নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
মাত্র দুদিন আগেই দেশ তার ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পার করে এল। এরকম এক এক করে স্বাধীনতার বছর যায় আর ঘুড়ে ফিরে আসে কিন্তু ভাগ্য ফেরেনা এই হতভাগ্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের লিলো ভুইয়াদের মত দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের।
কুমারগঞ্জ ব্লকের মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরম গ্রামের দিন আনা দিন খাওয়া লিলো ভুইয়া অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব। স্বামী ভেবে পাচ্ছেননা কিভাবে স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলবেন আর কেমন ভাবেই বা পরিবারের তিনজনের পেট চালাবেন। পাশাপাশি বাবা মা হীন তাদের পরিবারে থাকা ক্লাস নাইনে পড়া নাতনীর পড়াশোনাই বা কি ভাবে চালাবেন। তাই একমাত্র সরকারি সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকার উপায় নেই জেনে সাহায্যের আশায় কোনরকমে নাওয়া খাওয়াহীন ভাবে দিন গুজরান করছেন।
মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরম গ্রামের বাসিন্দা লিলো ভুইয়া। জোয়ান বয়সে পরের জমিতে দিন মজুরী করে স্ত্রী গুলাপী ভুইয়া ও দুই ছেলেকে নিয়ে কোনরকমে সংসার চালিয়ে আসছিল। পরে ছেলেরা বড় হলে তাদের মধ্যে বড় জনের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউও নিয়ে এসেছিলেন। এর মধ্যে দুই নাতনীর জন্মও হয়। কিন্তু এরপর লিলো ভুইয়ার দুই ছেলে মারা যায়। সেই থেকে দুই নাতনী আর তার স্ত্রীকে নিয়ে কোনরকমে পেট চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এরমধ্যে কোনরকমে এক নাতনীকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট নাতনী স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। এদিকে বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে আর দিন মজুরের কাজ তেমন করতে পারেননা।
তাই এলাকার গাছের কাঠ আর ডালপালা কুড়িয়ে চেয়ে চিনতে তিনজনের পেট চালিয়ে আসছিলেন কোন রকমে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বোধহয় লিলো ভুইয়ার পিছু ছাড়তে নারাজ। মাস সাতেক আগে হঠাৎ স্ত্রী গুলাপী ভুইয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ না হওয়ায় বরাহার হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারেননি। অর্থাভাবে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়েও যেতে পারেননি। সেই থেকে অসুস্থ স্ত্রী বিছানায় শয্যাশায়ী। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না আবার চোখের সামনে তিল তিল করে স্ত্রীর মৃত্যুও দেখতে পাচ্ছেন না। তাই সরকারি সাহায্যের আশায় দিন গুনছেন।
অপরদিকে স্থানীয় স্কুলের ক্লাস নাইনে পড়া বৃদ্ধের নাতনী পার্বতী মাঠে ঘাটে খড়ি কুড়িয়ে নিয়ে যে দিন বাড়িতে চাল থাকে তা দিয়ে কোনরকমে দু মুঠো ভাত ফুটিয়ে দাদু দিদার খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিজে আধ পেট খেয়ে স্কুল ছুটলেও, শুধুমাত্র প্রাইভেট টিউশনের সামর্থ্য না থাকায় ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে সে। অথচ পড়াশোনা করে বড় হতে চায় সে।
আরও পড়ুনঃ কনটেইনমেন্ট জোনে পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ ভগবানগোলায়
যদিও বরম গ্রামের গ্রাম সদস্য জানিয়েছেন তারা তাকে নানা ভাবে সাহায্য করে থাকেন। কিন্তু উনাদের বয়স না হওয়ার দরুন তার ও তার স্ত্রীর বাধর্ক্য ভাতার আবেদন করতে পারা যাচ্ছেনা। তিনি অবশ্য জানান তিনি চেষ্টা করছেন তাদের হাতে যাতে সরকারি সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়।
এখন দেখার সরকারি সাহায্য পেয়ে নিজের স্ত্রীকে সুস্থ করে কবে তুলতে পারেন লিলো ভুইয়া।পাশাপাশি তাদের একমাত্র সম্বল সেই নাতনী নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে কিনা!
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584