নিজস্ব প্রতিবেদন, নিউজ ফ্রন্টঃ
দেশজুড়ে করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর চেহারা ধারণ করেছে। তার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে দুটি বিধ্বংসী সাইক্লোন- আমফান ও ইয়াস। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা বড় অংশ। পশ্চিমবঙ্গের এই জেলা থেকে নারী পাচারের ঘটনাও ঘটে বহু সংখ্যায়, যদিও প্রশাসনিক তৎপরতায় তাঁদের অনেককেই উদ্ধার করাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁরা অনেকেই গিয়ে পড়ছেন ঋণের ফাঁদে, বিষয়টি উঠে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাফতিশ-এর বার্ষিক সমীক্ষার রিপোর্টে।

১৫ বছরের কিশোরী লক্ষ্মী নস্কর ( নাম পরিবর্তিত), দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে তাকে পাচার করা হয়েছিল ভিন রাজ্যে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ঠিক দুর্গা পূজার আগে। পাঁচ মাস পরে লক্ষ্মীকে মহারাষ্ট্রের একটি বেশ্যাপল্লী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ফেরানো হয় পরিবারের কাছে। তাঁর পরিবারের সকলেরই পেশা মাছ ধরা। গত বছর লকডাউনে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় সে কাজ। এরপর আমফানের ধাক্কায় কার্যত ছিন্নভিন্ন দক্ষিণ পরগনা জেলার একটা বড় অংশ। সে ধাক্কা সামলাতে সামলাতেই ইয়াস।
আরও পড়ুনঃ মুক্ত অখিল গগৈ, রাজনীতির কোন পথে হাঁটবেন তিনি- রয়ে গেল অনেক প্রশ্ন
জীবন ধারণের সব রাস্তা বন্ধ, উপায় না পেয়ে চড়া সুদে মহাজনের থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন প্রথমে ২০,০০০ টাকা তারপরে ৩২,০০০ টাকা। একই কাহিনী বাসন্তীর রুকসানা খাতুনেরও (নাম পরিবর্তিত)। মহারাষ্ট্রে পাচার হওয়ার পর উদ্ধার করা হয় তাঁকেও। আমফানে ভেঙে যায় বাড়ি, দোকান সব। তাঁর ঋণের পরিমাণ গত বছর ৬০,০০০টাকা, এই বছর ৪৫,০০০ টাকা।
সংস্থার অন্যতম সদস্য শাশ্বতী মল্লিক জানালেন, এ রাজ্য থেকে পাচার হওয়া উদ্ধার করা হলেও সেভাবে কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই সরকারি স্তরে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় বন্ধ হয়েছে জীবন ধারণের অন্য উপায়, কাজ নেই। এঁদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ মহিলাকে বেঁচে থাকার জন্যে নির্ভর করতে হচ্ছে ঋণের ওপর।
আরও পড়ুনঃ ‘অব্যাহতি দেবেন না’, শীর্ষ আদালতে রামদেবের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ DMA-এর
আমফানের পরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এঁদের ঋণের পরিমাণ শুনলে আঁতকে উঠবেন অনেকেই, সকলেরই প্রায় ধারের বোঝা ১০,০০০ টাকা থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। অন্তত ১০ শতাংশ মহিলা ঋণ নিতে বাধ্য হন স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে, সুদের হার অত্যন্ত চড়া।
সংস্থার দাবি, রাজ্য সরকার সমাজের এই প্রান্তিক মহিলাদের পাশে দাঁড়াক, সরকারি আর্থিক সাহায্যের প্যাকেজ না থাকলে এঁদের পক্ষে কোনভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584