ঐক্যের ডাকে অপবিজ্ঞানের উন্মাদনা, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ

0
218

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার

corona test | newsfront.co
করোনা নির্ণয়ের পরীক্ষা। ছবিঃ বিবিসি

দেশবাসীকে ‘ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা’ দিতে ঘরে ঘরে বিজলিবাতি নিবিয়ে মোমবাতি, প্রদীপ, টর্চ এবং মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালানোর নিদান দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সঙ্গত কারণেই এই নিদানের কার্যকারিতা সম্পর্কে যুক্তিবাদী-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থাগুলি প্রশ্ন তুলেছেন।

medical test | newsfront.co
রোগ নির্ণয়। ছবিঃ টুইটার

সমাজ মাধ্যমের দেওয়ালে আছড়ে পড়েছে প্রবল সমালোচনা। আর তার মোকাবিলা করতেই মোদীজি নির্দেশিত কর্মসূচির ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি পোস্ট সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। অর্থাৎ মোদিজীর ঐক্য-প্রচেষ্টার মুখে ছাই দিয়ে দেশবাসী বিজ্ঞানমুখী ও অ-বিজ্ঞানমুখী — এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন !

candle | newsfront.co
প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া জ্বলছে মোমবাতি। নিজস্ব চিত্র

মোদীজির প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সমর্থনে দেওয়া ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যায় যা বলা হয়েছে তার মোদ্দা কথাটি হলো, ৫ এপ্রিল দ্বাদশী তিথিতে রাত ন’টা থেকে 9 মিনিটের জন্য চন্দ্র একবারে চার-পঞ্চমাংশ প্রকাশিত থাকবে। চন্দ্রের আলোক কণা মোমবাতি, টর্চ, ফ্ল্যাস লাইট দ্বারা সৃষ্ট আলোক কণার সাথে ‘হাইপথেটিক্যাল মাধ্যমে মিলিত হয়ে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করবে।’

diya | newsfront.co
জ্বলছে প্রদীপ। নিজস্ব চিত্র

শুধু করোনা নয়, যেকোন ক্ষুদ্র জীব( অর্থাৎ জীবাণু) উক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছে আসা মাত্রই অক্কা পাবে। এই ব্যাখ্যার পর বলা হয়েছে — ” আসুন এই রবিবার করোনার বিরুদ্ধে আমরা নিজেদের সামনের বারান্দায় বা ব্যালকনিতে দূরত্ব বজায় রেখে কোনোরকম আলোর বস্তু প্রজ্জ্বলিত করি এবং করোনা নামের ভাইরাসকে চীরতরে নিশ্চিহ্ন করি।”

medical science | newsfront.co
প্রতিরোধে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থা। চিত্রঃ এএফপি

অত্যন্ত পরিতাপের কথা এই যে, করোনার করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত উপায় খুঁজতে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা যখন সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যখন আমাদের দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামের (PPE) অপ্রতুলতা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে মারণ ভাইরাসটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র প্রবক্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং কিনা এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় টোটকার সাহায্যে ‘দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চাইলেন ! আর তাঁর সেই অপচেষ্টায় সামিল হলো আসমুদ্রহিমাচল! বলাবাহুল্য, মোদি-মুগ্ধদের ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’য় সেই পরিমাণই ‘বিজ্ঞান’ আছে, যে-পরিমাণ সোনা আছে গোদুগ্ধে! করোনা তাড়ানোর এহেন অদ্ভুত উদ্যোগে এদেশের প্রতিটি বিজ্ঞানমনস্ক-যুক্তিবাদী মানুষই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here