সুদীপ পাল, বর্ধমানঃ
শীত পড়তেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে নলেন গুড় তৈরির জন্য ঘর ছেড়ে বর্ধমানের মানকর, অমরারগড়, ডাংপাড়া প্রভৃতি বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাঁধেন তসলীম শেখ, দিল মামুদ শেখ, শেখ বাবুজানরা । তাদের বক্তব্য, আগের বছর নোট বাতিলের ধাক্কায় গুড় কেনাবেচা অনেকটাই কমে গিয়েছিল কিন্তু এবার শীত পড়তেই নলেন গুড়ের ব্যাপক চাহিদা মানকর সহ সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে । মানকরে নলেন গুড় তৈরির শাল দেওয়া তসলীম শেখ জানান, পঞ্চাশটি খেজুর গাছ নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা হচ্ছে ।
প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ কিলোগ্রাম করে গুড় হচ্ছে। আগের বার প্রতি কিলোগ্রাম ষাট থেকে সত্তর টাকা দরে বিক্রি করা হলেও খদ্দের মেলেনি। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই নলেন গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তাই একশো থেকে একশোকুড়ি টাকা দরে বিক্রি করছেন। জামতাড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সঞ্জয় সাহা বলেন, খেজুর গুড় এবং পাটালির চাহিদা এই এলাকাজুড়ে বরাবরই থাকে । কথিত আছে, কাটোয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম পাটুলির বাসিন্দারা প্রথম দেখিয়েছিল খেজুররসকে জ্বাল দিয়ে পাটালি উৎপাদন প্রক্রিয়া। তাই পাটুলির নাম থেকে পাটালি কথাটি এসেছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, বাইরের তাপমাত্রা যত কমে, খেজুরের রসের ‘ফ্লোয়েম’ কোষে মিষ্টতা বাড়ে। তা ছাড়া কোষের রূপান্তরের ফলে রসে সুগন্ধ বাড়ে। গুড় প্রস্তুতকারী দিলমামুদ বলেন, গড়ে যাতে দিনে অন্তত ষাট কলসি রস পাওয়া যায় তার চেষ্টা করি। কারন রস সংগ্রহ করে জ্বাল দেওয়ার পর তার পরিমান প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। শেখ বাবুজান বলেন, ভোর ৪ টেয় দিন শুরু হয় আমাদের। খেজুর গাছ থেকে ‘ঠিলে’ অর্থাৎ গাছে লাগানো হাঁড়ি খোলার পালা। রসের হাঁড়ি নামাতে নামাতেই প্রায় এক ঘণ্টা পার। তারপরে শুরু হয় রস জাল দেওয়া। একেক ঠালি থেকে গুড় বানাতে ঘন্টা খানেক লাগে। পাটালির জন্য রস জাল দেওয়ার পরেই তা ছাঁচে ফেলা হয়। এরমধ্যেই আবার ছোট গাছে হাঁড়ি বাঁধতে হবে।বুদবুদ বাজারের এক মিষ্টি ব্যবসায়ী বলেন, শীতের শুরু থেকেই নলেন গুড়ের রসগোল্লা, সন্দেশ প্রভৃতির চাহিদা তুঙ্গে। গত দুই বছরের নোটের ধাক্কা সামলে এবছরে শীতের শুরুতেই এলাকাবাসী ফের নলেন গুড়ে মজছে দেখে আশায় মিষ্টি কারিগর থেকে গুড় প্রস্তুতকারী।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584