নিজস্ব সংবাদদাতা,দক্ষিন দিনাজপুরঃ
বিয়ের আমন্ত্রণ পত্র থেকে শুরু করে বৌভাতে আসর পর্যন্ত সবেতেই একটা অন্যরকম ছবি।যা সাধারণত বিয়েতে দেখা যায় না।উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বংশীহারীর শ্যামপুরের বাসিন্দা অর্জুন মন্ডল ও বুনিয়াদপুরের শর্মিষ্ঠা সরকারের চার হাত এক হয়েছে।একসাথে চলার শপথ নিয়েছে অর্জুন-শর্মিষ্ঠা।শুধু একসাথেই নয়,বিয়ে শুরুর প্রথমদিন থেকেই আরও অনেক মানুষের দ্বায়িত্ব ভার নিয়েছেন তাঁরা।বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রে একাধিক সামাজিক বার্তা তুলে ধরে একপ্রকার নজির গড়েছে পাত্রপক্ষ।”রক্তদান জীবন দান” থেকে শুরু করে “গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান”, সবটাই লেখা ছিল ঐ কার্ডে।শুধুই কি তাই, বিয়ের দিন,তারিখ,স্থানের পাশাপাশি লেখা ছিল চাইল্ড হেল্পলাইন,ওমেন হেল্পলাইন,সিনিয়ার সিটিজেন হেল্পলাইনের মতো একাধিক আপদকালীন নম্বর।যা নিয়ে সোস্যাল সাইটেও বেশ চর্চা হয়।
এবার নিজেদের বৌভাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে নজির গড়ল অর্জুন ও শর্মিষ্ঠা। বংশীহারী ব্লকের শ্যামপুরে অর্জুনবাবুর বাড়িতেই এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। যেখানে পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবরা রক্তদান করেন। রক্তদানের পাশাপাশি অনুষ্ঠানবাড়িতে আগত সকলের হাতে একটি করে গাছ তুলে দেওয়া হয়। যার মধ্যে দিয়ে সবুজায়নের বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরা।ডিজে বা জমকালো কোনো গানের অনুষ্ঠান নয়,ছিল বাংলার মাটির গান লোকসঙ্গীত।বুনিয়াদপুরে শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত হয় এই সঙ্গীতানুষ্ঠান।নব দম্পতির মতে বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিনব কিছু করার ইচ্ছে আগে থেকেই ছিল,তারই ফলস্বরূপ এই সব আয়োজন।
এবিষয়ে পাত্র অর্জুন মন্ডল বলেন, ‘বিয়েতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করব আগেই ঠিক করেছিলাম৷পরে স্ত্রীকে ও পরিবারের লোকেদের জানালে,তাঁরাও রাজি হয়ে যান।আমার বরাবরই ভারী সাউন্ড অর্থাৎ ডিজে পছন্দ ছিলনা তাই লোকসঙ্গীত শিল্পীদের দ্বারা গানের আয়োজন করেছি।এছাড়াও সবুজায়নের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া জন্য গাছ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে সকলকে।আর এসবের জন্য শুধু আমি একা নই, পাশে পেয়েছি বাবা-মা, স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন সহ আরও অনেককে।’
শর্মিষ্ঠার কথায়, ‘মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি এই ভেবেই ভালো লাগছে।’ আর এসবের জন্য সমস্ত অবদান অর্জুন ও তাঁর আত্মীয়-পরিজনের বলছেন শর্মিষ্ঠা।নব দম্পতির এমন আয়োজনে খুশি উপস্থিত সকলেই।
আরও পড়ুনঃ নান্দুর দেবু স্মৃতি সংঘের পরিচালনায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন
এবিষয়ে জেলার রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক দেবাশীষ সরকার জানান,জেলার বুকে এই বিয়ে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জেলায় প্রথম বিবাহ উপলক্ষ্যে রক্তদান শিবিরের সূচনা হল আজ। যা এই জেলার রক্তদান আন্দোলনে একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।মানুষ যখন এত আত্মনির্ভর হয়ে পরছে,সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই বিয়ে মানুষকে একটু হলেও ভাবাবে।অর্জুন ও শর্মিষ্ঠার পরিবারের লোকজনদের কুর্নিশ জানিয়েছেন দেবাশীষবাবু।তাঁদের এই সামাজিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উন্মীলন নামে একটি সমাজিক সংগঠনও।সব মিলিয়ে এই বিবাহ অনুষ্ঠান অন্যতম এক সামাজিক অনুষ্ঠানের মাত্রা পেয়েছে বলা চলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584