শ্যামল রায়,নবদ্বীপঃ
চৈতন্য ভূমি নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠ উৎসব রাস।তাই রাস যাত্রা উপলক্ষে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।শহরের অলিতে গলিতে প্যান্ডেল তৈরি করার জন্য বাঁশ কেটে মন্ডপ তৈরী ও প্রতিমা তৈরীর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
নবদ্বীপের রাস কি? এই প্রশ্ন অনেক দর্শনার্থী করে থাকেন।কথিত যে রাস মূলত বৈষ্ণবীয় ভাবধারার উৎসব।তবে নবদ্বীপের রাস এ শাক্ত মূর্তির প্রাধান্য টাই বেশি লক্ষণীয়।এর প্রধান কারণ হচ্ছে নবদ্বীপের রাজা ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের চৈতন্য বিদ্বেষ।প্রধানত বৈষ্ণবীয় রাস উৎসব কে প্রতিহত করার জন্যই নবদ্বীপের রাস এ শক্তি আরাধনার সূচনা হয়েছিল।জানা গিয়েছে যে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই রাশে আরম্ভ হয় শক্তি পুজো।১৮০২ থেকে হাজার ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে গিরিশচন্দ্র মহারাজ তখন সিংহাসনে আসীন ছিলেন।কার্তিক ই পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত এখানকার রাস উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মূর্তির বিশালতা।নানা রূপে মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে শক্তি আরাধনায় হচ্ছে এখানকার রাসের বিশেষত্ব।সূচনায় পুজো হত পটে,নাম ছিল পথ পূর্ণিমা তারপর বিবর্তনের ফলে মূর্তি নির্মাণ করে বিশাল বিশাল কালীমূর্তি পূজিত হতে থাকে আজকের রাস উৎসবে।অনেকেই নবদ্বীপের রাস কে রাস কালী বলে অভিহিত করে থাকে।দেবী কালিকার নানা বিধ কল্পনায় নবদ্বীপের পন্ডিতবর্গ ছিলেন বিশেষ পারদর্শী তাই বিচিত্র রূপে দেবী মায়ের পুজো হয় এখানে।বড় শ্যামা মাতা,মেজ শ্যামা মাতা,সেজ শ্যামা মাতা,ছোট শ্যামা মাতা,বামা কালী,রণ কালি,বুড়ো কালি,উড়ন্ত কালী,ভদ্রকালী,কৃষ্ণ কালী, এলান এ শিবকালী দক্ষিণা কালী নবদ্বীপ রাস এর প্রধান শক্তি আরাধনার মূর্তি তৈরি হয়।বর্তমানে নবদ্বীপ শহরে শাক্ত এবং বৈষ্ণব রাশির মিলন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি।মহা মিলনের রাস নবদ্বীপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও।একাধিক মন্দিরে রাধা কৃষ্ণের রাসলীলা অপরদিকে শক্তি মূর্তির রূপ কল্পনাতেও এসেছে সমন্বয় ভাবনা।শাক্ত অন্যদিকে বৈষ্ণবের মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠছে নদীয়া নবদ্বীপ শহর।তবে চৈতন্য ভূমি নবদ্বীপের রাস একটি অভিনব লোকায়ত উৎসবে পরিণত হয়েছে।তবে অনেকেই বলে থাকেন যে নবদ্বীপে একাধিক মূর্তি প্রতিমা দেখা যায়। পাড়ায় পাড়ায় পুজোর আয়োজন বাড়িতে বাড়িতে অতিথি সমাগম আলোর রোশনাই ব্যাঞ্জো তাশা ঢাক ঢোল সানাই ব্যান্ড পার্টির বাজনার পাশাপাশি মাইকের বিভিন্ন ধরনের গান আর বর্তমানে উঠতি যুবক যুবতী মহিলাদের তালে তালে রাস নৃত্য শহরকে উজ্জীবিত করে তোলে। তাই রাস হচ্ছে বৈষ্ণবীয় ভাবধারার এক উৎসব।বর্তমানে রাস হচ্ছে একটি সংমিশ্রণ মিলনক্ষেত্র।আজও প্রতি দিন নবদ্বীপের পরমা তলায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত ১৮২৫ সালে দুটি মন্দির একদিকে ভবতারণ মন্দির অন্যদিকে ভবতারিণী শিবমন্দির রয়েছে।কথিত যে প্রথম এলানি কালীর শুভ সূচনা হয় শক্তিরূপে।তাই নবদ্বীপ শহরে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেছে তার জোরকদমে প্রস্তুতি।
নবদ্বীপ শহরের ফাসিতলা আর বিদ্যুৎ সঙ্গ পরিচালিত গঙ্গা মাতা পুজোর প্রস্তুতি লক্ষ্যণীয়।কমিটির সদস্যরা ইতিমধ্যেই রাসের সমস্ত ধরনের পটা ফেলে চক্রাকার গাড়ির চাকা ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।তেঘরী পাড়ার বড় শ্যামা মায়ের মন্ডপ তৈরীর জন্য বাস এবং প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।তবে প্রতিদিন রাসের বিবর্তন ঘটছে এখন রাসে প্রথম দিন সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত প্রতিটি পুজো কমিটি থেকে শোভাযাত্রা বের করে শহর পরিক্রমা করে আর তাসা ব্যান্ড জনের সঙ্গে উন্মত্ত হারে মহিলারা নাচ করে যান রাস উপলক্ষে।রাশির নানা বিধ বদল ঘটে গিয়েছে নবদ্দীপ শহরে।রাসের উৎসবের কদিন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে ইতিমধ্যেই রাসের মূর্তির বিশাল আকার আয়তন অনেকটাই কমানো হয়েছে।তবে নবদ্বীপের আছে সব এখন থিম পুজোয় অনেকে মেতেছে।নবদ্বীপ শহরের মালঞ্চ পাড়া ইয়ং ব্লাড ক্লাব জনপ্রিয় ক্লাব থিম পুজোয় মাতে এছাড়াও মুক্তি সূর্য ক্লাব থিম পুজো মেটে পুরস্কার জিতে নেয় প্রতিবছর।এছাড়াও শহরের সরকার পাড়ার নটরাজ গঙ্গা মাতা দর্শকের ভিড় সব থেকে বেশি হয়।তাই নবদ্বীপ শহরে বাস উপলক্ষে ইতিমধ্যেই গেস্ট হাউস বুকিং করার পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভিড় হয় মায়াপুর ইসকন মন্দিরে ও।নবদ্বীপের রাস উপলক্ষে কয়েক লক্ষ মানুষের ভিড় হয় বলে জানা গিয়েছে।নবদ্বীপ থানা সূত্রে জানা গিয়েছে যে অনুমোদিত রাসের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক কিন্তু এই রাস অনুমোদন ছাড়াও আরো অনেক বেশি পুজো হয়ে থাকে শহর এবং শহরের আশপাশ এলাকায়।
নবদ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক সুবীর কুমার পাল জানিয়েছেন যে রাস উৎসব শান্তিপূর্ণ করতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দেয়া হয়েছে।কিছুদিন পরেই একটি সমন্বয় সভা ডাকা হবে এবং রাস উপলক্ষে বহিরাগতরা যাতে কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন না হয় সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একটি শান্তিপূর্ণ সুন্দর রাস উৎসব উপহার দেওয়ার জন্য সকলের কাছে আবেদন রাখা হচ্ছে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584