উজ্জ্বল দত্ত, কলকাতাঃ
নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিতে জখম সিপিআই(এম) যুব নেতা, ডিওয়াইএফআই কর্মী মইদুল ইসলাম মিদ্যার মৃত্যু। সোমবার সকালে কলকাতার এক নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৩১।
নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর জখম হন বলে অভিযোগ উঠেছিল বাম সংগঠনের তরফে। নার্সিংহোম সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুলিশের লাঠির আঘাতে প্রস্রাব দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায় সেদিন। লাঠির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মইদুল ইসলাম মিদ্যা। এরপর থেকেই তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
সিপিআই(এম) নেতা ও ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই (এম) ফুয়াদ হালিম বলেন, “১৩ তারিখ সকালে জানা যায় কিডনি ফেলিওর হয়েছে। এগারো তারিখে নবান্ন অভিযানে গিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাত পেশির উপর পড়ায়, পেশি ফেটে যায়। সেখান থেকে যে প্রোটিন বের হয়। তা কিডনিকে ব্লক করে দেয়।প্রথম দিন থেকে তদারকিতে ছিল। রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারি, সোডিয়াম নেমে গিয়েছে, পটাশিয়াম বেড়ে গিয়েছিল। ১৪ তারিখ আরও অবনতি ঘটে। রবিবার রাত্রে সামান্য ভাল হয়েছিল। কিন্তু ফুসফুসে জল জমতে শুরু করে। কিন্তু ১৫ তারিখ সকালে সব লড়াই শেষ করেন মইদুল ইসলাম মিদ্যা।”
বাঁকুড়ার কোতলপুর শহরের গোপিনাথপুরের বাসিন্দা মইদুল ইসলাম মিদ্যা। পেশায় মইদুল একজন অটো চালক। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়া স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে।
মৃ্ত্যুর খবর পেয়ে ডিওয়াইএফআইনেতা কলতন দাশগুপ্ত বলেন, “জালিয়ান ওয়ালাবাগের মতো ঘটনা। চাকরি চাইতে গিয়ে কলকাতার রাস্তায় খুন হতে হয়েছে প্রশাসনের হাতে।“ মইদুলের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিধানসভার বিরোধীদল নেতা আব্দুল মান্নান বলেন,”তৃণমূল সরকারের পুলিশ মইদুলকে পিটিয়ে খুন করেছে। এর বিচার চাই।“
আরও পড়ুনঃ হাই ভোল্টেজ ফেব্রুয়ারি ! ফের বঙ্গ সফরে শাহ – মোদী
বাম পরিষদীয় দল নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা একটা খুন। বাঁকুড়া গ্রামের ছেলে চাকরি চাইতে এসেছিলেন। বুকে-পিঠে- ঘিরে মেরেছে। সরকার তার ইতরতার সীমা ছাড়িয়েছে। খুনি সরকার। মানুষের কথা শোনার মতো কোনও সুযোগই রাখে না এই সরকার।“
প্রসঙ্গত, বাম যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার চলে ১১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) । রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ডোরিনা ক্রসিং এলাকা। কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল ডোরিনা ক্রসিংয়ে আসতেই পুলিশ বাধা দেয় । তারই জেরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় মিছিলকারীদের। এরপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।
আরও পড়ুনঃ কান্দিতে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল কর্মী
এছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয় এবং জলকামান ছোড়া হয়। লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন বেশ কিছু বাম কর্মী। কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। আন্দোলনকারীদের আটকানোর জন্য সবরকমের ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। হাওড়াতেই মোট ৬ টা জায়গায় ব্যারিকেড করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বাম ছাত্রযুবদের ডাকা নবান্ন অভিযানে পুলিশের লাঠিচার্জ প্রসঙ্গে কলঙ্কিত জালিয়ানওয়ালাবাগের কথা বলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু। এরপর বামেদের ডাকে শুক্রবার রাজ্য জুড়ে পালিত হয়েছে ১২ ঘণ্টার বনধ।
নবান্ন অভিযানের পর বিমান বসু বলেন, “গতকাল যা ঘটেছে তা ঘটা উচিত ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে পুলিসের পক্ষ থেকে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা হল যেন যুদ্ধক্ষেত্র। খানিকটা যেন প্রতীকী জানিয়ানওয়ালাবাগ। নির্মম ভাবে কয়েকশো ছাত্রযুবর উপর হামলা করা হল। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। অন্যান্য বাম দল, বাম ছাড়া অন্য দল এবং কংগ্রেস সকলের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দ্রুত প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই।“
সোমবার সকালে মইদুল ইসলাম মিদ্যার দেহ বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কলকাতা পুলিশ মর্গে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভিডিওগ্রাফি করে মইদুলের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584