সিমা পুরকাইত, দক্ষিণ ২৪ পরগণাঃ
বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বসত বাড়ি থেকে চাষের জমির ক্ষতির পরিমাণে দিশেহারা প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকাবাসী। ত্রাণ নিয়ে রাজনৈতিক স্বজন পোষণের পর এবার ঝড়ের কবলে পরা ছোট বড় গাছ নিয়ে দুর্নীতি কান্ড শুরু হয়েছে।
ক্ষোদ দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে গ্রাম সভার সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ পড়েননি তৃণমূল কংগ্রেস অঞ্চল সভাপতি থেকে ব্লক স্তরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বরাও।
বিপন্ন বসুন্ধরা রক্ষা করতে বিশ্ববাসী যখন বৃক্ষরোপণে এগিয়ে, তখন ঝড়ে যাওয়া গাছগুলি কেটে অর্থলোভীরা হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করেছে ব্যবসায়ীদের কাছে—এমনটাই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস দলের একাংশের দিকে। গ্রামের প্রবীণ-নবীনদের অভিযোগ, বন দফতরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্দ্বিধায় চলছে রমরমা বিক্রি। কোথাও আবার গাছ মজুত করে রাখা হয়েছে বেশি মূল্য পাওয়ার আশায়।
দক্ষিণ সুন্দরবনের নামখানা ব্লকের মৌশুনী গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগডাঙা, বালিয়াড়া, কুসুমতলা তিনটি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত। বুলবুল ঘূর্নিঝড়ে মৌশুনী গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচ-ছয় হাজার গাছ পড়ে যায়। এর মধ্যে শিরিষ, খিরিস, ইউক্যালিপটাশ, ঝাউ, মেহগনি গাছ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকায়।
আরও পড়ুনঃ জাঁকিয়ে শীত বর্ধমানে, ভাল ফলনের আশা চাষিদের
জানা গেছে, মৌশুনী গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দেশে বন দফতরের অনুমতি ছাড়াই বালিয়াড়া মৌজায় ট্রেন্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে পতিত গাছগুলি কাটা হয়। লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বালিয়াড়া মৌজার স্থানীয় তৃণমূল নেতা ওরফে গ্রামসভার সদস্য কায়েম মোল্লার বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে জড়িত আছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব রামকৃষ্ণ শী, উপ-প্রধান এবং প্রধানও।
জানা গেছে, বালিয়াড়াতে ৪০ থেকে ৪১ টি ট্রেন্ট ব্যবসা রয়েছে। ট্রেন্ট মালিকরা নিজেদের স্বার্থে হাত মেলাচ্ছে স্থানীয় অর্থলোভী তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের দিকে।
অন্যদিকে পাথরপ্রতিমা ব্লকের পাথরপ্রতিমা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামে ১৯৬ নং বুথে ৪০০ টি গাছ নষ্ট হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের মদতে। স্থানীয়দের দাবি ছোট-বড় মিলে ৩৭০০ গাছ ছিল এই বুথে। বুলবুলের ফলে উপড়ে যায় ৬০-৭০ গাছ।
আরও পড়ুনঃ বাঘাযতীনে আক্রান্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা, দুষ্কৃতীদের মুখে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি
অথচ ১৯৬ নং বুথে গ্রামীণ রাস্তার দু’ধারে ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছ বাদ দিয়ে কাটা হয়েছে ৪০০ ইউক্যালিপটাস গাছ, যেগুলো পঞ্চায়েত টেন্ডারে গাছ প্রতি ৬৬৬ টাকা হিসাবে বিক্রি হয়েছে। জানা গেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রাম সভার সদস্য চয়ন কুমার দাস-সহ তৃণমূল নেতা উত্তাল মন্ডল, স্বপন মন্ডল, কানাই জানা, সুকুমার জানা এই কাজে যুক্ত রয়েছেন। এদের নেপথ্য রয়েছে পাথরপ্রতিমা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় নায়েক, অঞ্চল নেতা প্রিয় রঞ্জন মাঝি।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ বর্তমানে যে গাছের দাম দুই থেকে তিন হাজার টাকা সে গাছ বিনা নোটিশে রাতের অন্ধকারে হাত সাফাই হচ্ছে মাত্র ৬৬৬ টাকায়। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামেন দক্ষিণ লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামবাসী। তাদের প্রশ্ন, বন দফতরের অনুমতি ছাড়া সরকারি গাছ কীভাবে কাটছে পঞ্চায়েত? ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ না কেটে কেন রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ কাটা হচ্ছে—সে নিয়েও উঠছে নানান প্রশ্ন।
আরও পড়ুনঃ সহযাত্রী-বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে বচসা সাধ্বী প্রজ্ঞার, উড়ানে বিলম্ব ৪৫ মিনিট
পাশাপাশি গাছ কাটার সঙ্গে গাছ বিক্রি ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের দাবি, নিজেদের প্রভাবশালী তকমা দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে গাছ । মুখ খুললে হবে পুলিশি অত্যাচার। অন্যদিকে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস গ্রাম সভার সদস্যরা।
অন্যদিকে একে অপরের দোষারোপে পথে নেমেছে বিজেপি। গাছ চুরির ঘটনায় পথে নামার হুঁশিয়ারি বিজেপি নেতা অরুণ কুমার জানার ।
নামখানা ব্লকের মৌশুনী গ্রাম পঞ্চায়েতের বকখালি বন দফতর থেকে পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামগঙ্গা বন দফতরের কাছে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে গাছ কেলেঙ্কারির ঘটনায়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, দুটি গ্রামের, দুটি ব্লকের পরিস্থিতি যদি এমন হয়, তাহলে গোটা সুন্দরবনের কী হাল হতে পারে এই নিয়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা মেলেনি তাদের। স্থানীয় প্রশাসন কি ততপর হবে, প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584