শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
শরীরে সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর হলেও এখন করোনার ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে তাদের কাছে মুশকিল আসান স্বাস্থ্য দফতরের নয়া নির্দেশ। এখন থেকে হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও প্রেসক্রিপশন রেফারেন্সে টাকা দিয়ে বেসরকারি ল্যাবে করা যাবে করোনা পরীক্ষা! তবে এতদিন ইচ্ছে হলেই করোনা পরীক্ষা করা যেত না। কিছুদিন আগে কাঁকুড়গাছির একটি ল্যাব রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই ৩০০০-৩৫০০ টাকার বিনিময়ে করোনা টেস্ট। তাঁদের দাবি ছিল, তাঁরা অবিলম্বে রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু ফুলবাগান থানার নজরে বিষয়টি আসতেই তা রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয় এবং সরকারি নির্দেশেই ওই ল্যাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে রাজ্যে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে রাজ্য সরকার স্বীকৃত ৪৩ টি ল্যাব একদিনে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারের কাছাকাছি টেস্টের বেশি করা হয়ে উঠছে না। তাই করোনা হলে একেবারে হাসপাতাল নির্ভরতা ছেড়ে আইএমসিআরের নির্দেশ মেনে চলা কিছু বেসরকারি ল্যাবগুলিকেও এবার ছাড়পত্র দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পড়ুনঃ চাইলে দল ছাড়তে পারেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া বার্তা মমতার
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ অনুযায়ী, বাড়িতে থাকলেও কারোর যদি মনে হয়, তিনি করোনা পরীক্ষা করবেন, তবে এখন থেকে তা করা যাবে। রাজ্যের যে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা হয়, সেখানকার বহির্বিভাগ বা ও পি ডি বা আউটডোরে কেউ চিকিৎসক দেখানোর পর সেই চিকিৎসক যদি করোনা পরীক্ষার কথা লিখে দেন, তবে সেই হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব।
এছাড়াও কলকাতার বেসরকারি ল্যাবরেটরি, সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিউটাউন এবং এলগিন রোড শাখায় চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে করোনা পরীক্ষার উল্লেখ থাকলে সরাসরি করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব। নমুনা পরীক্ষার একদিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এমনকি সাড়ে চার হাজার টাকার নির্ধারিত খরচের থেকে অনেক কমে মাত্র ২১০০-২৮০০ টাকায় এই করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নভেল করোনা পরীক্ষা করা হবে।
আরও পড়ুনঃ ভর্তি হওয়া রোগীর করোনা কসবায় সিল নার্সিংহোম, আলিপুর আদালতেও ২ বিচারকের সংক্রমণ
সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আইসিএমআর এর নিয়ম অনুযায়ী আমরা রাজ্য সরকারের নির্দেশে সাধারণ মানুষের নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রামিত কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত।’ তিনি জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কোন বেসরকারি আউটডোর কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে নমুনা পরীক্ষার উল্লেখ থাকতে হবে। তাহলেই সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নমুনা নিয়ে সেই নমুনা পরীক্ষা করে একদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে। শুধু রিপোর্ট দেওয়াই নয়, সরকার নির্ধারিত যে খরচ তার থেকে অনেক কম খরচে সেই পরীক্ষা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে করোনা পজিটিভ হওয়া রোগী সরকারি নির্দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও এই নির্দেশবলে তাদের বাড়ির মানুষেরা চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এলেই করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন।
গোটা বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের কোনও উপসর্গ নেই। সংক্রমণের ফলে তাদের কোনও ক্ষতি না হলেও অন্যদের দেহে করোনা যাতে সংক্রামিত না হয়, তাই বেশি সংখ্যায় পরীক্ষা করানোর ওপর জোর দিচ্ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গে এতদিন করোনা পরীক্ষা পুরোটাই সরকারি নিয়ন্ত্রণে ছিল। অর্থাৎ সরকারি চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর অনুমতি থাকলে তবেই হচ্ছিল পরীক্ষা। এবার সেই ফাঁস খুলে ছাড় দেওয়া হল বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলিকেও। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে বলে আশা স্বাস্থ্যকর্তাদের।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584