মনিরুল হক,কোচবিহারঃ
আরও অনেকের কাছেই পথ খোলা ছিল।কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন তিনি।আর তাই বাজি জিতে তিনি আজ ‘সিকান্দর’। তিনি বলতে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে সদ্য জয়ী বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক।এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসেই ছিলেন নিশীথ। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদে।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর সাথে তাঁর সখ্যতাও নাকি ছিল তুমুল ভাবে।কোচবিহারের দিনহাটায় ভেটাগুরি গ্রামের বাসিন্দা নিশীথ যুব নেতা হিসেবে উঠে আসতেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের সাথে বিরোধ চূড়ান্ত আকার ধারন করে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দলে থেকেও বিক্ষুব্ধদের নির্দল প্রার্থী করে অনেককেই জিতিয়ে আনেন।তাঁর জিতিয়ে আনা নির্দল জনপ্রতিনিধিরাই দিনহাটায় একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নেয়।
আরও পড়ুনঃ কোচবিহারে জয়ী নিশীথ প্রামাণিক
পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে মুখ্য ভূমিকা হয়ে দাঁড়ায়।দলীয় ওই নেতৃত্বের সাথে লড়তে গিয়ে সংঘর্ষ, খুনোখুনির ঘটনাও হতে থাকে দিনহাটা জুড়ে।একসময় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। তারপর কিছুদিন অপেক্ষা করেই লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।
কিন্তু তখনও ঠিক হয় নি কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কে হচ্ছেন? ওই সময় বিজেপির অনেক জেলা নেতাই জানিয়েছিলেন, একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির লড়াকু নেতার খোঁজ চলছে। কোচবিহার তৃণমূলে তখন কাকা অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে গোষ্ঠী লড়াইয়ের জেরে ভাইপো অর্থাৎ বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ পার্থ প্রতিম রায়ের ফের প্রার্থী হওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।আর বিজেপি নেতাদের অনেকের ইঙ্গিতে শেষ পর্যন্ত তৃণমূল প্রার্থী না করলে সেই তাঁকেই প্রস্তাব দেওয়ার আভাস দিচ্ছেন।
এই জল্পনার মধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হয়ে যায়। পার্থ প্রতিম রায়কে সরিয়ে কোচবিহার কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস সদ্য ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে আসা পরেশ অধিকারীকে প্রার্থী করে।তৃণমূল নেত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, ‘পার্থ দলে থাকলে তাঁকে পরে ভাবা যেতে পারে।’ এরপর তৃনমূলেই থেকে গিয়েছেন পার্থ। পরে বিজেপি প্রস্তাব দিয়েছিল কিনা? বা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল কিনা? তা এখন কার প্রাসঙ্গিক নয়।
তবে এবার আর লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া হয়ে ওঠে নি তাঁর।বিজেপি তৃণমূল ছেড়ে আসা নিশীথ প্রামাণিককেই কোচবিহার কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। প্রথম দিকে দলীয় কর্মী সমর্থকদের কেউ কেউ আপত্তি জানিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখালেও শেষ পর্যন্ত মেনে নেন সকলে। তারপর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পরেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসেন তাঁর হয়ে প্রচারে। কোচবিহার রাসমেলার মাঠে সভা করেন। তৃণমূলের ডাকাবুকো নেতাদের সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেন।ভোটের দিন গোটা কেন্দ্র জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়ে ভোট করান। আর গতকাল গণনা শেষে বিজয়ের মুকুট পড়েন সেই নিশীথ প্রামাণিক।
বয়সে তরুণ, অল্প সময়ে লড়াই করে রাজনীতিতে উঠে আসা, দল পাল্টে লোকসভার টিকিট পেয়ে যাওয়া আর শেষ অব্দি সাংসদ। এরপর আরও কিছু অপেক্ষা করছে কিনা, তা সময় বলবে। তবে জয়ের পরেই নিশীথকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘যো জিতেগা ওহি সিকেন্দার।’
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584