সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাঃ
সংসার জীবনে যারা সন্তান সন্ততি থেকে বঞ্চিত,অবহেলিত, লাঞ্ছিত,যাদের আশ্রয় হয়েছে রাস্তায় বা কারুর ঘরের দরজায় কিম্বা ত্রিপল টাঙানো ঘরে অথবা বৃদ্ধাশ্রমে- সেই সমস্ত বয়স্ক জুড়ি বা স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে প্রজাতন্ত দিবসে শ্রদ্ধা জানানো,পাশাপাশি শাল প্রদান ও পিকনিকে আয়োজন করা হয় নোদাখালি থানার উদ্যোগে।
সংসারের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জীবনের প্রতিকূলতার সাথে লড়তে লড়তে সাংসারিক জীবনে ওটা পড়া, সুখ দুঃখ হাঁসির মধ্যে দিয়ে পথ চলতে চলতে জীবনের অন্তিম সময়ে তারা উপস্থিত। প্রভাতের রবি অস্তাচলে, ছাদের ব্যালকুনিতে বা নদীর কুলকুল শব্দের কাছে চোখের পলক ফেলার সাথে সাথে নিজের জীবনের স্মৃতি বিজড়িত দিন গুলি ভেসে ওঠে একে অপরের দিকে হাতে হাত রেখে চেয়ে থাকা ,ধীর গতিতে কিছু ব্যাকালাভ বা বাদাম খাওয়া ,চানা খাওয়া এছাড়াও কতো হাঁসি গল্প খুনসুটি স্মৃতির অকপটের মতো ভেসে ওঠে সেই সমস্ত স্মৃতি ।
আরও পড়ুন: গৃহবধূকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার অভিযোগ শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে
আবারও হয়তো কোনো কোনো ব্যাক্তি জীবনে বেশির ভাগ সময়ইটা সংসারের দিকে বা আর্থিক উপার্জনের দিকে দিয়ে দিয়েছেন। ফিরে দেখার সময় টুকু হয়তো পাননি নিজেকে নিয়ে ভাববার বা যৌবনের দিনগুলি ফিরে পাবার। আর যখন বয়সের ভারে নানান রোগে জর্জরিত, জীবনের অন্তিম মুহুর্তে সেই সমস্ত মানুষ গুলোর মানুষের মনের মনি কোঠায় জমে থাকা জঠরের মতো স্মৃতি গুলিকে ফিরে দেখানোর চেষ্টা করে চলেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার প্রত্যন্ত একটি থানা নোদাখালি থানা ।
জীবনের পড়ন্ত বেলায়,বয়সের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে – একটু ফিরে দেখানো বয়ঃসন্ধি কালের দিকে। হ্যাঁ
বেশ কিছু আশি থেকে একশো চার বছর বয়সি কাপলদের নিয়ে হুগলি নদীর চরে হয়ে গেল পিকনিক । নোদাখালির থানার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এমনই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে নিয়ে এসে চলে পিকনিক । কথায় বলে কু সন্তান হয়, কু মাতা পিতা হয়না- মুখ ফুটিয়ে বলতে গিয়েও যেন একটু জড়িয়ে যায় উননব্বই বছরের নোয়াজেস আলি মোল্লার ।
উনব্বিই বছরের নোয়াজেস আলি মোল্লা বলেন, “জীবনে অনেক স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু কোনটাই পূরণ হয়নি। বিশেষ করে বয়সের শেষ সময়ে মৃত্যুর পথ যাত্রী হয়ে এই ভাবে দুইজনে আসতে পারবো, কল্পনা করতে পারিনি। এসে খুব ভালো লাগছে। আমার তিন ছেলে,পাঁচ মেয়ে। ছেলেরা কেউ তেমন ভাবে দেখে না আমাদের দুজনকে।”
লক্ষন বাগ, বয়স ছিয়াশি, বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার নোদাখালি থানার সোনামুখিতে। “এক ছেলে, তাও সে আমাদের দেখে না। আমি ও আমার স্ত্রী আলাদা খাই।আমি একটি নার্সারি বাগানে সত্তর টাকা রোজে কাজ করে দিন যাপন করি।এখানে এসেছি, যেতে ইচ্ছে করছে না। জীবনে কোনদিন ভাবতে পারিনি এমন জায়গা আসবো।”
আবার এর মধ্যে কেউবা আনন্দে কেঁদে ফেললেন, দুই চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে গেল । আবারও কেউ বা গানে মেতে উঠলেন।আবার কেউ তৎকালীন প্রজাতন্ত্র দিবসের কথা সকল পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ভাগকরে নিলেন।এমন কিছুর সাক্ষী হয়ে রইল নোদাখালি থানার অন্তর্গত বারোটি গ্রাম। পঞ্চায়েত এলাকা থেকে এই সমস্ত বয়স্ক মানুষদের সঙ্ঘবদ্ধ করেছিল নোদাখালি থানার পুলিশ । তারা সকলেই আইসি মৈনাক ব্যানার্জী সহ ডায়মন্ডহারবার জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ যানান। ডায়মন্ড হাবরার জেলা অ্যাডিশানাল সুপার কাজি হাফিজুল বলেন , ” আমদের যারা হাত ধরে পথ চলানো শিখিয়েছেন ও কর্ম জীবনের জন্য সক্ষম করে তুলেছেন সেই সমস্ত মানুষকে আমরা ভুলতে বসেছি। তাদের একত্রিত করার একটি প্রয়াস করলো আমাদের নোদাখালি থানার আইসি মৈনাক ব্যানার্জী ডায়মন্ড হাবরার জেলা পুলিশের ব্যানারে। আমরা অত্যন্ত গর্বিত এই সমস্ত মানুষ গুলোর সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে। পাশাপাশি তাঁদের ফেলে আসা যৌবনকে একটু মনে করিয়ে দেওয়া। এই অনুষ্ঠান আগামী দিনে আমরা আরো বড় করে করার চেষ্টা করবো ।”
আজ এই অনুষ্ঠানে সমস্ত কিছুই করছে পুলিশ প্রশাসন- রান্না থেকে পাতা ফেলা।আজকের মেনুতে ছিলো – ভাত, সুকতো ,ডাল, বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, চিংড়ি মাছ, কাতরা মাছ, চাঁটনি, পাঁপড়, মিষ্টি, দই ।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584