ভিসা ও ভাড়াবাড়ি যাপন

0
157

কৌস্তভ ভট্টাচার্য,শিকাগো: অনেকদিন কিচ্ছু লিখিনি। তা’তে অবশ্য পৃথিবীতে কারো কিচ্ছু এসে গেছে বলে আমার কাছে খবর নেই। তবে কিনা বাঙলা বড়ো সুন্দর ভাষা। বাঙলায় আগা, পাশ আর তলা লাগিয়ে কিছু একটা লিখতে পারলে বেশ একটা ভ্যাদভ্যাদে আবেগ আসে – তাকে ভালোবাসা বলে কিনা জানা নেই।
তবে শিকাগোতে এসে কোলকাতা কিম্বা বাঙলা নিয়ে আদিখ্যেতা করা আমার ধাতে নেই। যদি এতোই দরদ তবে ভাই অতলান্ত পেরোলি কেন? বিশ্বাস করুন আমরা যারা এদেশে এসেছি, তাদের না আসার অজস্র সুযোগ ছিলো, যেগুলো ছেড়ে আমরা স্বেচ্ছায় কাস্টমস পেরিয়েছি। তাই এখানে এসে “বঙ্গ আমার জননী আমারর” ঘেটোগিরি করা মানে অনেকটা এরকম। সামনে হা হা করছে গোটা পৃথিবীর গুচ্ছ সংস্কৃতি, আর আমি একটা নিজস্ব চৌখুপে বাঙালি আবেগে তৈলনিষিক্ত করছি। বড়োরা এরকম শেখায়নি। আর কোলকাতাতে পাকাপাকি না ফিরে দুহপ্তা কাটিয়ে এসে বঙ্গ সম্মেলন করা নেহাতই একটা শর্টকাট। আমাদের জাতিগত অল্পেতে খুশি হবারই প্রমাণ দেয়। আমি বরং দামোদর শেঠগিরি করি। যদ্দিন থাকবো এট্টু আম্মো বাঙালি সার্টিফিকেট গলায় না ঝুলিয়ে একটা কসমোপলিটান দেশে কসমোপলিটান হয়েই থাকার চেষ্টা করবো।


তবে কিনা কই মাছের ব্যাপারটা আলাদা। কাছে ডেভন বলে একটা জায়গা আছে। আমার গিন্নির সেই জায়গাটায় গিয়ে মানালিতুল্য মনে হয়েছিলো। বুঝতে হবে সেই গাঁকগাঁক গলা সবার, সেই বাচ্চাদের ক্যাচরম্যাচর, সেই ও আমার হিন্দিভাষী তামিলভাষী ভাই ও বোনেদের মাঝে গায়ে দিব্য মেছো গন্ধ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শাহজালাল মাছের ভান্ডার।
গেলাম। ইলিশ, চিঙড়ি, রুই, কাতলায় আন্তর্জাতিক, কসমোপলিটান সব ধুয়ে মেখে হাফ ডজন কই মাছ কিনে বাড়ি ফিরলাম। মাছ ভাজা শুরু হলো – আমাদের ভাড়াবাড়ির ফায়ার ডিটেক্টর বাজনা বাজালো পাল্লা দিয়ে। বেচারা এহেনা কিছু আগে দেখেনি – হুঁ হুঁ বাবা – কই মাছের জান। মরে শুকিয়ে বরফচাপা পড়েও আম্রিকি ফায়ার ডিটেক্টরকে ঘোল খাওয়াতে পারে।
যাই হোক। মাছ খেলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে। আমার বিশ্বাস হয়না। বাড়লে কেউ রাত দশটায় ঘেমেনেয়ে বাড়ি ফেরার সময় মেট্রোয় মারামারি করেনা। আর একদল লোক সেই নিয়ে আমার টাইমলাইনে ‘আসলে কী ঘটেছিলো?’ জাতীয় ‘আমাদের + কোনো + কাজ + নেই’এর জ্বলজ্বলে উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায় না।
নাহ সেই লেখাটা বড্ডো বাঙলাগন্ধী হয়ে যাচ্ছে। আর সম্ভবত এজেন্ডা ছাড়া লিখে যাচ্ছি। স্বভাব যায়না মলে।
কথা হচ্ছে মাছ খেলে বুদ্ধি বাড়ে কিনা। খেলে বাড়ে কিনা জানিনা, কিন্তু বাজারে গিয়ে বাড়লো। প্রধানমন্ত্রীর দেশোয়ালি শুদ্ধ শাকাহারী পাটেল ব্রাদারস থেকে সবজি কিনলাম। বাংলাদেশের শাহজালাল থেকে মাছ। চুল কাটাবার ছিলো। পাকিস্তানী এক মহিলা পরিচালিত ইউনিসেক্সে ব্যাপারটা সস্তা। বসে গেলাম। দিব্য কদমছাঁট হলো। আমাকে সখেরবাজারে চুল কাটলে যতোটা খারাপ দেখতে লাগে এখানেও তাই। তারপর লাহৌরের এক ট্যাক্সিচালক আমাদের সারথি হলেন।
কাউকে কারো থেকে আলাদা লাগলো না তো তেমন। পাটেলের গুজরাতি কর্মচারী বাঙলাদেশী মাছের দোকান চেনালো। সেই দোকানেই পাকিস্তানী সেলুন চেনালো। এটা কী ইতিহাসবিস্মৃতি? নাকি কস্মোশিকাগো মানবিক করেছে সত্তর বছরের বুড়ো জাতিসত্তাকে? আসলে ইতিহাসের অনেকটাই যুদ্ধের – কিন্তু ক্রুসেড পড়ার উদ্দেশ্য এই ভুলগুলোর থেকে লোকশিক্ষে। উলটে যদি সেই ভুলগুলোকেই ঠিকভাবে পড়ালে আর জাতিচেতনার নামে বিভেদ আর শাসনের প্ল্যাটিনাম শতাব্দীর রগড়ানি খেলে ব্যাপারটা যেখানে যায় আর কি! আমাদের সুন্দর উপমহাদেশী এই neighbourhood বা প্রকৃত অর্থে পাড়াটা তাই একটা স্বপ্নই। একটা কস্মোপলিটান স্বপ্ন।
বলেছিলাম না এখানে এসে দেশ দেশ করাটা বোকামো। একটু রিফাইন করছি। উপমহাদেশ উপমহাদেশ করা যেতেই পারে।

পুনশ্চ : লেক মিশিগানের ম্লেচ্ছ জল খায় এখানে সবাই। সেটা মিশিয়ে গঙ্গা-সিন্ধু-পদ্মার জাত মারলে কিছু হতে পারে? গুণীজন – জানাবেন।

কৌস্তভ ভট্টাচার্য এর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here