শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
একদিকে একই দিনে পরপর ইস্তফা দিয়ে একাধিক তৃণমূল নেতা ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলে। একই দিনে আরো বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়াই নাড্ডার কনভয়ে হামলায় বিতর্কিত তিনজন আইপিএস অফিসার কে বদলি করে দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দিল্লিতে যোগাযোগ করে তারপর নির্দিষ্ট কর্তব্যে যোগ দিতে বলা হয়েছে। যদিও এই ঘটনাকে রাজ্যের ক্ষমতা সরাসরি হস্তক্ষেপ করে গর্জে উঠে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
GoI’s order of central deputation for the 3 serving IPS officers of West Bengal despite the State’s objection is a colourable exercise of power and blatant misuse of emergency provision of IPS Cadre Rule 1954. (1/3)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 17, 2020
ডায়মন্ড হারবার শিরাকোলে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় বিতর্কে জড়িয়ে-পড়া তিন আইপিএস অফিসার রাজীব মিশ্র, প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং ভোলানাথ পাণ্ডেকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু নবান্ন নো অবজেকশন সার্টিফিকেট না দেওয়ায় তারা এ রাজ্য ছেড়ে যেতে পারেননি। কেন্দ্রীয় হুকুমে রাজ্য ওই অফিসারদের ছাড়তে বাধ্য নয় বলে সরাসরি জানিয়ে দেয় নবান্ন।
সূত্রের খবর, তার পর ওই তিন অফিসারকে দ্রুত রিপোর্ট করতে বলে বৃহস্পতিবার আবার চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারকে লেখা ওই চিঠিতে তাঁদের অবিলম্বে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে বলেছে। এরপর সেখান থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাঁদের নিজেদের দায়িত্বে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা না করার জন্য সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি রাজ্যপালের
কোথায় কোথায় তিন অফিসারকে বদলি করেছে কেন্দ্র? তিন আইপিএসের মধ্যে সবচেয়ে বর্ষীয়ান রাজীবকে পাঁচ বছরের জন্য পাঠানো হয়েছে আইটিবিপি-তে (ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ)। প্রবীণকে তিন বছরের জন্য পাঠানো হয়েছে এসএসবি-তে (সাবসিডিয়ারি ইনটেলিজেন্স ব্যুরো) এবং ভোলানাথকে তিন বছরের জন্য পাঠানো হয়েছে বিপিআরডি-তে (ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ)। ওই তিনটি নিয়োগই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন।
আরও পড়ুনঃ শুধু শুভেন্দু কেন, আমি এখন ছেড়ে দিলেও দলের কোনো ক্ষতি হবে নাঃ সুব্রত মুখোপাধ্যায়
কিন্তু যে ক্ষমতাবলে রাজ্য সরকার এই অফিসারদের আটকে রেখেছিল তা কিভাবে অতিক্রম করল কেন্দ্র? সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারকে একটি ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিতে হয়। যাতে সংশ্লিষ্ট অফিসারের সার্ভিস রেকর্ডে কোনও ‘দাগ’ না পড়ে। এটি রীতি হলেও রাজ্য সরকার না দিতে চাইলে তার জন্য কোনও অফিসারের বদলি আটকানো সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইলে যে কোনও অফিসারকে ফিরিয়ে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র সরকার যে তাদের ক্ষমতাবলে রাজ্য সরকারের ওপরে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা এই চিঠির মাধ্যমে দেখিয়ে দিল কেন্দ্র।
আরও পড়ুনঃ কর্নাটক যেন ‘গো রক্ষা বিল’ কার্যকরী না করে, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি মাংস বিক্রেতাদের
এদিকে এই বদলির জেরে টুইটারে পালটা গর্জে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দিন এই সংক্রান্ত পরপর তিনটি টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের চিঠির জবাবে বৃহস্পতিবার তাঁর নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও তিন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইপিএস আধিকারিককে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে পাঠানোর নির্দেশ আসলে ক্ষমতার রাজনীতিকরণ এবং ১৯৫৪ সালের আইপিএস ক্যাডার নিয়মাবলীর প্রত্যক্ষ অপপ্রয়োগের ফল।‘
পরবর্তী টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘রাজ্যের ক্ষমতা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে এবং পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত আধিকারিকদের মনোবল ভাঙার জন্যই এই উদ্যোগ। এই পদক্ষেপ বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত। এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক এবং সম্পূর্ণ ভাবে অগ্রহণযোগ্য।’ তারপর আবার মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয় টুইটে লেখেন, ‘রাজ্য প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশে কেন্দ্রের এই হঠকারিতা আমরা বরদাস্ত করব না। সাম্ররাজ্যবাদী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির সামনে মাথা নত করবে না পশ্চিমবঙ্গ।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584