বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট পূর্ব মেদিনীপুরে

0
53

নিজস্ব সংবাদদাতা,পূর্ব মেদিনীপুরঃ

peaceful election in midnapore beside of Scattered incident
নিজস্ব চিত্র

আজ রাজ্য ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল।এই নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের ভোট গ্রহণ করা হয়। সকাল থেকেই এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে বুথে ভোটারদের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা যায়।

কয়েকটি বুথে ভোটিং মেশিন খারাপ থাকায় বেশ কিছুক্ষণ পরে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদিন নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের ১৩৪ নম্বর বুথের ইভিএম খারাপ থাকায় বেশ কিছুক্ষণ ভোট  গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকলে পরে আবার নতুন করে ইভিএম এনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

peaceful election in midnapore beside of Scattered incident
নিজস্ব চিত্র

অন‍্যদিকে পদিমা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অলংকারপুর বুথে ইভিএম খারাপ থাকায় বেশ কিছুক্ষণ পর ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৮ লক্ষ ৮৬হাজার ৬৮জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২০লক্ষ ১০হাজার ৩১০ জন,মহিলা ভোটার সংখ্যা ১৮লক্ষ ৭৫হাজার ৬৯৯জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৫৯জন। রবিবার জেলার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৮২.৯৯ শতাংশ এবং কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৮০.০৬ শতাংশ।

এদিন সকাল থেকে কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয় জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্রে।রবিবার ভোট গ্রহণ শুরুর হওয়ার মাত্র কয়েকঘন্টা আগে বোমা-গুলিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভগবানপুর এলাকা।

আরও পড়ুনঃ ভোট পূর্ব নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে কোচবিহারে কেন্দ্রীয় পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে

ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন ২বিজেপি কর্মী।গত শনিবার রাত্রি ১টা নাগাদ হঠাৎ ভগবানপুরের পশ্চিমবাড় এলাকায় বোমাবাজি শুরু করে দুষ্কৃতীরা।এরপর এই খবর স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের কাছে যাওয়া মাত্রই তারা রুখে দাঁড়ায় এবং দুষ্কৃতীদের পেছন পেছন ধাওয়া করে।এমন পরিস্থিতিতে দুষ্কৃতীরা বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে ব‍্যাপকভাবে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে।ঘটনায় দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হন দুই বিজেপি কর্মী।জানা গেছে তাদের নাম,অনন্ত গুচ্ছাইত(৫৫),ও রনজিৎ মাইতি(২৮)।

ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই দুই বিজেপি কর্মীকে প্রথমে চন্ডীপুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে অবস্থান অবনতি হওয়ায় তাদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।এই ঘটনায় বিজেপির সম্পূর্ণ অভিযোগ তৃণমূলের দিকে।তবে তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অপরদিকে,তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের ময়না এলাকার নোনাকুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪১নং বুথে বিজেপি কর্মীদের ভোট দানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।এরপর বিজেপি কর্মীরা বাঁশ,লাঠি দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ।ঘটনায় স্থানীয় ময়না থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আবার খেজুরির পানখাই এলাকার ১৭২ নং বুথে বিজেপির এজেন্টকে বুথে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

ঘটনায় বিজেপি এজেন্ট গোপাল পুরকাইত জোর করে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তৃণমূল কর্মীরা তাকে ভোজালির কোপ মারে বলে অভিযোগ।এই ঘটনায় গোপালবাবুকে অন্য দুই বিজেপি কর্মী বাঁচাতে গেলে তারাও আক্রান্ত হয়। এরপর গোপালবাবুকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

রবিবার সকালে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী পরিতোষ পট্টনায়েকের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।এই ঘটনায় দুষ্কৃতীরা ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট করেছে বলে জানা গেছে।ঘটনায় স্থানীয় ভবানীপুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমেছে।তবে সিপিআইএমের তরফ থেকে তৃণমূলের দিকে অভিযোগের তীর ছোঁড়া হলেও তৃণমূল এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে কাঁথিতে ভোটের আগের দিন এক তৃণমূল কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।জানা গেছে মৃত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম সুধাকর মাইতি(৫৫)।তিনি মারিশদা থানার অন্তর্গত কুকড়াওল গ্রামের বাসিন্দা।গত শনিবার রাত্রি ১১টায় ওই তৃণমূল কর্মী একটি ফোন আসার পর সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে।

এর ঠিক ঘন্টাখানেক পর ওই তৃণমূল কর্মীকে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনোরূপ উত্তর মেলেনি বলে পরিবার সূত্রে খবর। মৃত তৃণমূল কর্মী সুধাকর মাইতির পুত্র সুজিত মাইতির দাবী,সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল বাবার।তবে কি কারণে বাবার এই মৃত্যু হল তারজন্য আমি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।

এই ঘটনা নিয়ে পরিবহন ও পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্টভাবে দুর্ঘটনা নিছক দূর্ঘটনা বলে জানান।রবিবার সকালে হলদিয়ার ২৬১ নম্বর বুথের মহাপ্রভুচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান রাজ্যের পরিবহন ও পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।এদিন শুভেন্দুবাবু ভোট দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন,গরমের আগেই ভোট সম্পন্ন করা উচিত।ভোট হল একধরনের উৎসব।উৎসবে কখনও মানুষকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।নির্বাচন কমিশনের এ বিষয় নিয়ে আগামী দিনে ভাবা উচিত।

এদিন সকালে শুভেন্দুবাবু একেরপর এক বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট পরিদর্শনে যান।তিনি মহিষাদল বিধানসভা এলাকায় ভোট পরিদর্শনে এসে ভারতী ঘোষ সম্পর্কে বলেন,”কয়লাকে দুধে সিদ্ধ করলেও কয়লার কোনও পরিবর্তন হয় না।কয়লা কয়লাই থাকে।উনি খুব অহংকারী ।২৩ তারিখ বিজেপি বুঝতে পারবে ভারতী ঘোষকে প্রার্থী করে তাদের কী অবস্থা হয়েছে । আমি নিশ্চিত তৃণমূল অনেক ভোটে জিতবে।

অন্যদিকে ভোট দিতে গিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে জটলা দেখে কার্যত ধমকের সুরে দেখা গেল তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠকে।রবিবার দুপুরে হলদিয়ার কিশোরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট দিতে যান লক্ষ্মণ শেঠ।সেখানে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের পাশে বেশ কয়েকজন যুবকের জটলা দেখে তাদের বহিরাগত বলে দাবি করেন তিনি।

এরপর তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ধমক দেন এবং ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের পাশ থেকে সরিয়ে দেন।এদিন লক্ষ্মণবাবু সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ করে বলেন,সকালে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী এসে ভোট দিয়ে গেছে।এখন যাদের বাইরে দেখা যাচ্ছে ওরা সবাই বহিরাগত গুন্ডা।তাই আমি ওদের নাম এবং বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করলাম এবং এভাবে জটলা না করার কথা বললাম।

সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে মাত্র কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সমগ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়।তবে বিরোধীদের দাবি সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী সেই সব বুথে ছাপ্পা ভোট চালিয়েছে।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here