স্টাফ রিপোর্টার,বহরমপুুরঃবাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে তলিয়ে যেতে বসা বাঙালি সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা শুরু হলো বহরমপুরে।গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো ভিতু বাঙালি। স্বতস্ফূর্ত অংশ নিলো মঙ্গল শোভাযাত্রায়।ঐ দিন খাগড়ার ভৈরবতলা ঘাট থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় শুরু হয়ে পায়ে হেঁটে মানুষের মিছিল এসে পৌঁছোয় রবীন্দ্র সদনে। মিছিলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন বর্ষীয়ান অধ্যাপক থেকে ডাক্তার,শিক্ষক, সাংবাদিক সহ সংস্কৃতির কেউকেটারা। সময়ের সাথে সাথে সাধারণ মানুষের মিছিল যত এগিয়ে চললো মিছিলের দৈর্ঘ্য বাড়লো ততোধিক।জেলার বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা সুশৃঙ্খল ভাবে মাষ্টার মশাই দের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে শোভা বাড়ালো শোভাযাত্রার।
শোভাযাত্রা সুসজ্জিত হলো রংবেরঙের ট্যাবলোয়, মুখোসে। ঢাকের বাদ্যি আর বাউলগানে ততক্ষণে মুখরিত শহরের বাতাস। রণ পায়ে রাঁয়বেশে, ঘোড়া নাচ ব্রতচারী সবাই আজ শোভাযাত্রার শোভা বর্ধকের ভূমিকায়। নাচে গানে কবিতায় প্রাণ ফিরে পেলো জেলাবাসী। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের মুখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন ঘাম দিয়ে ভয় ছাড়লো। নববর্ষের প্রথম দিনে একে অপরের শুভেচ্ছা বিনিময়ে আর প্রাণখোলা আনন্দে আড্ডা দিলো বাঙালি। কেউ ছাতিম তলায়, কেউ সদনের চাতালে কেউ সমর, সঞ্জয়ের বন্ধ চা দোকানের ধাপিতে। তর্কবাগীশ বাঙালি একে অপরকে দুয়ো দিয়ে বললো “বলেছিলাম না এটা অরাজনৈতীক শোভাযাত্রা”।
আয়োজকরা ততক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। বিশিষ্ট চিকিৎসক নির্মল সাহা মিছিল শেষে সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে বলে উঠলেন “কত শোভা চারিপাশে”। আবেগ জড়ানো কন্ঠে বললেন “পবিত্র প্রাণ মানুষ গুলোকে একজায়গায় আনতে সাহায্য করেছে এই শোভাযাত্রা। সবাই চেয়েছে সমাজটা সুন্দর হোক, গ্লানি মুক্ত হোক। সবাইকে ভালোবাসা এবং সবার কাছ থেকে ভালোবাসা এই হোক আজকের বার্তা”। বর্ষীয়ান অধ্যাপক শক্তি ঝাঁ হেঁটে এলেন সারা রাস্তা। আয়োজকদের ব্যবস্থার ত্রুটি ছিলো না। উনি কোনো টোটোয় উঠলেন না। সদনে তাঁর অনেক ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত হয়েছে। তাদেরকে স্যার বললেন, “আমাদের সংস্কৃতি হিন্দুর নয় মুসলমানের নয়। আমাদের সংস্কৃতি মানুষের সংস্কৃতি।
চারপাশে অমঙ্গলের মেঘ। আর তা সরিয়ে আমাদের অবস্থান বোঝানোর জন্য এই শোভাযাত্রা গুরুত্বপূর্ণ”। এক তরুণী মাঝখান থেকে বলে উঠলো “এর আগে এরকম দেখি নি”। জেলা থেকে যখনি কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলন এর আগে সংগঠিত হয়েছে প্রায় সবকিছুতে হাজির থেকেছেন প্রবীণ নাট্যশিল্পী অভিজিৎ সরকার। এদিনো তার ব্যতিক্রম হয় নি। আরো একধাপ এগিয়ে তিনি বললেন ” নিষ্ঠুর সময়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলবার খুব দরকার ছিল”। তিনিও মেনে নিলেন, রাজনৈতীক মিছিলের গুনগুন স্বর তার কাছে ও পৌঁছেছে। তাই হয়ত জোর দিয়ে বললেন “রাজনীতির কারবারীরা আজ উপস্থিত থাকলেও সাধারণ আর সংস্কৃতির মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা। মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্থকতা এখানেই”। ততক্ষণে মঙ্গল শোভাযাত্রার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে উঠে এসেছে এক উদ্যোক্তার বার্তা-“কাল থেকে আগামী বছরের দিনগোনা শুরু হবে”। প্রত্যুত্তরে স্ক্রিনে ভেসে উঠলো অনেক গুলো মুষ্টিবদ্ধ হাত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584