ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। এক সময়ে দৈনিক সংক্রমণ ৪ লাখ এবং দৈনিক মৃত্যু সাড়ে ৪ হাজারেও পৌঁছেছে। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ মে পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৬৯ লক্ষ। করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ ৭ হাজার মানুষ।
এই তথ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের দাবি, কোভিড পরিস্থিতির যে পরিসংখ্যান সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয়েছে, প্রকৃত আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা তার চাইতে অনেক বেশি। তাঁদের বক্তব্য, তথ্য নথিভুক্তিকরণের পদ্ধতিতে রয়েছে গোলমাল।
এছাড়াও ভারতে কোভিড পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম হওয়ায় সামনে আসছে না প্রকৃত পরিসংখ্যান। ভারতে বড় রকমের উপসর্গ না থাকলে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না বহু মানুষ। শুধুমাত্র ভারতে নয় এরকম ঘটনা ঘটছে বিশ্বের অনেক দেশেই, দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
আরও পড়ুনঃ দুবার দুই ধরনের টিকা! চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ যোগীরাজ্যে
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লক্ষ্য করা গিয়েছে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালগুলিতে জায়গা মিলছে না, মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই মারা গিয়েছেন এমন সংখ্যা প্রচুর। গ্রামের অবস্থা আরোই ভয়াবহ, সঠিক ভাবে তথ্য নথিভুক্তই হয়নি। করোনায় মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছেনা, মৃত্যুর কারণ সঠিক ভাবে খতিয়ে দেখাও হচ্ছে না।
ভারতে তিন দফায় হওয়া সেরো সার্ভের ভিত্তিতে দেশের প্রকৃত কোভিড পরিসংখ্যান কেমন হতে পারে, তার সম্ভাব্য তিনটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস। প্রথম সেরো সার্ভে হয়েছে ১১ মে থেকে ৪ জুনের মধ্যে, দ্বিতীয়টি হয়েছে ১৮ অগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এবং তৃতীয়টি হয় ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি।
প্রতিটি সেরো সার্ভেতেই দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ৩০ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। প্রথম সমীক্ষার ফলে দেখা যায় নথিভুক্ত পরিসংখ্যানের তুলনায় প্রকৃত পরিসংখ্যান ২৮.৫ গুণ বেশি। দ্বিতীয় সমীক্ষায় প্রকৃত পরিসংখ্যান নথিভুক্ত তথ্যের চাইতে ১৩ গুণ বেশি এবং তৃতীয় সমীক্ষায় তা ছিল ২৬.১ গুণ বেশি। মোট সংক্রমিতের সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর হারও। তার বড় কারণ, রোগীর চাপে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোই ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ দেশে দৈনিক সংক্রমণ দুই লক্ষের বেশি, মৃত্যু আবারও পেরোল চার হাজারের গণ্ডি
এই তিনটি সেরো সার্ভের ভিত্তিতে নিউ ইয়র্ক টাইমস যে তিনটি সম্ভাব্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে হিসাব একটু কম করেই ধরা হয়েছে। প্রথম প্রকৃত সম্ভাবনার ক্ষেত্রে, সরকারি হিসাবের তুলনায় মোট সংক্রমিতের প্রকৃত সংখ্যা ধরা হয়েছে ১৫ গুণ বেশি। অর্থাৎ সেই হিসাব অনুযায়ী সংখ্যার বিচারে তা দাঁড়াচ্ছে ৪০ কোটি ৪২ লক্ষ।
মোট সংক্রমিতের ০.১৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন হিসাব ধরলে দেশে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লক্ষ। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় ২ গুণ বেশি। দ্বিতীয় সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রকৃত হিসাব ২০ গুণ বেশি ধরা হয়েছে, সেক্ষেত্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৫৩ কোটি ৯০ লক্ষ। মোট সংক্রমিতের মধ্যে মৃত্যুর হার ০.৩০ শতাংশ ধরা হয়েছে, সেক্ষেত্রে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে ১৬ লক্ষ।
আরও পড়ুনঃ করোনার জেরে এবার স্থগিত হল জেইই অ্যাডভান্সড ২০২১ পরীক্ষা
তৃতীয় সম্ভাবনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ধরে হিসাব করে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা ভয়ঙ্কর। তৃতীয় ক্ষেত্রে প্রকৃত হিসাব যদি সরকারি তথ্যের তুলনায় ২৬ গুণ বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা হবে প্রায় ৭০ কোটি এবং মৃতের সংখ্যা হতে পারে ৪২ লক্ষ।
সেক্ষেত্রে সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর বিশেষ সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত নিবন্ধে যে দাবি করা হয়েছিল, অর্থাৎ ল্যানসেট-এর মতে ভারতে করোনা অতিমারীতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০ লক্ষেরও বেশি, তা কিন্তু মিলেই যাচ্ছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্ভাব্য প্রকৃত পরিসংখ্যানের সঙ্গে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584