ফুলবাগান হত্যাকান্ডে খুনের পরিকল্পনা-সহ ৭০ পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার

0
93

শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ

ফুলবাগানের রোমাঞ্চকর হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল।পুলিশ জানিয়েছে, আত্মঘাতী অমিতের পাশ থেকে উদ্ধার হল ৭০ পাতার সুইসাইড নোট। তাতেই এই ঘটনার নেপথ্য রহস্য অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। রীতিমত ঠাণ্ডা মাথায় বহুদিন ধরে পরিকল্পনা মাফিক সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীকে খুন করে এসে তারপর কলকাতায় শাশুড়িকে খুন করে। শ্বশুরের দিকে গুলি চালালেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান।

House | newsfront.co
ঘটনাস্থল। নিজস্ব চিত্র

সুইসাইড নোটটি দেখামাত্রই সোমবার রাতেই বেঙ্গালুরু পুলিশকে সতর্ক করে কলকাতা পুলিশ। বেঙ্গালুরুর ডিসিপি (হোয়াইটফিলড) নিজেই টিম নিয়ে ছুটে যান শিল্পী আগরওয়ালের বাড়িতে। কিন্তু ততক্ষণে যা দুর্ঘটনা ঘটার ঘটে গিয়েছে। সেখানে শিল্পীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। জানা গিয়েছে, স্ত্রীকে খুনের পর সোমবারই বিমানে করে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় ফেরেন অমিত। তারপরে শ্বশুর-শাশুড়িকে খুন করতে চলে আসেন ফুলবাগানে। তারপরেই শাশুড়িকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয় অমিত।

Aksara Gold | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

ফুলবাগান কাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথমেই মৃত অমিত-শিল্পীর সন্তানের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। অমিতের আদি বাড়ি উত্তরপাড়ার স্টেশন রোডে। এই তথ্য জানতে পেরেই উত্তরপাড়ায় অমিতের দাদার বাড়িতে খোঁজ করেন তদন্তকারীরা। সেখানেই খোঁজ মেলে অমিত-শিল্পীর সন্তানের। সোমবার স্ত্রীকে খুনের পর বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা বিমানে ফিরে প্রথমে উত্তরপাড়া গিয়েছিল অমিত। ছেলেকে সেখানে দাদার কাছে রেখে শ্বশুরবাড়ি আসে সে।

আরও পড়ুনঃ ফের শহরে আত্মহত্যা! এবার দমদমে মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী প্রৌঢ়

এদিকে সোমবার সকালে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রী শিল্পী আগরওয়ালকে খুনের আগে ব্যাপক বচসা এবং ধস্তাধস্তি হয় অমিত আগরওয়ালের সঙ্গে। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েই সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ডের মহাদেবপুরমের অভিজাত ব্রিগেড মেট্রোপলিস অ্যাপার্টমেন্টে ছুটে যান বেঙ্গালুরুর ডিসিপি। সেখানেই বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় শিল্পীর দেহ। তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকেই পুলিশের চোখে পড়ে গোটা ফ্ল্যাট লন্ডভন্ড। গোটা ঘরে মারপিট, ধস্তাধস্তির চিহ্ন। ফ্ল্যাটে ঢোকার মুখেও মারামারির চিহ্ন। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শিল্পী হয়তো অমিতকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে রান্নাঘরেও সমস্ত জিনিস পত্র ছড়ানো ছেটানো পেয়েছে পুলিশ। রয়েছে ভাঙাচোরা তুবড়ানো বাসনপত্র। শোওয়ার ঘরের কাছে শিল্পীর দেহ পায় পুলিশ।

তবে শিল্পীকে গুলি করে নয়, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। যদিও কী দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টান্ট অমিত এবং শিল্পীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই সম্পর্কের অবনতি হয়। এরপর শিল্পী বেঙ্গালুরুতে থেকে যান আর অমিত কলকাতায় চলে আসেন। বেঙ্গালুরু আদালতেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। তাই মামলার সময় সেখানে যেতে হত অমিতকে।

আরও পড়ুনঃ অগ্নিমূল্য,টানা ১৭ দিন ধরে পেট্রোল-ডিজেল দাম বেড়েই চলছে

পুলিশ শিল্পীর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, অমিত এবং শিল্পীর ছেলে থাকত শিল্পীর সঙ্গে। কিন্তু নিজের ছেলেকে খুব ভালবাসতেন অমিত। তাই সেই ছেলেকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করছিলেন। মা হওয়ার সুবাদে শিল্পীর তাতে সায় ছিল না। তাই ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেঙ্গালুরুতে যেতে হত অমিতকে। অমিত সেখানে গেলেই শিল্পীর সঙ্গে বচসা হত। তার মধ্যে ছেলের অধিকারের কথাও উঠত বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

স্ত্রীকে খুনের সময় অমিতের ছেলে ফ্ল্যাটে ছিল না। তাকে অমিত বলেছিলেন, মা কলকাতায় গিয়েছেন জরুরি কাজে। সেই কথা বলেই ছেলেকে নিজের সঙ্গে কলকাতায় নিয়ে আসে অমিত। বেঙ্গালুরুর ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে খুন করে সোমবার বিমানে ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় ফেরেন। ছেলেকে হুগলির উত্তর পাড়ায় নিজের ভাইয়ের কাছে রেখে ফুলবাগানে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। সেখানেও প্রথমে শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়া ও শাশুড়ি ললিতা ঢনঢনিয়ার সঙ্গে ডিভোর্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বচসা শুরু করেন।

তবে তিনি ইতিমধ্যেই স্ত্রীকে খুন করে এসেছেন, তা শ্বশুর-শাশুড়িকে জানতে দেননি। তারপরই শাশুড়ি ললিতাকে গুলি করে খুন করেন অমিত। গুলি চালান শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়ার দিকেও। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি বেঁচে যান। তারপর নিজেও আত্মহত্যা করেন অমিত। তবে তিনি কলকাতায় এসেই আগ্নেয়াস্ত্রটি কোথা থেকে জোগাড় করেছিলেন সে বিষয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। তবে উদ্ধার হওয়া পিস্তল পরীক্ষা করে গোয়েন্দাদের অনুমান, দু’ রাউন্ড গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল।

তদন্তকারীরা অমিতের লেখা চিঠির সূত্র ধরেই গোটা ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করছেন। স্ত্রী ও শ্বশুর শাশুড়ির প্রতি আক্রোশ এবং ছেলেকে নিয়ে টানাপোড়েন-সহ সমস্ত খুনের পরিকল্পনা-সহ আত্মহত্যার কথা এই চিঠির মাধ্যমেই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। প্রতিবেশীদের বয়ানের পাশাপাশি এই চিঠির সূত্র ধরেই বাকি রহস্যের জট খোলা সম্ভব হবে আশা গোয়েন্দাদের।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here