নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বৃহস্পতিবার কুড়মালী নববর্ষের ২৭৭০ কুড়মাব্দের শুভ সূচনা হল। ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাতো কুড়মী সম্প্রদায়ের বারো মাস সম্পূর্ণ হয় মধু মাস, বিহা মাস, মওহা মাস, নীরন মাস, ধরন মাস, বিহন মাস, রপা মাস, করম মাস, টান মাস, সহরই মাস, মাইসর মাস, জাড় মাস নিয়ে।
এই মাসগুলোতে তারা কৃষিভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন। প্রতিটি উৎসব-অনুষ্ঠানই মূলত প্রকৃতি কেন্দ্রিক। এই নববর্ষের প্রথম দিনটি তাদের কাছে খুবই শুভদিন হিসাবে গণ্য হয়। তাই এই দিনে তারা বিভিন্ন শুভ আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।
মকরসংক্রান্তিতে টুসু পরবের শেষে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে তাদের বছর শেষ হয়। বৃহস্পতিবার সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণ যাত্রা শুরু করে, অর্থাৎ অক্ষায়ণ হয়। আর এই অক্ষায়ণ থেকেই আইখ্যান যাত্রার নামকরণ হয়েছে। কুড়মী সম্প্রদায় প্রকৃতির পুজারী। তারা কৃষিভিত্তিক জাতি। তাই মূলত কৃষি কাজের সূচনা করা হয় এই আইখ্যান যাত্রার দিনে। একে বলা হয় হালচার বা হালপুইন্যা।
আরও পড়ুনঃ খাল সংস্কার করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক বাড়ি
এই দিন সকালে লতা দিয়ে প্রত্যেকের বাড়ি পরিস্কার করার রীতি আছে। তারপর স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষকে লাঙ্গল জুড়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল চষে বাড়িতে ফিরে বরণ উপাচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ির বউরা। তারপর তাদের পা ধুইয়ে মাথায় তেল সিঁদুর মাখিয়ে বরণ করে যত্ন সহকারে বেতের তৈরি পাত্রে খাওয়ানো হয়। এভাবেই কৃষিকাজের শুভসূচনা করেন কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ।
পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া তথা জঙ্গলমহল ছাড়াও উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসম-সহ সমগ্র ছোটনাগপুরের কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ এই রীতি পালন করেন।
আরও পড়ুনঃ জেলা পুলিশের উদ্যোগে যানচালকদের চক্ষু পরীক্ষা শিবির
কুড়মী সম্প্রদায়ের শিক্ষক বিপ্লব মাহাতো বলেন, তারা ভারতবর্ষের আদিম অধিবাসী এবং তারা প্রকৃতি পূজারী আর প্রকৃতিরই একটি অংশ কৃষি। কৃষক ছাড়া অন্ন যোগানোর বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই।
তাই এই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে তারা শুভদিন হিসাবে ধরে থাকেন এবং এই দিনেই কৃষিকার্যের শুভসূচনা করেন। তাছাড়াও আজকের দিনে বিভিন্ন জায়গায় গরাম পূজাও হয়, যাতে গরাম ঠাকুর গ্রামের সবার মঙ্গল করেন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584