শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
রীতিমত ছক কষে ফেসবুকে এক দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি ছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বয়স বুঝতে না পেরে নিজের ফোন নম্বর আর ছবিও দিয়ে ফেলেছিলেন ওই ছাত্রী। কিন্তু পরে ওই ছাত্রের কুপ্রস্তাবেই ভুল ভাঙে ওই ছাত্রীর।
যদিও তাতে বিন্দুমাত্র দমে যায়নি ওই অভিযুক্ত ছাত্র। এরপর শুরু হয় ওই ছাত্রীর ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে তাতে অশ্লীল ও কুরুচিকর মন্তব্য। ছাত্রী প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা তোলা চায় ওই ছাত্র।

শেষ পর্যন্ত ছাত্রী টালা থানার অভিযোগ করলে পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থেকে মহম্মদ সাকিল হাসান নামে ১৮ বছরের ওই যুবককে গ্রেফতার করা পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হলে ১৮ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
এ প্রসঙ্গে সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী জানান, “এই বয়সেই তরুণীদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে তাঁদের ‘অনলাইন ফাঁদ’-এ ফেলতে শিখে গিয়েছে সে। ২০১৮ সালের জুন মাসে ওই ডাক্তারি ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় ওই তরুণের। প্রথম দিকে তার সঙ্গে ওই ছাত্রীর সাধারণ চ্যাট হত। বন্ধুত্বের খাতিরেই সাকিলকে মোবাইল নম্বরও দেন ওই ছাত্রী। সাকিল নিজেও তাঁকে তার নিজস্ব মোবাইল নম্বর দেয়। এরপর থেকে ওই ছাত্রীকে মাঝে মধ্যে ফোন করে গল্প করতে শুরু করে”।
আরও পড়ুনঃ বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ‘কেষ্ট দা’
কিন্তু ধীরে ধীরে রং পাল্টাতে শুরু করে ওই তরুণ। বারবার ওই তরুণীকে বিভিন্ন কথাচ্ছলে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করে ওই যুবক। শুধু তাই নয়, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায় সে। বিরক্ত হয়ে ওই যুবককে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করে দেন ছাত্রী।
তারপরই ক্ষেপে যায় অভিযুক্ত সাকিল। শোধ তুলতে একটি ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল খুলে বসে। তাতে ওই ছাত্রীর নাম ও ছবি দিয়ে একের পর এক অশ্লীল ও কুরুচিকর মন্তব্য করতে থাকে। ওই জাল ফেসবুক প্রোফাইলে ছাত্রীর মোবাইল নম্বরও দিয়ে কুপ্রস্তাব দিতে বলে। এরপর ওই ছাত্রীর নম্বরে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে।
যারা ফোন করছে, তারাও তাঁকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। এতে হতবাক হয়ে যান ছাত্রী। এর পর খোঁজ নিয়ে বুঝতে পারেন যে, তাঁর ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই সাকিল ওই ছাত্রীকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা তোলা চায়। ওই টাকা না পেলে সে তাঁর আরও ক্ষতি করে দেবে বলে জানায়। নিরুপায় ওই ছাত্রী টালা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
এবার অভিযুক্ত তরুণকে ধরার জন্য অভিযোগকারিণী ছাত্রীর সাহায্যেই ফাঁদ পাতে পুলিশ। পুলিশের পরামর্শে ছাত্রী তরুণকে জানান, তিনি ওই টাকার কিছু অংশ তাকে দিতে রাজি। কিন্তু ওই টাকা নিতে তাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। এতেই রাজি হয়ে যায় সাকিল। সে টাকা নিতে বুধবার সন্ধ্যায় টালায় ওই ছাত্রীর হস্টেল চত্বরে আসে। সেখানে তৈরি ছিল পুলিশের টিম। হাতেনাতে তাকে পুলিশ ধরে ফেলে।
টালা থানায় নিয়ে এসে জেরার পর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে দু’টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। চলতি বছরেই সে একটি মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। আরও কোন মহিলা তার শিকার হয়েছিল কি না, তা অভিযুক্তকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584