নবনীতা দত্তগুপ্ত, কলকাতাঃ
না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন এককালের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল। দাদার কীর্তি থেকে শুরু করে, ভালোবাসা ভালোবাসা, গুরুদক্ষিণা, বিধির বিধান, মেঝবউ, সাহেব, অনুরাগের ছোঁয়া, পারাবত প্রিয়া ছিল তাঁর ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি।
রয়েছে আরও নাম।মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে হিন্দি ছবি ‘অবোধ’-এও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন এই অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের অনস্ক্রিন কেমেস্ট্রি ছিল জমজমাট।
আরও পড়ুনঃ ব্রেকিং: প্রয়াত তাপস পাল
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। সূত্রের খবর অনুযায়ী আজ ভোর ৩ঃ৩৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেতা। মুম্বইতে দেখা করতে গিয়েছিলেন মেয়ে সোহিনীর সঙ্গে৷
১ ফেব্রুয়ারি সোহিনী মুম্বই থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে উড়ে গেলেই অসুস্থতা বাড়ে অভিনেতার। ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তাঁকে। এরপর অবস্থার উন্নতি ঘটলে আই সি ইউ-তে দেওয়া হয়। শেষরক্ষা হল না।
আজ ভোর রাতে সকলকে ফাঁকি দিয়ে চিরবিদায় নিলেন তাপস পাল। শোকস্তব্ধ টলিউড। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন টলিউডে তাঁর সতীর্থ সহ অন্যান্যরাও।
চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী নিউজফ্রন্টকে জানিয়েছেন, “তাপস ছিল উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। আমি, বুম্বা, তাপস- আমরা ট্রায়ো ছিলাম একটা সময়। একজন আজ দলছুট হল। তিনজনেই তখন চুটিয়ে কাজ করছি। বন্ধুত্বও ছিল জমজমাট। তখন ভিক্টর, অভিষেক, মিঠুনও কাজ করত।
কিন্তু আমি, বুম্বা আর তাপস ছিলাম ট্রায়ো, যাকে বলে ত্রয়ী। একটা উজ্জ্বল তারা খসে পড়ল আজ। খুব খারাপ লাগছে। আমার থেকে বয়সেও ছোট ছিল। অভিনেতা হিসেবে সফল তো ছিলই রাজনৈতিক দিক থেকেও সাফল্য পেয়েছিল ছেলেটা।”
পল্লবী চট্টোপাধ্যায় নিউজফ্রন্টকে জানান, “আমি এখন তিরুপতি বাবার মন্দিরে। পুজো দিয়ে যতটা ভাল লাগল, ততটাই খারাপ আছি তাপস দা’র চলে যাওয়ার খবরটা পেয়ে। কোনওদিন আমাকে পল্লবী বলে ডাকেননি তাপস দা। আমি ছিলাম ওঁর কাছে মাকু।
দাদার কম্পিটিটর ছিলেন, আবার ভাল বন্ধুও ছিলেন৷ দীপক দা (চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী), আমার দাদা (প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি) আর তাপস দা ত্রয়ী ছিলেন। অসম্ভব ভাল বন্ধু ছিল ওঁরা। আমার মায়ের কাছে তাপস দা ছিলেন বড় ছেলে। আমার স্ট্রাগলিং পিরিয়ডে ওঁকে পাশে পেয়েছি। অনেক কাজও পেয়েছি তাপস দা’র মারফত। খুব ভালোবাসতেন আমায়।
অভিনেতা হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে অনেক উঁচু মাপের মানুষ ছিলেন তাপস দা। ওঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। খুব সাহায্য করতেন সকলকে। খুব সুইট মানুষ ছিলেন। হারিয়ে ফেললাম মানুষটাকে।
অরিন্দম গাঙ্গুলি নিউজফ্রন্টকে জানিয়েছেন, ” ইন্ডাস্ট্রির অনেক ক্ষতি হল। ওঁর অনেক অবদান আছে বাংলা ছবির জগতে। এরপর রাজনৈতিক পথে হাঁটতে শুরু করলে বিঘ্নিত হয় ওঁর অভিনয় জীবন। উত্তম পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন তাপস পাল।”
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অতি সংক্ষেপে নিউজফ্রন্টকে জানিয়েছেন, “খবরটা পাওয়ার পর থেকে মনটা খুব খারাপ। আর কী বলি?”
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় নিউজফ্রন্টকে জানিয়েছেন, “১৯৯৯ সালের কথা বলছি। আমি তখন স্ট্রাগল করছি অভিনয় করব বলে। বিভিন্ন জায়গায় নিজের ছবি দিচ্ছি। সেদিন আমি এন টি ওয়ানে গেছি ছবি দিতে। ওখানে তখন ডাবিং হত। তাপস দা ডাবিং সেরে বেরিয়েছেন।
এক গুচ্ছ প্রোডিউসার তাঁকে ছেঁকে ধরেছেন ডেট পাওয়ার জন্য। স্টারডম কাকে বলে সেদিন প্রথম দেখেছিলাম আর বুঝেছিলাম তাপস দা’কে দেখেই। ‘জন্মভূমি’তে কাজ করার সময় একদিন আমার মেক আপ রুমে কিছুক্ষণ ছিলেন তিনি। গল্প করেছিলাম অনেক।
জানিয়েছিলাম ওঁর প্রতি নিজের ভালোলাগার কথা।উনিও বলেছিলেন, তোমার অভিনয় দেখেছি। ভাল লাগে। চালিয়ে যাও। খুব ভাল সময় কাটিয়েছিলাম ওই দিন। এরপর স্টেজ শো-তে গিয়েও দেখা হয়েছে বারকয়েক।
কিন্তু স্ক্রিন শেয়ার করতে পারিনি কখনও। আক্ষেপ থেকে গেল এটাই। আমারও বড়পর্দায় কাজ শুরু তরুণ মজুমদারের হাত ধরে, তাপসদা’রও তাই৷ ফলে মানুষটিকে গুরুভাই মনে করি আমি। যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন তাপস দা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584