কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে অযথা আতঙ্ক কাটাতে উদ্যোগী উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন

0
39

প্রীতম সরকার, উত্তর দিনাজপুরঃ

কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণেই অনেকে অযথা আতঙ্কিত হচ্ছেন, বলছে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আর সেইসঙ্গে বাড়ছে এই কোয়ারেন্টাইন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও।

quarantine | newsfront.co
নিজস্ব চিত্র

অনেকে ভাবছেন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা মানে হাসপাতালে এক ঘরে আলাদা ভাবে রেখে বন্দি করে রেখে দেওয়া হবে। তাই উত্তর দিনাজপুর জেলায় বাইরে থেকে ফেরত আসা শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই নির্দেশিকা অনেকেই মানছেন না।

আরও পড়ুনঃ সংক্রমন রুখতে বালুরঘাট পুর এলাকায় লক ডাউনকে সমর্থন সর্বস্তরে

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। আবার তাঁদের সেই আচরণ নিয়েও সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যেই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হাতে স্ট্যাম্প দেওয়া হয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের। আজ, সোমবার থেকে এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হল ৷

উত্তর দিনাজপুর জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, কোয়ারেন্টাইন নিয়ে অনেকের মধ্যে গুজব তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীরা সেই গুজব দূর করতে ময়দানে নেমেছেন। যাঁরা নির্দেশ মানছেন না, তাঁদের আমরা পুলিশ পাঠিয়ে তুলে আনছি।

স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোয়ারেন্টাইন দুই ধরনের হয়। এক হোম কোয়ারেন্টাইন। দুই স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন। যেসব ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু তিনি সুস্থ হতে পারেন, আবার নাও পারেন, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে, কিন্তু কোনও ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে।

আরও পড়ুনঃ ভিন রাজ্য থেকে আসা রেলযাত্রীদের রেল স্টেশনে পরীক্ষা স্বাস্থ্য দপ্তরের

কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়। কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে সেই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে। কোনও ব্যক্তি যখন বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনের সকল নিয়ম মেনে, বাইরের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে আলাদা থাকেন, তখন সেটিকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলা হয়।

কোনও ব্যক্তি যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ, ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসেন, তাহলে তাঁকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও কমপক্ষে ১৪ দিন তিনি কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলবেন। বাসিন্দাকে হোম কোয়ারেন্টাইনের থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যদিও সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না।

অনেকের মধ্যে এই নিয়ে কোনও সচেতনতা নেই। অনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ পেতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। একাধিক এলাকায় স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে এমন অভিযোগ যেতে পুলিশ দিয়ে সেই ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে এসে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। মানুষের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে গুজব ছড়ানোর কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, জেলার অনেকে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনের অর্থ কোনও ব্যক্তি যখন কারও নির্দেশ ছাড়া নিজে থেকেই সকল প্রকার সামাজিকতা থেকে দূরে সরে ঘরের মধ্যে অবস্থান করেন। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত নাও হতে পারেন। আবার হয়তো তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশ বা ভিনরাজ্যে ভ্রমণও করেননি।

বরং, এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে না পড়ে এজন্য নিজেকে আলাদা রাখছেন। তাঁদের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। এবারে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হাতে স্ট্যাম্পের ব্যবস্থা করল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ।

বিদেশ বা ভিনরাজ্য থেকে এরাজ্যে আসা সকল ব্যক্তি, যাদেরকে হোম বা স্বাস্থ্য দপ্তরের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে, তাঁদের সকলের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে । যাদের কোনও রকমের সংক্রমণের চিহ্ন পাওয়া যাবে না, তাঁদের ছেড়ে দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে ।

তবে তাঁদের উপর নজরদারি থাকবে । কোনওভাবে যদি তাঁরা বাইরে ঘোরার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁদের ফের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য দপ্তরের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। সেই কারণেই চিহ্নিতকরণের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে প্রায় ৪৪ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর । এরমধ্যে একজন করে কালিয়াগঞ্জ কৃষক বাজার কোয়ারেন্টাইনে এবং ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে ভরতি রয়েছেন।

ভিনরাজ্য থেকে আগত প্রায় ৪২ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে । এদিকে রবিবার রাতে আরও বেশ কয়েকজন রায়গঞ্জ এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভিনরাজ্য থেকে এসেছেন বলে সূত্রের খবর ।

তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করে বিশেষ নজরদারি চালাতেই এদিন থেকে তাঁদের হাতে স্ট্যাম্প লাগানোর সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here