কালিয়াগঞ্জে আন্দোলনের পথে গৃহশিক্ষকদের সংগঠন

0
205

পিয়া গুপ্তা,উত্তর দিনাজপুরঃ

একদিকে ক্রমবর্ধমান উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আর বেকারত্ব থেকে সামান্য রেহাই পেতে গৃহশিক্ষকতার পথ বেছে নিচ্ছে তখন সেখানেও প্রতিযোগিতা।সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরাও ঘর ভর্তি ছাত্র নিয়ে খুলে বসছেন টিউশন সেন্টার।অভিভাবক থেকে পড়ুয়াদেরও লক্ষ্য থাকছে সেই দিকেই।ফলে সামান্য আয়ের ভাঁড়ারেও পড়ছে টান।
রাজ্যের প্রায় সব জায়গায় মতোই এই চিত্র উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জেও।

কালিয়াগঞ্জের অলিতে গলিতে একশ্রেণীর শিক্ষকরা সরকারী নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেট টিউশনি করে চলছেন।

Movement demanding closure of home tuition
ফাইল চিত্র

সরকারি নিয়মকে অমান্য করে প্রাইভেট টিউশনি কেন? এমন প্রশ্ন করতেই কালিয়াগঞ্জের এক শিক্ষক রেগে গিয়ে সাফ জানান, ‘স্কুলে পড়িয়ে হবেটা কি?প্রাইভেট পড়ালে তো অনেক টাকা।’

তবে কি সরকার বেতন দেয় না? পাল্টা উত্তর শিক্ষকের,
‘পাই’,তবে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে হয়টা কি?তাছাড়া প্রাইভেট পরালে তো লাখ টাকা।

ছাত্র ছাত্রীদের কাছে যদি ফি বাবদ ৫০০ টাকা করে নেওয়া যায় তবে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী পড়ালেই তো মাসে ২৫ হাজার টাকা।আর তাছাড়া শুধু শিক্ষক কেন ডাক্তাররাও তো একই ভাবে টাকা গুনছেন? তাদের তো কেউ বলছেন না। দুঃস্থ ছাত্র ছাত্রীদের কি এত টাকা দিয়ে প্রাইভেট টিউশন পড়ানো সম্ভব?পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে গেলে তো পড়তেই হবে।

এই ভাবেই চলছে বর্তমানে সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের কারবার।হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট সকলেরই কড়া বার্তা সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশন কিংবা কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না ,তবে সরকারি শিক্ষকরা দিনের পর দিন কানে তুলো গুজে তাদের এই এই ব্যবসা রমরমিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন রীতিমত।

অনেক শিক্ষক তো আবার ভয় দেখিয়ে ছাত্র ছাত্রীদেরকে প্রাইভেট টিউশনি পড়তে বাধ্য করছেন।কারন একটাই প্রাকটিক্যালের ৩০ নম্বর মাস্টার মশাই এর হাতে।এই ব্যাপারে কালিয়াগঞ্জের এক নামি স্কুলের ছাত্র সৌমিত্র রায় বলেন স্কুলে পড়াশুনো কই হয় দিদি? মাস্টার মশাই পড়ান কই? মোবাইল টিপতেই তো ব্যস্ত থাকেন সব সময়।

ঠিক একই ভাবে স্কুল ছাত্রী কোয়েল সরকার,শিপ্রা দাস, বিনা সাহা বলেন আমাদের স্কুলে ও পড়াশুনো হয়না। ম্যাডামরা পড়া দিয়ে চলে যান বলেন এটা পরে আসবি। প্রাইভেট টিউশনি না পরলে তো ফেল করে যাব তাই বাধ্য হয়েই পড়তে হয়।কালিয়াগঞ্জের দশম শ্রেণীর নামী স্কুলের আরেক ছাত্র রূপক রায় বলে,কিছু দিন বাড়িতেই ভূগোলের এক শিক্ষকের কাছে পড়তাম।পরে স্কুল থেকে বলা হয় স্কুলের মাস্টার মশাইয়ের কাছেই পরতে হবে নইলে ভূগোলের নাম্বার মিলবে না পরীক্ষায়। তাই বাড়ির স্যারকে ছেড়ে স্কুলের মাস্টার মশাইয়ের কাছেই এখন পড়তে শুরু করছি। মাস্টার মশাই রাতে তার বাড়িতে পড়ান সেখানেই যাই পরতে সপ্তাহে তিনদিন।

কর্মরত শিক্ষকদের এই গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করতে কালিয়াগঞ্জের কিছু বেকার ছেলে মেয়েরা বহু বছর ধরে লড়াই করে আসলেও প্রশাসনিক অসহযোগিতায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সরকারি স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করতে জেলা জুড়ে বহু গৃহশিক্ষকদের নিয়ে সংগঠনও তৈরি হয়েছে।কালিয়াগঞ্জের প্রায় একশো জন গৃহ শিক্ষক সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের গৃহ শিক্ষকতা বন্ধ করতে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিশন’ নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন।

কালিয়াগঞ্জের ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিশন শাখার সভাপতি তাপস ভট্টাচার্য্য,জানান সরকারি নিয়মকে অমান্য করেই কালিয়াগঞ্জের অলিতে গলিতে স্কুল শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি পড়িয়ে চলছেন।শিক্ষকদের এই ব্যাপারে কিছু বলতে গেলেই অনেক শিক্ষক রীতিমত বাড়িতে লোক পাঠিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন।এমনকি অনেক সময় ছাত্রদের হাতিয়ার করে রীতিমত শাসিয়ে যাচ্ছেন।

তাপস বাবু আরও বলেন, কালিয়াগঞ্জের যেসব শিক্ষকরা স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান বা প্রাইভেট টিউশনির সাথে যুক্ত তাদের একটা তালিকা তৈরী করেছি আমরা।সেখানে মোট ত্রিশ জন শিক্ষক সরকারি নিয়ম অমান্য করেই প্রাইভেট পড়াচ্ছেন কিংবা অন্য কোন ব্যবসা করে চলছেন।

তাপস বাবু বলেন,কিছুদিন আগেই ত্রিশ জন শিক্ষকের নাম দিয়ে এসআই অফিসে আমরা ডেপুটেশন দিয়েছি। যদি এই শিক্ষকরা এর পরও প্রাইভেট টিউশনি পড়ানো বন্ধ না করেন তবে আগামী দিন জোরদার আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হব।

উল্লেখ্য কালিয়াগঞ্জের হাজার-হাজার উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতী সৎ পথে উপার্জনের জন্য যে পেশাটিকে অবলম্বন করেছেন তা হলো গৃহশিক্ষকতা।এই পেশার মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবার তার ঘর সংসার চালাচ্ছেন।তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতার মাধ্যমে তাদের পেশাদারিত্বের পরিচয়ও পাওয়া যায়।এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তর সাম্প্রতিককালে ৮ মার্চ ২০১৮ স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন কঠোরভাবে। কিন্তু বেশিরভাগ সরকারি শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ এই নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বহাল তবিয়তে প্রাইভেট টিউশন চালিয়ে যাচ্ছেন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যেকটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল থেকে নির্ধারিত পরিমাণের নম্বরের প্রলোভন বা ভয় দেখিয়ে তারা এই টিউশন চালিয়ে যাচ্ছেন বলেই জানানো হয়।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here