শুভদীপ ভট্টাচার্য্যঃ
হোস্টেল অ্যালটমেন্টের দাবীতে বিগত তেরোদিন ধরে অনশনে মেডিক্যাল পড়ুয়ারা। বারবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও যখন ব্যার্থ মনোরথ হয় তারা, তখন অনশনের পথ বাছে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা। মাথার ওপর ভেঙে পড়া ছাদ, পরিকাঠামোর চুড়ান্ত অবনতি, নেই যথার্থ বাথরুম, বাসযোগ্য পরিবেশও নেই হোস্টেলে। কেবল এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিই চেয়েছিল তারা। রয়েছে নীল সাদা রঙের এগারোতলা বিশাল বিল্ডিং, কেবল তাতে থাকবার আবেদন ছিল পড়ুয়াদের। কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত এর বদলে ভর্ৎসনা করেন, এবং সমস্যা নিরসনে রীতিমত উদাসীনই থেকে যান। সমস্যা থেকে বাঁচতে জোটবদ্ধ হতে থাকে মেডিক্যাল পড়ুয়ারা। গড়ে তোলে আন্দোলন। ফল না পেয়ে অনশনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় অনিকেত, দেবাশীষ এর মত কিছু পড়ুয়া।
একটানা তেরোদিন অনশন সত্ত্বেও টুঁ শব্দটি করেনি কর্তৃপক্ষ। বরং বারবারই এসেছে হুমকি। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন পূরণ হবেনা শর্ত। বিশাল বিপুল ব্যায়ে পালিত হয়েছে ২১শে জুলাই। অথচ ঢিলছোঁড়া দুরত্বে অবস্থানকারী মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের শারীরিক অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও একটিও কথা খরচ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যবাসীর উন্নয়নে তিনি শুনিয়েছেন এক গুচ্ছ প্রকল্পের কথা। কিন্তু তাতে নিরাময় হয়নি আন্দোলনকারীদের দুঃসহ অবস্থার।
শোচনীয় হয়ে উঠছে পড়ুয়াদের পরিবারের অবস্থাও। মা তার কোলে সন্তানের মুখ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠে ব্যার্থ অভিযোগ ছুড়ে দিচ্ছেন। দিন দিন সন্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সাথী হয়ে অঘোষিত অনশন তাদেরও। পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তনের পরও মুখে কুলুপই এঁটে রয়েছে প্রশাসন। দিন যত এগিয়েছে লড়াইয়ে একে একে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মীরাতুন নাহার, মন্দাক্রান্তা সেন, তরুণ মন্ডল, পল্লব কীর্তনিয়ারা।
বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনও পাশে দাড়িয়ে সংহতি জানিয়েছে মেডিক্যাল ছাত্রদের। একই সঙ্গে লড়াইয়ের অনমনীয় তেজের কাছে মাথা নুইয়ে, বারংবার হয়েছে কর্তৃপক্ষ বদল। প্রকাশ পেয়েছে ঔদ্ধত্য। পাশাপাশি ছাত্রদের তরফে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে রাজনৈতিক রং দানে মুকুল রায়ের প্রস্তাব। এরই ধারাবাহিকতায় সকল বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক-সাহিত্যিক, শুভানুধ্যায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ছাত্ররা তাদের পাশে দাঁড়াতে। বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতিতে কনভেনশনের ডাক দেয় পড়ুয়ারা। যথার্থই, আবেদনে সাড়া পায় ছাত্ররা। কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সমীর আইচ, কৌশিক সেন, বিকাশ ভট্টাচার্য, মৌসুমি ভৌমিক, অরুণাভ ঘোষ, অনীক দত্ত’রা একে একে এসে জানান সংহতি।
ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থাকবার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। লড়াকু পড়ুয়াদের জানান শুভেচ্ছা। নয়া ইতিহাস রচয়িতাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে লড়াইয়ে থাকবার আশা জোগান তারা। একইসঙ্গে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররাও সংহতি জানিয়েছে এমসিকে’র লড়াকু ছাত্রদের প্রতি। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করে আগামী মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে পড়ুয়ারা। পরিস্থিতির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দান না ছাড়ার ঘোষণা করে কনভেনশন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584