নিজস্ব সংবাদদাতা,পশ্চিম মেদিনীপুরঃ
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী উত্তরা সিংহ হাজরা ও শালবনি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতোর সমর্থনে গড়বেতা ২ নম্বর ব্লকের আমলাশুলী ইন্দ্রনারায়ন হাইস্কুল মাঠে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়।
ওই নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী উত্তরা সিংহ হাজরা ও শ্রীকান্ত মাহাতো, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা চন্দন সাহা, সেবাব্রত ঘোষ সহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ওই সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন তিনি তাঁর ভাষণে বলেন,”জঙ্গলমহলে শান্তি আমি ফিরিয়ে এনেছি। যেখানে প্রতিদিন মানুষ খুন হত, রক্তের হোলি খেলা হত, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর খুনের রাজনীতির ঘটনা বন্ধ হয়েছে। যে গড়বেতার মাটি খুললে মানুষের হাড়গোড় উদ্ধার হত, সেই গড়বেতায় উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে।”
তিনি তার ভাষণে বলেন, “আলু চাষের প্রাণকেন্দ্র হল গড়বেতা। আলুচাষিদের আমি সাহায্য করেছি। যখন কোন দুর্যোগের মধ্যে তারা পড়েছেন আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। গড়বেতার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হল গনগনি। সেই গনগনিকে আমি নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু করেছি। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে বিনা পয়সায় রেশন পাবে। কুড়ি পঁচিশ কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতাম প্রতিদিন। কিন্তু নন্দীগ্রামের ওই ঘটনার পর আমার পায়ে রক্ত জমাট রয়েছে হাঁটাচলা করতে কষ্ট, তাই আমি হাঁটতে পারিনি।
কিন্তু আমি এই অবস্থায় আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। ক্ষুদ্র শিল্পে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। বহু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। আমি শস্য বীমা বিনা পয়সায় করে দিয়েছি এবং আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে কৃষকরা বছরে দশ হাজার করে টাকা পাবে। যখন আমফান হয়েছিল, যখন লকডাউন চলছিল, যখন জঙ্গলমহল দিনের-পর-দিন রক্তাক্ত হয়েছিল তখন কোথায় ছিলেন মোদি? এখন ভোটের সময় বাংলার কথা মনে পড়েছে। বিজেপি একশটা ফ্লাইট ভাড়া করেছে। কোটি কোটি টাকা নিয়ে বাংলা দখল করতে এসেছে।”
আরও পড়ুনঃ ‘টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি রাখেনি বিজেপি’, অভিযোগ মমতার
তিনি মা বোনেদের বলেন, রান্না করতে হাতা খুন্তি লাগে। লুটেরা বাহিনী এলে আপনারা হাতা খুন্তি নিয়ে প্রতিবাদ করবেন। আমি বদলা চাইনি,খুন চাইনি,হিংসা চাইনি, অত্যাচার চাইনি, আমি চাই শান্তি ও উন্নয়ন। যারা কৃষকের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে তাদের আপনারা ভোট দেবেন না। আপনারা ফসল চাষ করবেন কিন্তু সেই ফসলে আপনার অধিকার থাকবে না। সেই কৃষি বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে কৃষকেরা।
অথচ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃষকদের দাবি মেনে কৃষি বিল বাতিল করেনি। তিনি বলেন,”আমি যখন লড়াই করি বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করি। আমি কাউকে ভয় করিনা। বিজেপি সরকার এনপিআর, এনআরসি বিভিন্ন এলাকায় চালু করেছে। কিন্তু বাংলার বুকে এনপিআর হবেনা এনআরসি হবেনা।
বাংলা থেকে কাউকে কোথাও যেতে হবে না, বাংলার একটা মানুষকে ঘরছাড়া হতে হবে না, বাংলার একটা মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক নরেন্দ্র মোদি সরকার। তখন বুঝিয়ে দেবো আমার নাম কি। আপনারা ভয় পাবেন না,আমি আপনাদের পাশে রয়েছি। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন হয়েছিল। সেই নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদেরকে গ্রেফতার করবে। তাদেরকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা থাকলে তাদের গায়ে হাত দিয়ে দেখুক।”
সুশান্ত ঘোষ, তপন ঘোষের নেতৃত্বে গড়বেতায় কি হয়েছিল সারা দেশের মানুষ জানে। গড়বেতার মাটি খুললে পাওয়া যেত মানুষের হাড়গোড়। আর সেই সিপিএম পার্টির হার্মাদরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। তাই সিপিএম কংগ্রেস ও বিজেপিকে বিদায় জানানোর জন্য তিনি মায়েদের পাশাপাশি যুব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন যে, জঙ্গলের অধিকার জঙ্গলমহলে যারা বসবাসকরে আদিবাসী ভূমিজ সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের।
আরও পড়ুনঃ স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড থেকে দুয়ারে রেশন- তৃণমূলের ইস্তেহারে চমক
মন্ডল কমিশনে অনেক সম্প্রদায়ের নাম রয়েছে। কিন্তু তাদের ওবিসি নেই। আমরা আবার যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে আমরা তাদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করব। ৩০০ ট্রেন আমি ভাড়া করে শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনেছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করেছি। এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র সরকার বলে তিনি হুংকার ছাড়েন। পানীয় জলের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে পানীয় জল প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে যাবে। আমি বলছি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয় রাজনৈতিক যুদ্ধ হোক।
এই যুদ্ধে বাংলার মানুষ বিজেপিকে পরাস্ত করে একেবারে আউট করে দেবে, সারা ভারতবর্ষ থেকে তিনি বিজেপিকে বোল্ড আউট করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন বাংলার শুধু নয় সারা ভারতের সর্বনাশ করছে নরেন্দ্র মোদি সরকার ও বিজেপি। তাই এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে এখন উজ্জ্বলা হাওয়া হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ পত্রসায়রে নির্বাচনী জনসভায় ‘ভয়ঙ্কর’ খেলার হুঁশিয়ারি অনুব্রতর
লাল চক্ষু দেখাবেন না বলে তিনি নরেন্দ্র মোদিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনার লালচোখকে আমরা ভয় করি না। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমি আজকে এই জায়গায় এসেছি। তাই কাউকে আমি ভয় করি না। তিনি এও বলেন, “আমি আমার জীবিত অবস্থায় দাঙ্গাবাজ বিজেপির কাছে মাথা নত করব না। আমি বিজেপিকে সমর্থন করি না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার প্রায় এক ঘণ্টা আগেই আমলাশুলি ইন্দ্রনারায়ন হাই স্কুল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়,তিল ধারণের জায়গা নাই। যেভাবে মানুষের ঢল নেমেছিল সভায় তা দেখে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584