শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ
সপ্তাহখানেক আগে করোনা সংক্রমণের জেরে গোটা রাজ্যেই হয়ে গিয়েছে লকডাউন। মুখ্যমন্ত্রী খাদ্যশস্য থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যথার্থ মাত্রায় মজুতের কথা বললেও, অন্যান্য সামগ্রীর মতো ইতিমধ্যেই টান পড়েছে ওষুধের জোগানেও। ওষুধের উৎপাদন কমে তো গিয়েইছে। এমনকি বিভিন্ন ওষুধের দোকানেও মিলছে না পর্যাপ্ত ওষুধ।
শুধু তাই নয়, করোনা সংক্রমণের ভয়ে প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক। আর এতেই বিপদে পড়েছেন অনেকে। ঘরে বন্দি থাকলেও শহরের অনেক প্রবীণ-প্রবীণাদের নিয়মিত সুগার এবং প্রেশারের ওষুধ খেতে হয়। এমনকি বাদ যান না অনেক মধ্যবয়স্ক যুবক-যুবতীও। এমনকি চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অসুস্থ বা আহত অনেকেরই ওষুধের নিয়মিত ডোজ চলে।
আরও পড়ুনঃ মানুষ কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন তা দেখল, কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ মাছ বাজার
কিন্তু অভিযোগ, কেউই নিজের দরকার মত ওষুধ জোগাড় করতে পারছেন না। এমনকি অনলাইনে পাওয়া যায়, এমন ওষুধও অর্ডার করেও মিলছে না।
তবে সংকট মোকাবিলায় ওষুধ ব্যবসায়ীদের মতে, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যাওয়ার পর, প্রথমে সব ওষুধের দোকানেই মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের বিপুল চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু একটা সময়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলিও অমিল হয়ে যায়।
সাধারণত ওষুধ কোম্পানিগুলি তাদের ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে সমস্ত মাল পাঠিয়ে দেয় এবং তারপর ডিস্ট্রিবিউটর থেকে রিটেলারের কাছে অর্থাৎ বিভিন্ন এলাকার দোকানদারের কাছে পৌঁছে যায়। বেশিরভাগ ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে বড়বাজারে।
আরও পড়ুনঃ লকডাউনে জাতীয় সড়কে আটকে পণ্যবাহী ট্রাক, খাবার সঙ্কটে চালক খালাসিরা
এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বেশকিছু ডিস্ট্রিবিউটর, এমনকি রয়েছে রাজারহাটেও। ওষুধ ব্যবসায়ীরা বড়বাজারে গিয়ে ওষুধ কেনেন, আবার অনেক সময় বড়বাজার থেকে অর্ডার করে আসলে, ওষুধ দিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট দোকানে।
কিন্তু পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে, এখন বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।এমনকি রিটেলাররাও ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফলে প্রত্যেকটি ওষুধের দোকানেই জমা থাকা ওষুধের পরিমাণ কমে আসছে। তার জেরে ফল ভুগতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষজনকে।
‘অল বেঙ্গল ড্রাগস ফেডারেশনের’ পক্ষে এক কর্তার দাবি, শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জন্যই ই-পাস দিলেই হবে না। যদি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত লোকজন কোম্পানিতে না আসেন, তাহলে ওষুধ তৈরি হবে না ।আবার ওষুধগুলি ডিস্ট্রিবিউটর এর মাধ্যমে রিটেলারের হাত ঘুরে পাড়ার দোকানগুলোতেও পৌছবে না।
তাই ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকেও জরুরি পরিষেবার আওতায় এনে তাদের আবার কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে কাজ শুরু করতে দেওয়া উচিত ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর থেকে রিটেলারদের ও।
শুধু ওষুধই নয়, করোনার জেরে সমস্যায় পড়েছেন এ রাজ্যের হাজার হাজার সুগার, হার্ট, কিডনি, স্ট্রোক সহ নানা সমস্যার রোগীরা। এদের অনেকেই নিয়মিত ডাক্তার দেখান, আবার অনেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ভয় হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি থাকলেও প্রাইভেট চেম্বার প্রায় সব জায়গাতেই বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালেও সব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক থাকছেন না। ফলে অসুস্থ হয়েও চিকিৎসক এবং ওষুধ কোনওটাই পাচ্ছেন না অন্য অসুখের রোগীরা। অসুস্থ শরীরে ওষুধ না পেয়ে দূরে, যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই অনেকের।
পরিবহণ বন্ধ থাকায় বাড়িতে ওষুধের হোম ডেলিভারিও বন্ধ। একই সঙ্গে বয়স্ক- বয়স্কাদের মর্নিং ওয়ার্ক এবং ইভনিং ওয়ার্ক না করতে পারায় বেড়ে যাচ্ছে ওজন এবং স্ট্রেস।
সব মিলিয়ে তাদের বক্তব্য, করোনা সংক্রমণ বলতে গিয়ে অন্য অসুখেই না বেঘোরে মারা যেতে হয় এই শহরের একাধিক প্রবীণ প্রবীণাদের। এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র বলেন, ‘রোগীদের বলেছি বাড়িতে হাঁটুন। ছাদে হাঁটুন। ঘরে হাঁটুন। অন্যান্য ব্যায়ামও পরিমিত হারে করুন।’
পাশাপাশি বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরূপ দাস বিশ্বাস বলেন, ‘শুধু তো রোগীরা নন, বহু চিকিৎসকেরও নানা অসুখ বিসুখ আছে। এই সময়ে তাদেরও সাবধানে থাকা উচিত। বিপদে এখন তারাও চিকিৎসক নাও পেতে পারেন।’
এ বিষয়ে হার্ট সার্জেন ডাঃ কুণাল সরকার বলেন, ‘ক্রনিক রোগীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সত্যিই সাংঘাতিক।প্রয়োজন হলে তারা জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নিন।’ দ্রুত এ বিষয়ে চিন্তা না করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে, তা যেন ঘুরিয়ে মেনে নিচ্ছেন সমস্ত চিকিৎসকরাই।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584