পিয়া গুপ্তা, উত্তর ২৪ পরগনাঃ
নাগরিক কল্যাণে একগুচ্ছ কর্মসূচির সংকল্প নিয়ে আজ তৃণমূল কংগ্রেস কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তাদের ইস্তেহার প্রকাশ করল। আজ কালিয়াগঞ্জের সমবায় ভবনে বসে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বলেন, রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকার সর্বদা মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে, আগামীতেও করে যাবে। সেই লক্ষ্যে আগামী দিনে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় কি কি কাজ করা হবে তার একগুচ্ছ কর্মসূচি এদিন তারা ঘোষণা করলেন।
তিনি বলেন আগামীতে এই উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তারা সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন। রয়েছে নাগরিক কল্যাণ, নাগরিক প্রতিনিধিত্ব, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবহন, পরিকাঠামো উন্নয়ন, কৃষকদের উন্নয়ন এবং শিক্ষার উন্নতি।
কানাই বাবু বলেন এই সমস্ত কর্মসূচীগুলির মধ্য দিয়ে আগামী দিনে তাদের লক্ষ্য রয়েছে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার মানুষের কল্যাণ করা। তিনি আরও বলেন আগামী দিনে যদি কালিয়াগঞ্জের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে জয়ী করে বিধায়ক করতে পারে তাহলে তারা একটি হেল্পলাইনের ব্যবস্থা করবে যেখানে সাধারন মানুষরা সরকারি প্রকল্পগুলি কোথা থেকে পাবে এবং সেগুলির উপকার কি সেগুলো সম্বন্ধে যেমন তারা জানতে পারবেন তেমনি এখানকার বিধায়ক ও সাধারণ মানুষকে জানাবেন প্রতিনিয়ত। এর পাশাপাশি বিধায়ক ১৫ দিন অন্তর অন্তর একটি বৈঠক করবেন এবং সেই বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমস্যাগুলি শুনবেন।
জেলা সভাপতি বলেন বর্তমান রাজ্য সরকার শিল্পী ভাতা চালু করেছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকে শিল্পী ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আগামী দিনে যাতে কোন শিল্পী এই ভাতা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য তারা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।পাশাপাশি তিনি বলেন যারা শিল্পী নয় অথচ ভাতা পাচ্ছেন এমন মানুষদের তারা চিহ্নিত করবেন। তিনি বলেন অক্ষম ভাতা এবং বৃদ্ধ ভাতা চালু হয়েছে এগুলো যেহেতু জাতীয় পর্যায়ের স্কিম। সেহেতু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অনেক অক্ষম ব্যক্তি এবং বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এই ভাতা পাচ্ছেন না ঠিকঠাক ভাবে। শুধু তাই নয় কয়েক বছর ধরে এই ভাতা গুলো নতুন করে আর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। বৃদ্ধ ভাতার উপযুক্ত হলেও তারা পাচ্ছে না। আগামীতে অক্ষম ভাতা এবং বৃদ্ধ ভাতা যাতে প্রকৃত মানুষ পায় তার জন্য তারা সদা সজাগ থাকবেন।
এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার যে মানবিক ভাতা চালু করেছে সেই ভাতা যাতে সকলে পায় তার জন্য তারা ব্যবস্থা করবে। পাশাপাশি তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজবংশী উন্নয়ন সংস্কৃতি নামে একটি বোর্ড আছে রাজ্য সরকারের। সেই বোর্ডে উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।আগামীতে সেখানে যাতে কালিয়াগঞ্জ থেকে কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তার জন্য তারা চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন কালিয়াগঞ্জে একটা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল আছে কিন্তু সেখানে এখনো ঠিকঠাক ভাবে পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। আগামীতে যাতে কালিয়াগঞ্জের উন্নয়নে হাসপাতালের পরিকাঠামো বৃদ্ধি হয় এবং সবাই যাতে সু-চিকিৎসা পান তার জন্য তারা খুবই তৎপর হয়ে এই সমস্যার সমাধান করবেন।
এছাড়া তিনি বলেন প্রতিটি গ্রামে যাতে একটি করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকে এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ঠিকঠাক থাকে তার জন্য তারা ব্যবস্থা নেবেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বলেন,আগামীতে যাতে কালিয়াগঞ্জে একটি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ব্যবস্থার বাসষ্ট্যান্ড করা যায় তার জন্য তারা দৃষ্টি দিবেন এবং এয়ারকন্ডিশন বাস যাতে একটি কালিয়াগঞ্জ থেকে কলকাতায় যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এর পাশাপাশি রাস্তাঘাটের যে সমস্ত সমস্যা গুলি রয়েছে সেগুলিকে আগামীতে দ্রুত সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান। কানাই বাবু বলেন যেহেতু কালিয়াগঞ্জ থেকে কোন দলের বিধায়ক নেই সেই জন্য অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে আছে, দেখার কেউ নেই। আগামী দিনে বিধায়ক কোটার তহবিল থেকে যাতে সে সমস্ত রাস্তাগুলি সংস্কার হয় এবং নতুন রাস্তা হয় তার জন্য ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নেবেন। এর পাশাপাশি তিনি আরো বলেন বাংলা আবাস যোজনায় এখনো অনেক ঘর করা বাকি রয়েছে যাতে আগামীতে দ্রুত সে কাজগুলো সম্পন্ন হয় সেগুলো প্রতি তারা নজর দেবেন।
এছাড়া আরও যে সমস্ত প্রতিশ্রুতিগুলোর কথা তিনি জানান তার মধ্যে রয়েছে স্বপ্না বর্মন নামে এক মানবিক মহিলা তাদের জায়গা দিয়েছে সেই জায়গায় আগামীতে একটি ইনডোর স্টেডিয়াম করা যায় তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। এর পাশাপাশি কৃষির উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে সমস্ত প্রকল্পগুলি নিয়েছে সেগুলো যাতে সঠিকভাবে কৃষকরা সেই প্রকল্পগুলির সুবিধা পায় তার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন এবং সজাগ দৃষ্টি রাখবেন বলে তিনি জানান ।এদিন শিক্ষার অগ্রগতির জন্য বেশকিছু নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন ইস্তাহারে জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল। তিনি বলেন আগামীতে কালিয়াগঞ্জে যাতে একটি অত্যাধুনিক সুবিধা সহ পঞ্চানন বর্মা মহিলা কলেজ , নতুন কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা, নতুন পলিটেকনিক কলেজের নির্মাণ করা যায় তার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো তখনই সহজ হবে যখন দলীয় বিধায়ক এখান থেকে নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় যেতে পারবেন।
আজ যখন দলীয় ইস্তেহার প্রকাশ করেন জেলা সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের কানাইলাল আগরওয়াল তখন সেখানে ছিলেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেসের অমল আচার্য, রাজ্য সম্পাদক তৃণমূল কংগ্রেসের অসীম ঘোষ, করণ দীঘির বিধায়ক মনোদেব সিংহ, জেলা পরিষদের কর্মদক্ষ মোশারফ হোসেন, দোধী মোহন দেব শর্মা, কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা পৌরপতি কার্তিক চন্দ্র পাল , কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপা সরকার এবং প্রার্থী তপন দেব সিংহ। ইস্তেহার প্রকাশকে ঘিরে এদিন দেখা যায় ব্যাপক উৎসাহ তৃণমূলের নেতৃত্বদের মধ্যে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584