়েছে কুলপি থানা— এমনটাই দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
আগামী দিনে সমস্ত ব্যবসায়ীদের এক এক করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম মন্ডল। তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করলে লিখিত অভিযোগ পড়েছে বলে দাবি কুলপি ব্লকের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তারকনাথ প্রামাণিকের।
দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে দাবি করেছেন তিনি। বিষয়টি প্রমাণ হলে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শ্যামবসুরচক বাজারে সাধারণ মানুষদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগে আন্দোলনে নামবেন বিজেপি নেতা সুফল ঘাঁটু।
এদিকে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে মূল অভিযুক্ত শামসুদ্দিন মোল্লা। খাল সংস্করণ হওয়ায় আশ্বস্ত করেছেন তিনি। তোলা বাজির ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন নয় । কিন্তু তোলা না দিলে হুমকি অন্য মোড় নিয়েছে কুল্পি বিধানসভায় । ফলে ২০২১ বিধানসভায় কিছুটা হলেও শাসক শিবির ব্যাকফুটে পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584