পিয়ালী দাস,বীরভূমঃ
শালিকাকে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল জামাই বাবু এবং তার এক বন্ধুর।বুধবার বীরভূমের সিউড়ির জেলা আদালতের বিচারক এই রায়ের কথা ঘোষণা করেন।এদিকে আদালতের রায় কে স্বাগত জানিয়েছেন নিহত তরুনীর দিদি ও মা।
বীরভূমের সিউড়ি আদালতের বিচারক মুকুল কুমার কুন্ডু এদিন শ্যালিকাকে খুনের অপরাধে জামাইবাবু নজরুল ইসলাম এবং তার বন্ধু সন্দ্বীপন মাহারা কে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে ২০১৫ সালের কুড়ি আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিট, সিউড়ি শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নজরুল ইসলাম তার বন্ধু সন্দীপন মাহাড়ার সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে ছিলেন।লক্ষ্য ছিল তার স্ত্রী শাবানাকে গুলি করে মেরে ফেলা। সেই সময়ই শাবানা তার বোন টুনি খাতুন কে স্কুটিতে বসিয়ে কলেজপাড়া বাড়িতে ফিরছিল। তখনই নজরুল শাবানা কে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে লাগে স্কুটির পিছনে বসে থাকা টুনির মাথায়। গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে টুনি তার সঙ্গে স্কুটি নিয়ে শাবানা পরে যায়। তারপরেই চম্পট দেয় নজরুল ও তার সঙ্গী।
গুরুতর জখম অবস্থায় টুনি কে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখান থেকে ফের সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় টুনিকে।পরদিন অর্থাৎ ২১ আগস্ট টুনি মারা যায়।ওই দিনই সিউড়ি থানায় স্বামী নজরুল ও তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে শাবানা খাতুন। ঘটনার সাত দিন পর পুলিশ নজরুলকে গ্রেপ্তার করে ও পরে তার সঙ্গীকেও গ্রেপ্তার করে।এদিন সিউড়ি আদালতের বিচারক নজরুল ও তার সঙ্গী সন্দীপন কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর জেল, ভারতীয় দন্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন এছাড়াও নজরুলকে ২৫ এবং ২৭ অস্ত্র আইনে তিন বছর করে জেল এবং ১ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাস জেল এর সাজা ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত শাবানারা হলেন তিন বোন। শাবানা সব থেকে বড় এবং টুনি সব থেকে ছোট। ২০০৬ সালে শাবানার বিয়ে হয় রামপুরহাটের রেল পাড়ের বাসিন্দা নজরুলের সঙ্গে।বিয়ের বছর তিনেক পর শাবানা রামপুরহাট এর শ্বশুর বাড়ি থেকে পারিবারিক অশান্তির জেরে নজরুলকে নিয়ে সিউড়িতে চলে আসে।নজরুল তার শশুর মশায়ের প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানে থেকে কাজ করতে লাগে।এর মধ্যে ২০১৪ সালে শাবানার এক নিকট আত্মীয় নাবালিকাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে নজরুলের বিরুদ্ধে।সেই সময় মাসকয়েক নজরুল জেল খেটে ছিল। বিষয়টি পরিবারের মধ্যে হওয়ায় পরে মিটমাট হয়ে যায়। যদিও এই ঘটনার পর স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে শাবানার। শুরু হয়ে যায় দুজনের মধ্যে গন্ডগোল। নজরুল সিউড়ি ছেড়ে চলে যায় রামপুরহাটে খুনের ঘটনার তিন মাস আগে। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের কারণে নজরুল তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রস্থানপুরের বাসিন্দা সন্দীপন কে সঙ্গে নিয়ে যাই শাবানাকে খুন করার চক্রান্ত করে সে।২০ আগস্ট সন্ধ্যেবেলায় নজরুল বন্দুক নিয়ে প্রাণঘাতী হামলা করে কিন্তু বরাতজোরে সেদিন শাবানা বেঁচে গেলেও লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে বোন টুনির মাথায়।
সিউড়ি আদালতের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ শমিদুল আলম বলেন, শ্যালিকাকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে জামাইবাবু ওর তার এক সঙ্গীকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।এদিকে সাবানা খাতুন ও তার মা নূরজাহান বিবি বলেন, আদালতের রায় তারা খুশি।সঠিক বিচার হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কাকার বিরুদ্ধে ভাইপোকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584