মনিরুল হক, কোচবিহারঃ
বিহার ভোটের সূত্রেই চলে আসছে সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের কথা। আর এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের মুসলিম ভোট ব্যাংকে থাবা বসানোর জন্যে সেই আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল মিম।
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের দাবি, ‘মিম’ সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসানোয় লাভ হয়ে গিয়েছে বিজেপিরই। সদ্যসমাপ্ত বিহার ভোটে ৫টি আসন ঝুলিতে পুড়েছে আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল মিম। এবার তাঁদের লক্ষ্য বাংলা। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেবে ‘মিম’।
ইতিমধ্যেই ওয়াইসি জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ভোটে তাঁর দল পুরোদমে লড়বে। কলকাতা-সহ বাংলার একাধিক জায়গায় ইতিমধ্যেই মিছিল-মিটিং-সভা তো করছেই এমআইএম, এমনকী তলেতলে সংগঠন গোছানোর কাজও করতে শুরু করেছে। বিশেষত মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা, উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এমআইএম।
আরও পড়ুনঃ করোনা নেগেটিভ হওয়ায় ৬ ঘন্টা অপেক্ষার পরেও মেডিক্যাল কলেজে বেড পেল না রোগী
যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে ফুরফুরা শরীফের সঙ্গেও। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। ২০১১ সাল থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের একটি বড় অংশই শাসক তৃণমূলের অনুকূলে রয়েছে। তবে আসন্ন ভোটে ‘মিম’ মাঠে নামলে ভোটের ফলে অনেকটাই ফারাক তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচনী বিশ্লেষকরা।
বিহারের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীমাঞ্চলে মহাজোটের সংখ্যালঘু ভোটে বড়সড় ভাগ বসিয়েছে ‘মিম’। সেই কারণেই সিএএ, এনআরসি-সহ একাধিক ইস্যুতে বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশ সমর্থন উজাড় করে দিয়েছেন ওয়েইসির দলকে। তবে এ যাত্রায় উল্টো ফল হয়েছে। আরজেডি-র ভোট কেটে আদতে বিজেপিকেই সুবিধা করে দিয়েছে ওয়েইসির ‘মিম’। বিহারের সংখ্যালঘু অধ্যূষিত সীমাঞ্চলে তাই এবার ভোটে অপ্রত্যাশিতভাবেই ভালো ফল করেছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুনঃ কালীপুজাের আগে প্রচুর শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করল কাকদ্বীপ থানার পুলিশ
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের অনুমান, বাংলাতেও ‘মিম’ সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসালে ভোটের ফলে ফারাক তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে শাসক তৃণমূলের ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত মুসলিম ভোটের একটি বড় অংশ চলে যেতে পারে ‘মিম’-এর দখলে। কোনও আসনে জিতুক বা না জিতুক তারা যেটুকু ভোট কাটবে তাতে পুরোটাই বিজেপির লাভ।
পরিস্থিতি বুঝে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উস্কানি দেওয়া নিয়ে এই সংখ্যালঘু নেতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুনঃ খেলা তো সবে শুরু…ছাড়া পেয়ে উদ্ধবকে হুঁশিয়ারি দিলেন অর্ণব
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে আসাদউদ্দিনের থেকে দূরে থাকার বার্তা দিয়ে উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে তোপও দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে আসাদউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএমকে আক্রমণ করেছেন তিনি। বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে এই দলটি উত্তেজনা তৈরি চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ মমতার।
প্রসঙ্গত, কোচবিহারে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কারই বলেছেন, ‘‘ওরা কিন্তু বিজেপির বি-টিম। ওরা বিজেপির টাকা নেয়। সংখ্যালঘুরা ভুল করবেন না। ওদের বাড়ি হায়দরাবাদে। এখানে নয়।“
আরও পড়ুনঃ ফের পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু! স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি–র কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাইকোর্টের
তারপর মমতার সরকারের বিরুদ্ধে আসাদউদ্দিন বলেছেন, বাংলার মুসলিমদের হাল যে কোনও সংখ্যালঘু সমাজের তুলনায় মানব উন্নয়ন সূচকের মাপকাঠিতে সবচেয়ে খারাপ, এটা বলা মোটেই ধর্মীয় কট্টরপন্থা, অসহিষ্ণুতা নয়।
দিদি আমাদের মতো হায়দরাবাদের কিছু লোককে নিয়ে এতই উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলে তাঁর বলা উচিত, কী করে বিজেপি বাংলায় ৪২ টার মধ্যে ১৮টা আসন জিতল! অর্থাৎ ছক স্পষ্ট। অনেক রাজ্যেই তা প্রমাণ হয়েছে। সেই ছকে বিহারে পদ্মফুলের ভিত মজবুত করছে বিজেপি, এরপরে কি বাংলাতেও লাগু হবে এই একই ফরমুলা ?
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584