মাওবাদী বিস্ফোরণকে পিছনে ফেলে নবরূপে বনবাংলো তৈরির উদ্যোগ কাঁকড়াঝোরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ

মাওবাদীরা উড়িয়ে দেওয়ার ১৫ বছর পর বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে পর্যটকদের জন্য ফের বনবাংলো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।

জেলা প্রশাসনের দাবি, নতুন বছরেই পর্যটকরা ফের নতুন বনবাংলোয় রাত কাটাতে পারবেন। কাঁকড়াঝোরে বনবাংলো তৈরি হলে জেলার পর্যটন ব্যবস্থার আরও উন্নতি ঘটবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কাঁকড়াঝোরের পাশাপাশি চাকাডোবা এলাকায় পর্যটকদের জন্য একটি বাংলো তৈরি করা হচ্ছে। দু’টি বাংলো তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা।

প্রায় ৪৫ বছর আগে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরের টিলার উপর বন দপ্তরের উদ্যোগে একটি দু’কামরার বন বাংলো তৈরি করা হয়েছিল। দলে দলে পর্যটক কাঁকড়াঝোর বেড়াতে আসতেন। ওই বনবাংলোয় থাকার জন্য বনদপ্তরের কাছে আবেদনের পাহাড় জমত।

সত্তরের দশকে চিন্ময় রায় অভিনীত ‘চার মূর্তি’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল কাঁকড়াঝোরের ওই বনবাংলোয়। ২০০৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে কাঁকড়াঝোরের কাছে দলদলির জঙ্গল রাস্তায় ল্যান্ডমাইন ফাটিয়ে পুলিশের গাড়ি উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা।

আরও পড়ুনঃ বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্য শিবির খড়্গপুরে

ওই ঘটনার পর থেকে জঙ্গলমহলে পর্যটকদের আনাগোনা অনেক কমে যায়। ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর মাওবাদীদের গণমুক্তি গেরিয়া ফৌজের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তারা কাঁকড়াঝোরের বনবাংলোয় হামলা চালায়। ল্যান্ডমাইন ফাটিয়ে ঐতিহ্যবাহী পুরানো বাংলোটি উড়িয়ে দেওয়া হয়।

কাঁকড়াঝোরে বন উন্নয়ন নিগমের আরও একটি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র ছিল। সেটিতেও হামলা চালায় মাওবাদীরা। ক্ষতিগ্রস্ত ওই প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রটি মেরামত করে পরে সিআরপিএফ ক্যাম্প করা হয়। এখনও সেখানে সিআরপিএফ ক্যাম্প রয়েছে।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর জেলাজুড়ে পর্যটনের একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ হলেও নিরাপত্তার কারণে কাঁকড়াঝোরে বনবাংলো তৈরি করার ঝুঁকি নেয়নি সরকার।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও জেলাশাসক আয়েষা রানি এ কাঁকড়াঝোর মাওবাদীদের বিস্ফোরণে নষ্ট হয়ে যাওয়া বনবাংলোস্থল পরিদর্শন করেন। তারপরই কাঁকড়াঝোরে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয় জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতের চতুর্দশ অর্থ কমিশনের ফান্ড থেকে কাঁকড়াঝোরে ও চাকাডোবায় নতুন বাংলো তৈরি হবে। বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি ইতিমধ্যে বাংলোর নকশা তৈরি করেছেন।

জানা গিয়েছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে টেন্ডার ডেকে দু’টি বাংলোর কাজ শুরু হবে। দু’টি বাংলোতেই তিনটি রুম, বাথরুম, ড্রয়িং রুম, কিচেন ও রেস্ট রুম থাকবে।

চাকাডোবা এলাকায় বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পিছনে বাংলোটি তৈরি হবে। কাঁকড়াঝোরে ছ’জন ও চাকাডোবায় ছ’জন পর্যটক থাকতে পারবেন।