শরীয়তুল্লাহ সোহন, ওয়েব ডেস্কঃ
গত রাতে গ্রুপ ২ এর সুপার টুয়েলভ-এর ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৭ রানের পুঁজি নিয়ে শারজার মাঠে বল করতে নেমেছিল আফগানিস্তান। জয়ের জন্য শেষ ১০ ওভারে ৭৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। হাতে ৯ উইকেট। এ অবস্থায় রশিদ খানকে প্রথম বোলিংয়ে আনেন আফগানিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী।
ওয়ানডে কিংবা টি–টোয়েন্টি—সংস্করণ যেটাই হোক শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান বরাবরই দ্রুত রান তুলতে অভ্যস্ত। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনারকে ব্যবহার করতে দেরি করায় কি ম্যাচটা হারল আফগানিস্তান?

পাকিস্তানের সেরা দুই ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের মধ্যে শুধু বাবরকে বল করার সুযোগ পেয়েছেন রশিদ। দুই ওপেনারকে থামাতে ৭ ওভারের মধ্যে আরেক তারকা স্পিনার মুজিব উর রহমানের ৪ ওভারের কোটা শেষ করেন নবী। মুজিব ৪ ওভারে ১৪ রানে রিজওয়ানকে ফিরিয়ে আস্থার প্রতিদান দেন। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে রশিদকে দুই–এক ওভার ব্যবহার করলে পাকিস্তান হয়তো আরেকটু চাপে পড়ত।
আফগানিস্তানের পেস বিভাগে ‘ডেথ ওভার’–এ বিশেষজ্ঞ পেসার না থাকায় দলের দুই সেরা বোলারকে ইনিংসের দুই ভাগে ব্যবহার করতে বাধ্য হন নবী। তাতে মাঝে–মধ্যে বিপদের শঙ্কা ছড়িয়েও ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতল বাবর আজমের দল।

রশিদ শেষ ১০ ওভারে হতাশ করেননি আফগান সমর্থকদের। ৪ ওভারে ২৬ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম ম্যাচে শততম উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েন রশিদ এ ম্যাচে। কিন্তু ‘পথের কাঁটা’ হয়ে থাকা বাবর অনেকটা পথ এগিয়ে দেন পাকিস্তানকে। যদিও তিনি আউট হওয়ার পরও বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান।
৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংসে পাকিস্তানের ৬ বল হাতে রাখা এই জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন বাবর। কিন্তু ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতিয়েছেন আসিফ আলী। ৭ বলে ২৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। পাকিস্তান ২১ বলে ২৭ রানের দূরত্বে থাকতে তাঁর বলে ক্যাচ তুলেছিলেন বাবর। ক্যাচটা নিতে পারেননি নাভিন-উল-হক। ওই ওভারেই গুগলিতে বাবরকে বোল্ড করেন রশিদ, ততক্ষণে কি দেরি হয়ে গিয়েছিল?
আরও পড়ুনঃ বহু নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের কাছে ৩ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ
আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা দেখে কিন্তু তা মনে হয়নি। তাঁরা শেষ পর্যন্ত লড়েছেন। বাবর আউট হওয়ার পর শেষ তিন ওভারে ২৬ রান দরকার ছিল আফগানিস্তানের। ১৮ তম ওভারে শোয়েব মালিককে (১৫ বলে ১৯) তুলে নেন নাভিন। ওই ওভারে ২ রানে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচটা জমিয়ে তোলেন এ পেসার। উইকেটে আসেন আসিফ। পাকিস্তানের আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থেকে জয় এনে দিয়েছিলেন এ হার্ড হিটার। আজও তেমন এক বিস্ফোরক ইনিংসে জয় এনে দেন আসিফ।

পাকিস্তানের জয়ের সমীকরণ ১২ বলে ২৪ রানে নেমে আসার পর ঝড় তোলেন আসিফ। আফগান পেসার করিম জান্নাতের করা ১৯তম ওভারে চার ছক্কা মারেন আসিফ। ওই ওভারেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। হারলেও আফগানিস্তানের লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো। পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানকেই ছাড় দেননি দলটির বোলাররা। ব্যাটিংয়ে ম্যাচটা পাকিস্তান জিতেছে মূলত বাবর ও আসিফের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাটের উন্মোচন
ব্যাটিংয়েও লড়েছে আফগানিস্তান। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় দলটি। হজরতউল্লাহ জাজাইকে (০) তুলে নেন ইমাদ ওয়াসিম। মোহাম্মদ শাহজাদকে (৮) ফেরান শাহিন আফ্রিদি। ১০ ওভারের মধ্যে ৬৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে এক পর্যায়ে বিপদেই পড়েছিল আফগানিস্তান।
সপ্তম উইকেটে নবী ও গুলবদিন নাঈবের ৪৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। ৩২ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন নবী। ২৫ বলে ৩৫ রানে অন্য প্রান্ত ধরে রাখেন গুলবদিন। পাকিস্তানের হয়ে ২৫ রানে ২ উইকেট নেন স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম। ১টি করে উইকেট শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ, শাদাব খান ও হাসান আলীর। তবে ১৯ তম ওভারে এ ম্যাচের সব আলো কেড়ে নেন আসিফ আলী চার ছক্কায়। এই ইনিংসের সুবাদে তিনি ম্যাচের সেরা প্লেয়ার নির্বাচিত হন।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584