পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুরঃ
মাসিমা ‘মালপো খামু’ বাংলা সিনেমার সেই বিখ্যাত প্রবাদ যা বাঙালি বাড়ির অন্দরমহলের অন্তর্নিহিত কথা সেই সময় প্রকাশ পেয়েছিল। সেই কারনে কথিত আছে সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার।
এই গঙ্গা সাগরে পৌষ সক্রান্তিকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বাঙালী পিঠে পুলির উৎসবে অর্থাৎ পৌষ পার্বনে মেতে ওঠে, শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি একান্নবর্তী পরিবারই। ঠাকুর মা, মাসিমা, দিদিমারা প্রতি বছর শীত পড়তেই ঢেঁকিতে চালের গুঁড়ো তৈরি করে রোদে শুকিয়ে কৌটোজাত করতেন।
পৌষ পার্বণের দিনে সকাল সকাল গোটা বাড়ি গোবর দিয়ে লেপে সুন্দর সুন্দর আলপনা আঁকা হত। দুপুর হতে না হতেই চালের গুঁড়োর সাথে সাথে চিনি, নলেন গুড় অথবা খেজুরের গুড় মিশিয়ে পিঠেপুলি তৈরির উপকরণ তৈরি করে ফেলতেন। পৌষ সক্রান্তির সংক্রান্তির দিন সন্ধ্যে হতেই গৃহস্থ বাড়িতে শুরু হয়ে যেত রকমারি পিঠেপুলি বানানোর কাজ। এই পিঠেপুলি তৈরি করতে প্রয়োজন মাটির তৈরি সরা। যা তৈরিতে বেশ কয়েকদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফা নগরের পাল পাড়ার মৃৎ শিল্পীরা।
শীতকে উপেক্ষা করে এঁটেল মাটির সাথে প্রয়োজন মত জল মিশিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সেই মাটিকে মাখিয়ে সরা তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর নরম মাটিকে ছাঁচে ফেলে বিভিন্ন আকৃতির সরা তৈরি করা হয়। কোনও সরার নাম এক খুঁটির সরা আবার কোনটা সাত খুঁটির সরা। প্রতিটি সরাতে একটি করে মাটির ঢাকনাও তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। যা চলতি ভাষায় ঢাকন নামে পরিচিত। এরপর সেই সরা গুলিকে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোরানো হয়। তারপর সেগুলিকে একটি একটি করে বাছাই করে তা পাইকারি ও খুচরো হিসেবে বিক্রি করা হয়। আকৃতি অনুযায়ী একটি সরা সহ ঢাকনা মিলিয়ে তৈরী করা হয় বলে জানান মৃৎ শিল্পী গোপেন পাল, আনন্দ পাল, অশ্বিনী পাল, কনিকা পাল।
বাড়ির মায়েরা সারাদিন বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ সারতেই হিমশিম খেয়ে যান। তবু বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে মাটির সরা তৈরী করেন বাড়ির মহিলা । একদিকে কয়েক দিন ধরে জাকিয়ে ঠান্ডা পড়ায় তাঁদের মাটির কাজ করতে অসুবিধা হয়। তবুও একটু বেশি মুনাফা লাভের আশায় তাঁরা পৌষ পার্বণ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সরা বানান বলে জানান শিল্পী শান্তি পাল। এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতে তিন, চার ধরনের সরা বানিয়ে বিক্রি করেন মৃৎ শিল্পীরা।
তাঁদের হাতের তৈরী বিভিন্ন ধরনের সরা গুলি শুধু কালিয়াগঞ্জে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হয় । বিভিন্ন জায়গার পাইকারেরা এসে তাঁদের সরা গুলি নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য। যত সামান্য লাভ হলেও বাপ ঠাকুরদার আমলে কাজ শেখা ,তাই তাঁরা মাটির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারি বাজারে ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি এবং খুচরো বাজারে তা ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন মৃতশিল্পীরা।
আরও পড়ুনঃসেতু তৈরির শিলান্যাস ফালাকাটায়
তারা বিভিন্ন বিল থেকে ১০০০ টাকা দরে এটেল মাটি কিনতে হয় বলে জানান মৃৎ শিল্পী বিশু পাল। যাই হোক হাতে আর চার পাচ দিন তাঁর পরেই আপাময় বাঙালী মেতে উঠবেন পৌষ সক্রান্তি উৎসবে,আর সেই উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে তৈরী হবে নানা ধরণের পিঠা পুলি।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584