শালবনীতে সাড়ম্বরে পালিত হয় বনরক্ষক থেকে তন্ত্রসাধক হওয়া ঋষি খাঁয়ের মনসা পুজো

0
65

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ

সাধারণ বনরক্ষক থেকে হয়ে উঠেছিলেন তন্ত্রসাধক। পরে মায়ের স্বপ্নাদেশে গ্রামে ফিরে এসে শুরু করেছিলেন মা মনসার পুজো। সাধক ঋষি খাঁ -এর শুরু করা সেই মনসা পুজো এখন সাড়ম্বরে পালিত হয় শালবনীর দেবগ্রামে। যা বর্তমানে গ্রামবাসীর পুজোতে পরিণত হয়েছে।

manasha statue | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর দেবগ্রামে দীর্ঘ নয় দশক ধরে মা মনসা পূজিত হন সাড়ম্বরে। আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি তিথি যা ডাক সংক্রান্তি নামে পরিচিত সেই তিথিতে গোটা গ্রাম জুড়ে চলে উৎসবের আয়োজন।মায়ের বর্তমান সেবক তথা গ্রামেরই বাসিন্দা আদিত্য খাঁ জানান, আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগের কথা। পরাধীন ভারতবর্ষ। সেই সময় গ্রামেরই এক যুবক ঋষি খাঁ জনৈক এক গাছ মহাজনের কাছে বন রক্ষকের চাকুরী নিয়ে আসাম যান।

manasha ma | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

সেখানে বন রক্ষকের কাজ করতে করতেই একদিন সেই মহাজনের সাথে মা মনসার লীলা ক্ষেত্র কাউর কামাক্ষ্যাতে যান ঘুরতে। সেখানে যাওয়ার পর তার মনে এক পরিবর্তন ঘটে। শোনা যায় সেই মহাজনের কাছে বনরক্ষকের কাজ ছেড়ে দিয়ে তিনি কামাক্ষ্যাতেই থেকে যান মা মনসার তন্ত্র সাধনা করার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তন্ত্রসাধনা করে এক যোগী পুরুষ হয়ে উঠেন। তারপরই মায়ের স্বপ্নাদেশ পান নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে তার নাম মাহাত্ম্য প্রচার করার। মায়ের সেই আদেশ শিরোধার্য করে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন।

আরও পড়ুনঃ অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে নেতাইয়ে আসছে শুভেন্দু অধিকারী

পরে গ্রামের মাঝে প্রাচীন এক বেল গাছের নিচে বাঁকুড়ার পাচমুড়া থেকে হাতি ঘোড়া নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন মা মনসার পুজো। তবে তিনি তন্ত্রসাধক থাকার কারণে বেশীরভাগ সময়টা কাটাতেন শ্মশানে। তাই মায়ের ঠিকঠাক দেখভাল করার জন্য এক ব্রাহ্মণকে দিয়ে মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করিয়েছিলেন৷ কিন্তু মা তাতে সন্তুষ্ট নন। তাই ফের তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে তার হাতেই পূজিতা হতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷ তাই ফের দুবছরের মাথায় ঋষি খাঁ নিজেই পুজো করতে শুরু করেন৷

আরও পড়ুনঃ মণ্ডপসজ্জায় রত আলিপুরদুয়ার চৌপথি দুর্গা পুজাে কমিটির সদস্যরাই

পরে তার অবর্তমানে তার ভাই গোবর্ধন খাঁ , পুত্র মথুর খাঁ পুজো করেন। বর্তমানে পুজো করেন আদিত্য খাঁ । কালের নিয়মে প্রাচীন সেই বেলগাছ আজ পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে গিয়েছে৷ সেই স্থানে গড়ে উঠেছে কংক্রিটের মন্দির।ঋষি খাঁ এর শুরু করা পুজো এবার নব্বই বছরে পদাপর্ণ করছে। পুরােনো রীতি অনুযায়ী এখনও প্রতিবছর পাচমুড়া থেকে নতুন হাতি ঘোড়া এবং পোড়া মাটির মায়ের প্রতিমা আনা হয়। বিকেলে গোটা গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে শাখী গান গাইতে গাইতে গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। সারারাত ধরে চলে পুজো। পরের দিন গোটা গ্রামের মানুষ এসে মন্দিরে ভিড় জমান পুজো দেওয়ার জন্য। তবে এখানে পুজো বৈষ্ণবী মতে হওয়ার কারণে বলি প্রথা নেই।

আরও পড়ুনঃ বাঘমুন্ডি থানা থেকে দেওয়া হল পুজাে কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান

কিন্তু এবার করোনা কেড়ে নিয়েছে মানুষের জীবন থেকে উৎসব আনন্দ। বাদ যায়নি দেবগ্রামের বাসিন্দারাও। তাই এবার অন্যান্য বছরের মতো সাড়ম্বরে হচ্ছে না মা মনসার আরাধনা। নিয়ম মাফিক সব কিছু হলেও এবার মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মন্দিরে অযথা ভিড় না জমানোর অনুরোধ করা হয়েছে গ্রামবাসীদের। আর যারা মন্দিরে আসবেন তাদের প্রত্যেককেই অবশ্যই মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেই হবে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here