শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
ধর্ম তলায় কৃষি বিল এর প্রতিবাদে গান্ধী মূর্তি পাদদেশে জনসভায় কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার আক্রমণও শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভায় নিজের ২৬ দিনের অনশনের প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘কৃষকদের আন্দোলন থেকে আমরা সরব না।’’
তবে কৃষক আন্দোলন নিয়ে কথা বলা শুরু করলো একের পর এক বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে কেন্দ্র সরকারের আক্রমণ করে গিয়েছেন তিনি। ঘটনাচক্রেই এদিন ছিল কেন্দ্রের নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন। সেই ব্যাপারে আক্রমণ করে মমতা বলেন, নয়া সংসদ ভবনের টাকা কৃষকদের দেওয়া উচিৎ ছিল কেন্দ্রের।
বৃহস্পতিবারই ডায়মন্ড হারবারের সভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। আমফানের টাকায় দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন তিনি। তার জবাবে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘একটা টাকা দিয়েছ, যে কৈফিয়ত চাইছ? আমাদের রাজ্য থেকে জিএসটি-র যে টাকা নিয়ে যান, সেই টাকা আগে ফেরত দিন।’’
এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার আক্রান্ত হওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, শিরাকোলে আমাদের একটা সভা ছিল, কিন্তু সময় পাল্টে পরে করা হয়েছে, ওখানে কিছু হয়নি। আমি পুলিশকে বলেছি, তদন্ত করে দেখতে। আমি জানি না, কোথায় কী হয়েছে। সম্মান পেতে হলে, সম্মান দিতে হয়।”
তিনি আরো বলেন, যত বার আমি দিল্লি যাই, বিজেপির লোকেরা আমার বাড়ি ঘিরে রাখে। আমি তৃণমূলের চেয়েও বেশি সামাল দিই বিরোধী নেতাদের। তোমরা রাজ্যকে জানাও না, আর যখন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাও। আপনারা তো কেন্দ্র থেকে নিরাপত্তা নিয়ে আসেন, তা হলে আপনার গাড়িতে হামলা কী ভাবে হয়? একটা নেতার পিছনে ৫০টা গাড়ি কেন যাবে?
আরও পড়ুনঃ জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার প্রতিবাদে বিধাননগরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ বিজেপির
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে তৃণমূলকে বিব্রত করার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও। এদিনও তিনি বলেন, তৃণমূলে থাকলে সারদা-নারদার ছানা, আর বিজেপিতে থাকলেই সব মুক্ত। যার যত বেশি দুর্নীতি, তারা ওদের এক নম্বর নেতা। ভোজপুরী সিনেমায় একটা মহিলার শাড়ি ধরে টানছে, সেটা বলছে এখানে হয়েছে। বাংলাদেশে একটা ঘটনা হয়েছে, এরা বলে দিচ্ছে এখানে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এরা মিথ্যে কথা বলে। এটা বাংলার লজ্জা, ,আমার আপনার সবার লজ্জা
আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী কথা না শুনলে দেশজুড়ে ‘রেল রোকো’, হুঁশিয়ারি আন্দোলনরত কৃষকদের
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাঁরা এমন মিথ্যে কথা বলেন, তাঁরা আমাকে নিয়েও বলতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি বিশ্বভারতীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এরা কেমন মিথ্যে কথা বলে ভাবুন। বাংলায় থেকে বাংলার বদনাম করেন, লজ্জা করে না।বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে এসে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে।
এরপরই তীব্র আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন, ওরা কিন্তু আমাদের রাজ্যের দল নয়, বাইরের দল। ওয়ান নেশন ওয়ান কার্ড করছে, অর্থাৎ ওরা একা থাকবে, আর কেউ থাকবে না। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন সব তথ্য চাই ওদের।
আরও পড়ুনঃ ‘বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান’, বিজেপির টুইটে টিপ্পনি তৃণমূলের
তৃণমূল প্রকৃত কৃষক বন্ধু প্রমাণ করতে তারপরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৭৩ লক্ষ চাষি কৃষকবন্ধু প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে চাষিদের টাকা দিই। আমরা এখানে কৃষকদের ফসল বিমা বিনা পয়সায় দিই। আর কেন্দ্রের এই নয়া কৃষি আইন কৃষক বিরোধী আইন, জনবিরোধী আইন। কৃষকদের ধান তুলে নিয়ে মজুতদারি করলে চলবে না। তিনটে বিলই প্রত্যাহার করতে হবে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য থেকে আলু, পেঁয়াজকে বাদ দেওয়া যাবে না।
এরপরে নয়া সংসদ ভবন তৈরি করে অর্থ অপচয় হয়েছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সংসদ ভবন যা আছে, তাতেই চলে যেত। আমি মনে করি সংসদ ভবন তৈরির টাকা কৃষকদের দেওয়া উচিত ছিল। আমপানে এক টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই, বলছে হিসাব চাই। প্রত্যেকটা আন্দোলন বন্ধ করার জন্য ওরা চক্রান্ত করে রেখেছে। যখনই কোনও আন্দোলন হয়, তখনই বলে পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। কৃষক আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে তার জন্য নাটক চলছে, পরিকল্পনা চলছে।
দিল্লিতে এনআরসির সময় সংঘর্ষে কত জন মারা গিয়েছিল, আপনারা জানেন। সব কিনে নিয়েছে, আপনি কোনও কথা বলতে পারবেন না।বিজেপির সরকার ফেক ভিডিয়ো তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা হিন্দু ধর্মের নামে অন্য একটা ধর্ম নিয়ে এসেছে। এরা একটা নতুন হিন্দুধর্মের আমদানি করছে। এদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584