শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
কথায় আছে কু-পিতা যদি বা হয় কু-মাতা কখনো নয়। কিন্তু বারবার মায়ের মমতাও যেন নৃশংস হয়ে উঠছে কিছু শিশুদের জন্য। বেলেঘাটার মত এবার আনন্দপুরে শিশুহত্যা ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। ফেব্রুয়ারি মাসে ওই ঘটনার ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তিন দিনের ওই শিশুটিকে।
গলায় ছোট ছোট আঙুলের দাগ দেখে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা হয়েছিল, তারই দেড় বছর দাদা খেলাচ্ছলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু ঘটনার ৬ মাস পরে আচমকাই নিজের শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে নিলেন মা। আর তার স্বীকারোক্তির পরেই অভিযুক্ত সোনিয়া সেন নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের মার্চ মাসে বেলেঘাটায় নিজের শিশু হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল আরেক মা সন্ধ্যা মালোকে। পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তিন দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে হাজির হন ভিআইপি নগর জাগরণী কলোনির বাসিন্দা সোনিয়া সেন।
তিনি দাবি করেন, শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তারপরেই তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা ওই শিশুকন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় তাঁদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা খবর দেন আনন্দপুর থানায়। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানোর পর ছোট ছোট নখের দাগ এবং শ্বাসরোধের প্রমাণ পায়।
আরও পড়ুনঃ ফের নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি চলবে দক্ষিণবঙ্গে
প্রাথমিকভাবে তার দেড় বছরের দাদাকে পুলিশ খুনি বলে মনে করলেও একটি শিশুর পক্ষে ঘটনা কিভাবে সম্ভব, তাব কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। এর মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষায় দেড় বছরের ওই শিশুটির নখের সঙ্গে মৃত শিশুটির গলায় পাওয়া নখের দাগের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। তখনই ঘটনার পিছনে যে ওই শিশুটি অভিযুক্ত নয়, তা তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়।
মা দাবি করেছিলেন, শিশুটি বুকের দুধ খাওয়ার পর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ময়নাতদন্তে দেখা যায়, শিশুর পেটে খাবারের যে অবশিষ্টাংশ রয়েছে তা মৃত্যুর অনেক আগের। এ সমস্ত অসঙ্গতির উল্লেখ করে জেরা করতে করতে শেষে রবিবার রাতে ভেঙে পড়েন সোনিয়া।
আরও পড়ুনঃ মিরাটিতে মন খারাপের ছায়া, দ্রুত আরোগ্য কামনা
প্রসঙ্গত এর আগে মার্চ মাসে বেলেঘাটায় এক মহিলাকে নিজের শিশু হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এই ঘটনার তার আগে ঘটলেও কোন সরাসরি প্রমাণ না থাকায় এতদিন এই তথ্য জানতে পারেনি পুলিশ। যে কোনও শিশুকে খুনে যতক্ষণ ধরে শ্বাসরোধ করে রাখা দরকার, তা একটি দেড় বছরের শিশু পারে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল তদন্তকারীদের মনে। কিন্তু দীর্ঘ পুলিশি জেরায় অবশেষে খুনের কথা কবুল করল মা সোনিয়া সেন। সে জানায়, প্রথম সন্তানকে বাঁচাতে ও অভাবের তাড়নাতেই সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, সোনিয়ার স্বামী প্রভাস বারুই কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে চামড়ার ব্যাগ তৈরি করেন। প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়ার পর থেকেই অন্য এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রভাসের। পুলিশ জানায়, স্ত্রী এবং সন্তানের কোনও খেয়ালই রাখতেন না প্রভাস।
প্রচন্ড অর্থকষ্টে পড়়েন সোনিয়া। জেরায় তদন্তকারীদের সোনিয়া জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোনও মতে দেড় বছরের ছেলের খাবার জোগাড় করতেন তিনি। কিন্তু সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যেই জন্ম হয় কন্যা সন্তানের। তাই অভাবের তাড়নায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার এই বক্তব্য সঠিক কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584