নবনীতা দত্তগুপ্ত, বিনোদন ডেস্কঃ
সময় বদলেছে। বদলে গেছে মানুষের জীবন যাপনের ধরন। বদলেছে মানসিকতা। যৌথ পরিবার ভেঙে আমি-তুমির সংসার আজ বিরাজমান। এহেন বদলে যাওয়া সময়ে বারবার একান্নবর্তী পরিবারের গল্প নিয়ে হাজির হন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর নির্মিত একান্নবর্তী পরিবারগুলি মানুষকে আরও একবার যৌথ হয়ে থাকার ইচ্ছা জোগায়। যৌথ পরিবারের আনন্দ, সুবিধা, অসুবিধা সবই উঠে আসে তাঁর গল্পে। একইসঙ্গে একান্নবর্তী পরিবারে থেকে অপছন্দের পাত্র-পাত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জালবিস্তারের ঘটনাও উঠে আসে লেখিকার কলমে।
সবমিলিয়ে যৌথ পরিবারে ঠিক যা যা ঘটে তার সবই তিনি তুলে ধরেন প্রতি পর্বে। আর এই মুহূর্তে তাঁর গড়ে তোলা যে পরিবারটি সবথেকে বেশি মানুষের হৃদয়ে দোলা দেয় তা হল ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের মুখার্জি পরিবার।মুখার্জি বাড়ির দরজায় কান্নাকাটির জন্য ঝুলছে নো এন্টি বোর্ড। হাসি, মজা, মজাদার লেগ পুলিং কী না আছে সেখানে? এ বাড়ির জামাই বাবাজি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না।
চাকরিতেও জয়েন করতে ইচ্ছে করে না তার। অন্যান্যরা অফিসে কামাই করতে ওস্তাদ। কারণ বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারে না তারা।আবার বাড়ির কর্তা মানে বাবিন, চিনি, সাঁঝির জ্যাঠাই নিজের বাড়ির মেয়েকে বলে -“আর এখন বাপের বাড়িতে এসো না। শ্বশুর বাড়িতেই থাকো।” এমনকী মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়িকে বলে- “বাড়ির বউমাকে একটু শাসন করুন। এত ঘন ঘন বাপের বাড়ি আসে কেন? আপনি একজন কাছা খোলা গোছের মানুষ।”

এ বাড়িতে কেউ একবার এলে আর যেতে চায় না। এ বাড়িতে কারো নিজের জিনিস বলে কিছু নেই, সবই সবার। কারো জন্য আলাদা করে কোনও ঘর নেই এখানে। একে অপরের জামা পরতে অভ্যস্ত সকলে। এখানে নিজের সন্তানের থেকেও অন্যের সন্তানকে অধিক ভালোবাসে সবাই।
এ বাড়ির পাণ্ডা হল পটকা। সে সম্পর্কে বাবিন, চিনি, ঋজু, সাঁঝি, রূপাঞ্জন, গুনগুনদের কাকাবাবু। কিন্তু সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে এই কাকাবাবু থুড়ি পটকা গড়ে তুলেছে একটি টিম। তার বুদ্ধিতেই চলে নানান ক্রিয়াকলাপ।প্রত্যেকদিন নতুন নতুন প্ল্যান পটকা ও তার দলের। বাবিন আর গুনগুনের বিয়ে নিয়ে যা যা করে দেখালো পটকা ও তার বাহিনী, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আর বলা বাহুল্য, এই ধারাবাহিকের মূল অক্সিজেন এই পটকা নামের মানুষটি। তার খুনসুটি যেমন দর্শক লুটেপুটে নেয়, তেমনি বাবিন যখন তাকে কষ্ট দেয় দর্শক তখন চোখের জল ফেলে। দর্শকের রাগের পারদ চড়ে বাবিনের উপর।এখানেই সার্থকতা তাদের চরিত্রের।…
বাবিনের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত পটকা চাকরিতে বদলি নিয়ে উত্তরবঙ্গে পাড়ি জমাবে বলে ভাবে। তাতে বাধ সাধে তার পরিবারের সবাই। চাকরিটাও ছেড়ে দিতে বলে তাকে। পটকা সিদ্ধান্ত বদলায়। এখন সে বদলি নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার বদলে বাহিনী নিয়ে দার্জিলিং যাওয়ার প্ল্যান করছে। ওদিকে বাবিন বাড়ির সকলের কাছে বকাঝকা খেয়ে বেরিয়ে গেছে বাড়ি থেকে। ফিরবে সিঙ্গাড়া হাতে নিয়ে।
কারণ তার রাগ পড়েছে। ওদিকে চিনির শ্বশুর-শাশুড়িও বাক্সপ্যাটরা নিয়ে চলে আসে ছেলের শ্বশুরবাড়িতে দিনকয়েক থাকবে বলে। মিষ্টি তার বাপেরবাড়ি যায় না। পটকার বউ বাড়ি ছেড়ে বরের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে গিয়ে থাকতেও রাজি হয় না। গুনগুনের শ্বশুর পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে বেসুরো গলায় গান গায়।
এখানে বাড়ির বউ গুনগুনকে মা লক্ষ্মী বলে ডাকা হয়৷ সে যখন রান্নাঘরের সব উপকরণ দিয়ে ‘চটকানো পিণ্ডি’ বানায় তখন শাশুড়ি মাতা তাকে বাধা দেয় না। বরং বলে- “করুক না। শিখেছে বোধহয় পিসিমার কাছে। ভালই হবে। না হলে বিকল্প ব্যবস্থা হবে।” আবার ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়েই জীবন কাটে পুটু পিসির। জ্যাঠাই-বড়মা বাড়ির কনিষ্ঠদের আজও ‘বাচ্চা’ বলে ভাবে। এমনকী এক প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বাবা পটকাও তাদের কাছে বাচ্চার সমান। তার নাকি বয়সটাই বেড়েছে। মন সাবালক হয়নি। বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে গুনগুন শ্বশুরবাড়ির সকলকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। নিজের স্বামীর বিপক্ষে যেতেও সে পিছপা হয় না।
আরও পড়ুনঃ একুশের নতুন গান ‘একুশে পা’
পটকাকে অপমান করা নিয়ে সে তার ক্রেজি থুড়ি বরের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। আবার বরকে ফিরিয়ে আনতে সে প্রাণের ঝুঁকি নেয়। পটকাকে চাকরির ক্ষেত্রে অসম্মানের হাত থেকে গুনগুনই বাঁচায় বাবার আনুকূল্যে। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জন্য বাবার পাঠানো পাঠানো তত্ত্ব তার পছন্দ হয় না।
সে আবার টাকা খরচ করে সকলের জন্য জিনিস কেনে। আর তারপর যা হয় তা বলা বাহুল্য। টি আর পি’র কাঁটা চড়ে তরতরিয়ে। ১১.৫ রেটিং পেয়ে বাংলার টপার হয়েছে এই ধারাবাহিক। এমনই এক পরিবার হল মুখার্জি পরিবার। এমন একখানি পরিবার কেউ আগে দেখেছে কখনও? বোধহয় না।
ওদিকে পুটু পিসির বিয়ে সুকল্যাণের সঙ্গে। এই বিয়ে নিয়েও শুরু হতে চলেছে তোরজোর। ঘটবে আরও কত না কাণ্ড। তা দেখার অপেক্ষায় দর্শককূল। ভাবছেন হটাৎ এত কথা কেন? উত্তরটা দিই। এই সময়ে দাঁড়িয়ে মানুষ একটু হাসতে চায়, যখন হেসে খেলে দিন কাটানোর সময়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অতিমারির দাপট। চিন্তা আর হতাশা প্রতি সেকেন্ডের সঙ্গী আজ। তখন দিনের শেষে একটু অন্যমনস্ক থাকার রসদ হল টেলিভিশন। স্মার্ট ফোন হাতে হাতে ঘুরলেও সন্ধের জলসা জমে সেই টিভির পর্দাতেই।
আরও পড়ুনঃ হিন্দি ওয়েব সিরিজে বাংলার অভিনন্দন
সেখানে মানুষ ভাল কিছু দেখতে চায়। আর কাছে পেতে চায় এমন পটকা, জ্যাঠাই, ভজন, মিষ্টি, চিনি, রূপাঞ্জন গুনগুন সহ বাকিদের। যারা তাদের মনের আরাম জোগায় প্রতিদিন। যারা বলে দেয়- “ভাল থাকার চেষ্টা নয়, ভাল থাকতেই হবে আমাদের মতো করে।”এই লেখাকে পক্ষপাতদোষে দুষ্ট ভাবার কারণ নেই। সামাজিক মাধ্যমে এই ধারাবাহিক ঘিরে দর্শকের প্রতিক্রিয়া এই লেখার অনুপ্রেরণা। স্যালুট লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবনা, লেখনী আর মানুষের মনের কোণে জমাট বাঁধা চাহিদাকে বারবার প্রতিবার গুরুত্ব দেওয়ার জন্য।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584