পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ
রাঙামাটির রাজপুত্র সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় এবার যাবে রাইসিনা হিলসে বীরভূমের নাম গৌরবান্বিত করতে। কয়েকদিন পরেই রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নেবেন পদ্মশ্রী পুরস্কার। শনিবার রাত্রে ভারত সরকারের তরফে এই সুসংবাদ জানানো হয়। সুশোভন বন্দোপাধ্যায় বলেন, আমি এতটা আশা কোনদিন করিনি। ডায়ালাইসিস করে এসে শুয়ে পড়েছিলাম হঠাৎ সরকারের তরফ থেকে পদ্মশ্রী প্রাপ্তির খবর দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানানো হলো। তারপর প্রণব দা আমাকে জানালেন। আমি অভিভূত, আর কি বলবো। তিনি বলেন, ৫৬ বছর ধরে ১ টাকায় রুগী দেখেছি এই তো করেছি।

বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়, বিশ্ব ভারতী চিকিৎসক সুশোভন বন্দোপাধ্যায়ের জন্য গর্বিত। তিনি বিশ্বভারতীর একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য।
চিকিৎসক আসলে কে? একজন বিপন্ন মানুষের হাত যিনি ধরেন তিনি তো চিকিৎসক। চিকিৎসকের ক্ষেত্রে সেই হাত ছাড়ানো যায় না। এই ছিল তাঁর সারাজীবনের আদর্শ। তিনি একজন ‘এক টাকার ডাক্তার’। ডঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি বোলপুরের হরগৌরীতলায়। যখন রাজ্যের সমস্ত সরকারী হাসপাতালে পরিষেবা আন্দোলনে বন্ধ ছিল। তখন গ্রামের গরিব মানুষগুলোর স্বাচ্ছন্দ্য যাতায়াত ছিল হরগৌরীতলায় হলুদ রঙের দোতলা বাড়িটিতে। সেই বাড়িতে সব সময় দেখা যায় অগুনিত মানুষের ভিড়। রুগীদের কাছে তাঁর পরিচয়, সব দরজা বন্ধ থাকলেও ভগবানের দরজা বন্ধ থাকে না। তাই দুঃস্থ অনেকেই এখানে চিকিৎসা পায়।
কিন্তু ‘এক টাকা’ কেন? যেখানে বাসে উঠলেই ১০ টাকা! তার উত্তরে তিনি বলেন, একসময় দেখেন গরীব মানুষেরা গামছা পেতে মুড়ি খাচ্ছে। তখন মনে হয়েছিল এই মানুষদের কাছে ১ টাকার বেশী নেওয়া যায় না।
চিকিৎসকদের উপর আক্রমণে প্রতিবাদ জানাতে সহকর্মীদের সাথে মিছিলে হেঁটেছেন। আবার চিকিৎসাও চালিয়ে গেছেন সমানে। তিনি বলেছেন, বহু আশায় চিকিৎসকের হাত ধরেন বিপন্ন মানুষ। তাই প্রতিবাদের মাধ্যম পরিষেবা বন্ধ করে নয় তবে পাশাপাশি এটাও বুঝতে হবে একজন চিকিৎসক চেষ্টা করে রোগীকে বাঁচাতে। কোন সময় পারেন, আবার কোন সময় পারেন না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা অন্যায় কাজ। আমাদের শিক্ষিত হতে হবে।
বোলপুরে সুশোভনবাবুর তিনপুরুষের বাস। বাবা বিনয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অফিসে কর্মরত ছিলেন। মা মণিবালা বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহবধূ। স্ত্রী গৃহবধূ ছায়া বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের ঘরকন্যা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। মেয়ে জামাই দুজনেই চিকিৎসক। অনায়াসেই আয়াসে জীবন কাটাতে পারতেন তিনি। কালের নিয়মে প্রিয়জনদের অনেকেই এক এক করে তাঁকে ছেড়ে গেছেন। কিন্তু, না! আজ রুগীই সুশোভনবাবুর একমাত্র পরিবার। তাঁদের জন্য তিনি অপেক্ষায় থাকেন। ১৯৬২ সালে সুশোভনবাবু এম.বি.বি.এস পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এস.সি( গোল্ড মেডালিস্ট)। তাঁর বিষয় ছিল হেমাটোলজি। তিনি ছিলেন শেফিল্ডের সিনিওর রেজিস্ট্রার এবং সিনিওর ইনচার্জ। তখন তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ষোলো হাজার পাউণ্ড। আজ চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে এক টাকার ডাক্তার। ১৯৭৮ সালে শেফিল্ড থেকে চাকরী ছেড়ে বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে। সেটাও এক সময় ছেড়ে দিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য চেম্বার খুলে বসেন। ছোট্ট একটা সেবা নিকেতন। তাতেই চলে দান খয়রাত। রাজনীতিতে আসেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে। তিন থেকে চার বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৩ সালে জয়ী হন। একসময়ে জাতীয় কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক ও সভাপতি হন। এআইসিসি-র সদস্যও হন। ১৯৮৩ সালে জ্ঞানী জৈল সিং, তারপর ক্রমান্বয়ে, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, প্রতিভা পাটিল, প্রনব মুখোপাধ্যায় এবং বর্তমানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বভারতীতে দায়িত্বের সাথে কার্যভার সামলান। রাজপুত্রকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতবর্ষের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বীরভূমের আরেক গৌরবোজ্জ্বল নাম প্রণব মুখোপাধ্যায়।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584