শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
ফেব্রুয়ারি কলকাতা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে কর্মস্থলের উদ্দেশ্য। যাওয়ার কথা ছিল সিঙ্গাুপর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ডায়সন বন্দরে। কিন্তু যাওয়ার পথে মাঝ সমুদ্রে জাহাজ থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেলেন আদতে কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা এক ইঞ্জিনিয়ার। এভাবে আচমকা অন্তর্ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার স্ত্রী ও কিশোর সন্তান।
জানা গিয়েছে, বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম সম্বিত মজুমদার। ওই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার লাইবেরিয়ার একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার এমটি সেরেঙ্গার সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। দক্ষিণ চিন সাগরে এই মুহূর্তে রয়েছে তাঁর জাহাজ। সূত্রের খবর, বুধবার শেষবার সম্বিতবাবুকে কেবিনে দেখেছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু প্রাতঃরাশ করতে আসেননি তিনি। এরপর দীর্ঘক্ষণ তাঁর হদিশ না পাওয়ায় কেবিনে খোঁজ করলে মেলে মোবাইল ফোনটি। কিন্তু আর দেখা মেলেনি বছর পঞ্চাশের সম্বিতবাবুর।
আরও পড়ুনঃ ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে ৪ টাকায় মাস্ক বিক্রি করবে রাজ্য
এই খবর বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে পৌঁছতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্যদের। তাঁর স্ত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর জাহাজের কারও তরফে কোনও রকম সহযোগিতা পাননি তিনি। কেউ কথা বলতেও রাজি হননি। তাঁর সন্দেহের তির জাহাজে থাকা সম্বিতের সহকর্মীদের দিকেই। সম্বিতবাবুর স্ত্রী জয়তী জানান, সিঙ্গাপুর হয়ে ২৩ জুন কোরিয়ার ডায়সন বন্দরে নামার কথা ছিল তাঁর স্বামীর। কিন্তু সিঙ্গাপুর ছেড়ে এলেও আচমকা জাহাজের মধ্যেই তিনি উধাও হয়ে যান।
আরও পড়ুনঃ করোনা আবহে পিছিয়ে গেল রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা
গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বামীর কোনও খোঁজ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিক পণ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত জাহাজের নাবিকদের আন্তর্জাতিক ফোরাম ইন্টারন্যাশনার বারগেনিং ফোরাম (আইবিএফ)-এর দ্বারস্থ হয়েছেন সম্বিতবাবুর স্ত্রী। জাহাজের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সম্বিতবাবুর স্ত্রী জয়তী আরও জানান, তাঁর স্বামী ডায়নাকন ট্যাঙ্কার ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হয়ে ওই জাহাজে সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
নাইজেরিয়ার এসক্রাভোস তেলের খনি থেকে তেল বোঝাই করে দক্ষিণ কোরিয়ার ডায়সান বন্দরের দিকে জাহাজ রওনা হয়েছিল। মাঝে সিঙ্গাপুরের একটি বন্দরেও থেমেছিল ওই জাহাজ। এই সমস্ত খবর স্বামীর কাছ থেকেই স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্বামীও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলেন এবং তাকে কোনও সমস্যার কথা বলেননি। আইবিএফ জয়তীদেবীকে জানিয়েছে, জাহাজ দক্ষিণ কোরিয়ার ডায়সন বন্দরে পৌঁছলেই নিয়মানুযায়ী সমস্ত নাবিকদের আটক করে ঘটনার তদন্ত শুরু করবে দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ।
সপ্তাহখানেক আগে ১৩ জুন শনিবার সম্বিতবাবুর সঙ্গে শেষ কথা হয় জয়তীর। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ১৮ জুন ডায়নাকন কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফোন করে বলেন যে, বুধবার সকাল থেকে উধাও সম্বিত। মঙ্গলবার রাতেও স্থানীয় সময় ৮ টা নাগাদ সবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে সম্বিত নিজের কেবিনে চলে গিয়েছিলেন। বুধবার সকাল থেকে তিনি উধাও। এমনকি তার সঙ্গে তার কোনও সহকর্মীর ঝামেলা হয়েছিল কি না, সেটাও তিনি জানতে পারছেন না। সম্বিতবাবুর সংস্থা ডায়নাকনও জানিয়েছে, বুধবার সমুদ্রে তল্লাশি ছাড়াও হংকং এবং ফিলিপিন্সে মেরিটাইম রেসকিউ কোঅর্ডিনেশন সেন্টারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি সম্বিতবাবুর।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584