কোভিড ১৯ ভাইরাসের দাপটে বন্ধ মহিষাদলের রথযাত্রা

0
141

নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল রথ মানে পার্শ্ববর্তী জেলা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সমাগম। জানা যায় সালটা ছিলো ১৯৩২। তৎকালীন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের রথযাত্রা।

ratha | newsfront.co
ফাইল চিত্র

এরপর ফের ১৯৩২ সালের পুনরাবৃত্তি ২০২০ সালে। তবে এবার ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে নয়। এবার মহিষাদলের রথযাত্রা বন্ধ করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে। সরকারের তরফ থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। সেই জায়গায় মহিষাদলের রথযাত্রায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমান। তাই এই ভিড় এড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি ও মহিষাদল রাজ পরিবারের তরফ থেকে ২৪৪ বছরের এই রথ টানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ratha | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

মহিষাদলের ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, ১৯৩২ সালে তখন ভারতে ব্রিটিশদের অত্যাচার চরমে। এমন সময় ওই বছর রথের দিন এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর ওপর চরম অত্যাচার চালায় ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী। যার প্রতিবাদে রথ একবার টানার পর রথ টানা বন্ধ রাখে দর্শনার্থীরা। তারা ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে দাবি জানায়, হয় পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে, নচেৎ তৎকালীন সতেরো চূড়া রথের মাথায় লাগাতে হবে ভারতের জাতীয় পতাকা।

raj bari | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

আর এই টানাপোড়েনের মাঝে ওই বছর এখানে বন্ধ হয়ে যায় রথ টানা। এরপর থেকে অবশ্য রথ টানা স্বাভাবিক নিয়মেই চলতে থাকে। কিন্তু চলতি বছরে বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে রথ টানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মাঙ্গলিক সমস্ত আচার বিধি পালন করা হবে। রাজা আনন্দলাল উপাধ‍্যায়ের সহধর্মিণী ধর্মপ্রাণ রানী জানকি দেবী মহিষাদলের রথের সূচনা করেছিলেন। মহিষাদল রাজ পরিবারের এই প্রাচীন রথের অন্যতম দ্রষ্টব্য বিষয় হল এই রথে জগন্নাথ দেবের সঙ্গে যান রাজবাড়ীর কুলদেবতা গোপালজিও।

আরও পড়ুনঃ দিঘায় পর্যটকদের জন্যে হোটেল খুলতেই এলাকাবাসীদের বিক্ষোভের মুখে মালিকপক্ষ

তবে অন্যান্য বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীর কাছির টানে রথে চড়ে মাসির বাড়ি গেলেও এবার জগন্নাথদেব ও গোপালজিও মাসির বাড়ি যাবেন রাজবাড়ীর পালকি চড়ে। মহিষাদলের ঘাঘরা গ্রামে এক সপ্তাহ কাটানোর পর উল্টো রথের দিন ফের পালকি চড়ে জগন্নাথ ও গোপালজিও ফিরবেন বাড়িতে। এর পাশাপাশি এবছর ভিড় এড়ানোর জন্য সমস্ত দোকানপাট বসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ইতিহাসবিদ হরিপদ মাইতি বলেন, “১৯৩২ এ ইংরেজ পুলিশ এক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে টেনে হিঁচড়ে রক্তাক্ত করে থানায় নিয়ে এসেছিল।

এর প্রতিবাদে জনসাধারণ রথ একবার টানার পরই রথ টানা বন্ধ রেখেছিলেন। তবে এবার ব্রিটিশদের অত‍্যাচারের প্রতিবাদে নয়, এবার করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে বন্ধ মহিষাদলের রথ টানা।” অন‍্যদিকে মহিষাদল রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, “আমি পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি তখন একবার রথ বন্ধ ছিল।

তারপর এবার ২০২০ সালে বন্ধ মহিষাদলের রথ টানা। কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রকোপ এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত” সবমিলিয়ে ১৯৩২সালের ইতিহাস যেন ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ২০২০ সালে। তবে এবার রথ বন্ধের পেছনে ব্রিটিশের ভূমিকায় কোভিড ১৯ ভাইরাস।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here