নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুরঃ
বাংলায় কথিত আছে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বর্তমান লকডাউনের সময় ঘরবন্দি প্রান্তিক মানুষের এখন এমনি অবস্থায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বেলা পেটে অন্ন জুটলেও অপর বেলা কি খাবে তা নিয়ে এখন ভাবতে হয় সমাজের খেটে খাওয়া দিন দরিদ্র মানুষদের।
তাই এখন লকডাউনের সময় নদীতে মাছ ধরে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গেঁওখালির প্রত্যন্ত গ্রামগুলির খেটে খাওয়া মানুষজনেরা।
আরও পড়ুনঃ সালারে আক্রান্তর পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে, খোঁজ চলছে সংস্পর্শে আসা প্রতিবেশীদের
জানা যায় গেঁওখালি পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রূপনারায়ন নদী। যে নদীতে এখন সকাল থেকেই কয়েকশো মানুষ মাছ ধরে পেট চালানোর তাগিদে জাল নিয়ে নেমে পড়ছেন। আর সেই মাছ বিক্রি করেই কোনও মতে দিন চলছে গেঁওখালি প্রত্যন্ত গ্রামগুলির মানুষদের। অন্যদিকে নাটশাল, শুকলালপুর, ভাঙাগড়া রবিতে গেঁওখালি গ্রামগুলোর একাধিক মানুষ শ্রমিক শ্রেণী ভুক্ত। বর্তমানে করোনা আতংকের আবহে কলকারখানা থেকে সমস্ত কিছু একেবারে বন্ধ।
তাই লকডাউনের শুরু থেকে রোজগার একেবারে লাটে উঠেছে। ফলে খাবে কি? সঞ্চয়ে যেটুকু ছিল তাও আজ শেষ। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের এই করুণ অবস্থার ফলে, তাই বাধ্য হয়ে মাছ বিক্রির পথ টাকেই অবশেষে বেছে নিয়েছেন তারা।
সে কারণেই এই লকডাউনের মধ্যেও নিয়ম করে সকালে সূর্য উঠলে নেমে পড়েন তারা নদীতে। আর দুপুরবেলা বাড়িতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া সেরে আবারও নদীই সঙ্গী হয়ে ওঠে গ্রামের এই সকল গরীব দুঃখী মানুষের।
যদিও সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তা দিয়েও বা কদিন ভরবে পেট? এদিকে মাঠে পড়ে রয়েছে চাষের ধান। তা কাটতেও এখন করোনা আতংকে শ্রমিক মিলছে না।
ফলে নদী থেকে আহরণ করা মাছ বিক্রি করে যেটুকু অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই চাল-ডাল কিনে কোন রকমে পেট ভরছে তাদের। তবে এদিন মাছ ধরতে আসা এক মহিলা বলেন, “বাড়ির সবাই এখন বেকার হয়ে গেছে। ঘরে থাকা চাল- ডালও শেষ। তাই কোনও রকম এভাবে বাড়ির সবাই মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছি”।
অপরদিকে গ্রামের আরও এক মাঝ বয়সী বাসিন্দা বলেন, “এখন একেবারে বেকার হয়ে গিয়েছি। পরিবারের মুখে ভাত তুলে দিতে এখন আমি এভাবে নদীতে নেমে মাছ ধরছি”। সব মিলিয়ে বলা চলে লকডাউনে এক শ্রেণীর মানুষ ছুটির আমেজে উপভোগ করলেও, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের অন্ন জোগাড় করতে ছুটছে রাত।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584