প্রীতম সরকার
সেসময় আমি আনন্দ বাজার পত্রিকার উত্তর দিনাজপুর জেলার সংবাদদাতার কাজে যুক্ত ছিলাম। ১৯৯৫ সালের ঘটনা। বিশেষ ব্যক্তিগত কারনে সেসময় তামিলনাডুর উটিতে গিয়েছিলাম। দুদিনের উটি সফরের দ্বিতীয় দিনে আমার গাড়ির ড্রাইভার আমাকে এক ফিল্ম শুটিং স্পটে নিয়ে গিয়েছিল। একটা অত্যাধুনিক বাংলো ধাঁচের বাড়ি। সামনেই বিশাল সুসজ্জিত ঘাষের লন। সেখানে বেশ ভিড়।
বড় বড় লাইট, ট্রলি, ক্যামেরা, মিরর এফেক্টার দেখেই আঁচ করতে পেরেছিলাম, কোন সিনেমার শুটিং হচ্ছে। ভেবেছিলাম হয়তো কোন তামিল সিনেমার শুটিং। তখন বলিউডে উটি এক বিখ্যাত শুটিং স্পট। প্রচুর বলিউড সিনেমার শুটিং হয়েছে উটির লোকেশনে। এক জায়গা তো রীতিমতো ‘ফ্লিমি স্থান’ নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে টুরিষ্টদের কাছে। আর বড় বড় ইউক্যালিপ্টাস গাছের বাগান। প্রচুর বলিউড ফ্লিমের শুটিং হচ্ছে সেখানে।
যাইহোক, উটির ওই বাংলো দেখতে ঢুকে যখন জানলাম হিন্দি ছবির শুটিং চলছে, তখন আগ্রহ একটু বেড়েছিল। হিন্দি ছবি শুটিং, কিন্তু লোকেশনে তেমন দর্শকের ভিড় নেই ! নেই সেই ধরনের কড়াকড়ি পাহারার ব্যবস্থাও। গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, তামিলনাডুতে হিন্দি ফ্লিমের শুটিং দেখতে তেমন নাকি দর্শক ভিড় করেন না। দু-একজন স্পট বয়কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, শুটিং করতে এসেছেন ঋষি কপূর। একটা গানের দৃশ্যের শুটিং হচ্ছে। সঙ্গে তখনকার দিনের বলিউড নায়িকা মমতা কুলকার্নি।
শুরু হলো শুটিং। কিন্তু জীবনে দ্বিতীয়বার সামনে থেকে শুটিং দেখছি। তাও বলিউডের। এর আগে অজয় করের ‘বিষবৃক্ষ’ বাংলা ছবির শুটিং দেখার অভিজ্ঞতা ছিল। সেই ছবি হয়েছিল রায়গঞ্জের এক জমিদার বাড়িতে।ঋষি কপূরের শুটিং করা ছবির নাম এক স্পট বয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেম। কিন্তু সেই ছবি বাস্তবে পরে আর রিলিজ করেনি। কিন্তু সেদিনের ঋষি কপূরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। শুটিং এর ‘কাট’ হতেই, যখন ঋষি কপূর বড় ছাতার নীচের এসে চেয়ারের বসলেন, ভয়ে ভয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে গেলাম। কিন্তু উনি এমন বন্ধুসুলভ ভাবে উওর দিলেন, কথা বললেন- যে তাঁর ব্যবহারে আমি অভিভুত। তখন ঋষি কপূরের বাজার তুঙ্গে চলছে।
সেই সময়ও তাঁর মতো একজন বলিউডের নায়কের এমন বন্ধুসুলভ আচরন দেখে অবাকই হয়েছিলাম। তিনি আমার পেশা জেনে আগ্রহ নিয়ে ‘আমি ওই ছবির খবর করবো কি না’ সেটাও জানতে চেয়েছিলেন। অল্প সময়ের কথাতে তিনি এক স্পট বয়কে ডেকে নিজের সঙ্গে আমাকেও এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস খাইয়েছিলেন। অনুরোধ করাতে পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছিলেন। আবার শুটিং এ ডাক পড়ায় উঠে চলে যাওয়ার সময় করমর্দন পর্যন্ত করেছিলেন।
পরে পেশার তাগিদে যখন যখন সুযোগ পেয়েছি, অনেক টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। কিন্তু উটিতে ঋষি কপূরের ব্যবহার আজও ভুলিনি। আজ সকালে যখন তাঁর প্রয়ানের খবরটা জানতে পারলাম, মন ভার হয়ে গিয়েছে। বারবার মনে পড়ছে সেদিনের কথা।
আমার মতো নগন্য এক কলমচিকে মনে রাখার কথা নয় ঋষি কপূরের। কিন্তু আমার তো মনে রয়েছে তাঁর কথা। তাঁর নিরহঙ্কার ব্যবহারের কথা। সত্যি, ‘মানুষের ব্যবহারই তাঁকে স্মরনে রাখে’ এই প্রবাদ বাক্য ঋষি কপূরের ক্ষেত্রে যথার্থ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584