শিবশংকর চ্যাটার্জ্জী, দক্ষিণ দিনাজপুরঃ
গঙ্গারামপুর পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরনো পাড়ার বাসিন্দা কল্পনা মহন্ত। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগেই। বৃদ্ধা মেয়ে মিঠু মহন্ত সিং এর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কুমারগঞ্জ থানার তিলনা গ্রামের বাসিন্দা হিরেন সিং এর।
কিন্তু গত ছয় বছর আগে বৃদ্ধার জামাই তার মেয়েকে ছেড়ে চলে যায়। দীর্ঘ দিন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে মিঠু দেবী ছোটো দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে গঙ্গারামপুরের পুরনো পাড়ায় মায়ের কাছে আশ্রয় নেয়।
ছোটো ছোটো তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে পরিচারিকার কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ১৫ দিন আগে মিঠু দেবী হঠাতই অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার পরেই দুই নাতনি-সহ ছয় বছরের এক নাতিকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন কল্পনা দেবী।
নিজের পেট-সহ তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে তাই সংসার টানতে পরিচারিকার কাজ করতে হচ্ছে তাকে বৃদ্ধ বয়সে। কল্পনা দেবীর বড় নাতনির বয়স প্রায় ১৫।
অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি। ছোটো নাতনির বয়স ১১, নাতির বয়স ৬ বছর। পরিচারিকার কাজ করে যা আয় হয় সেই আয় দিয়ে কখনও দুইবেলা খেয়ে আবার কখনও এক বেলা না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। কল্পনা দেবীর বাড়িটা কুঁড়ে ঘর।
বৃষ্টি হলে ছাউনি দিয়ে জল পড়ে। রাতে স্যাঁতসেতে মাটিতে তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে ঘুমান তিনি। বিল দিতে না পারায় বিদ্যুৎ কেটে দিয়েছে সরকারি অফিস। রান্না করে খাবার মতো এটা ঘরও না থাকায় খোলা আকাশের নীচে উনানে রান্না করেন।
আরও পড়ুনঃ পাটের মাদুর ও ধকোড়া বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা
কল্পনা মহন্ত একরাশ চাপা দু:খ নিয়ে বলেন, অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু জামাই আমার মেয়ে এবং ছোটো ছোটো নাতি-নাতনিকে ছেড়ে চলে গেছে প্রায় ৬ বছর আগে। জামাইয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না হওয়ায় মেয়ে আমার কাছে থাকত।
মা-মেয়ে লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু মেয়ে আমাকে ছেড়ে আগেই চলে গেল। তাই নাবালক তিন নাতি-নাতনির দেখাশোনার দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। আমার বয়স হয়েছে। আগের মতো আর কাজ করতে পারি না। তবুও অনেক কষ্টে দুই বাড়িতে কাজ করে যা পাই সেটা দিয়ে সংসার টানতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ঘরে জল পড়ে।
আগামী দিনে নাতি-নাতনিদের নিয়ে কিভাবে চলব সেই চিন্তায় আমার রাতে ঘুম আসে না। কিন্তু কোনো সরকারি সাহায্য পাইনি।
প্রতিবেশী বরুনা বিশ্বাস বলেন,কল্পনা দেবীর মেয়েকে ছেড়ে জামাই গত কয়েক আগে অন্যত্র চলে গেছেন। তার পর থেকে তার মেয়ে ছোটো ছোটো তিন নাবালক ছেলে মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছে থাকত।
কিন্তু কল্পনা দেবীর মেয়ে মিঠু দেবী অসুস্থ হয়ে ১৫ দিন আগে মারা গেছে। এখন বৃদ্ধ বয়সে পরিচারিকার কাজ করে কল্পনা দেবীকে সংসার চালাতে হচ্ছে। সরকারি কোনো সাহায্য পায়নি তারা।
১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজাতা মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সরকারি সাহায্য যাতে পাই সেই বিষয়টি পুরসভায় জানাব। তাছাড়া গীতাঞ্জলি প্রকল্পে কল্পনা দেবীর নাম রয়েছে। গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অমলেন্দু সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তারা যদি পুরসভায় আসে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে সমস্ত রকম সরকারি সাহায্য করা হবে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584