ওয়েব ডেস্ক, নিউজ ফ্রন্টঃ
লাক্ষাদ্বীপের নতুন প্রশাসক প্রফুল প্যাটেলের একের পর এক সিদ্ধান্তে তুমুল বিতর্ক জাতীয় রাজনীতিতে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে দাদরা নগর হাভেলি,দমন দিউ এর প্রশাসক প্রফুল প্যাটেলকে লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসক পদে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রশাসক পদে বসার পর থেকেই তিনি নিতে থাকেন একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। প্রথমত আসে গোমাংসে নিষেধাজ্ঞা; বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রথম আঘাতটাই আসে গোমাংসে, আমিষ ভোজনে এমনটাই বারেবারে দেখা গিয়েছে। প্যাটেলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত হলো, দুই সন্তানের অধিক অভিভাবকের পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা , স্বাভাবিক ভাবেই তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই সিদ্ধান্তের ফলে।
আরও পড়ুনঃ করোনাকালে মোদী সরকারের ওপর এবার ভরসা হারাচ্ছেন আর্মি অফিসাররাও
কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে অপরাধের হার নগন্য, সেখানে হঠাৎ করেই গুন্ডাদমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের প্রয়োজন লাক্ষাদ্বীপে কেন হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে, সাধারণ মানুষের ওপর দমন পীড়ন চালিয়ে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রাখাই কি নয়া প্রশাসকের উদ্দেশ্য! প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
এগুলি ছাড়াও আরেকটি যে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল তা হলো,উন্নয়নের কাজে যেকোন জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে প্রতিবেশী রাজ্য কেরালার সিপিআইএম ও কংগ্রেস। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, লাক্ষাদ্বীপের সংস্কৃতি ও সেখানকার মানুষের জীবনযাপনকেই বড় সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে শুধুমাত্র প্রশাসক প্যাটেলের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য।
আরও পড়ুনঃ ভারতীয় পাসপোর্টে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল বহু দেশ
এভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে প্রশাসন। এমনকি কেরালার সঙ্গে লাক্ষাদ্বীপের যে দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক তাকেও ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিজয়ন ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট ও কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ প্রফুল প্যাটেলের চরম অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন।
প্রশাসকের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ও আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র সাংসদ মহম্মদ ফয়জল পিপি। জমি অধিগ্রহনের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে কেন্দ্র। তাঁর প্রশ্ন জাতীয় সড়কের মতো আয়তনের সড়ক লাক্ষাদ্বীপের কোনো প্রয়োজন নেই, তাহলে কেন এভাবে মানুষের জমি করে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার! সর্বোপরি, জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে এসমস্ত বিষয়ে কোনো আলোচনাই করছেন না প্রশাসক, কেন্দ্রকে খুশি রাখাই তাঁর উদেশ্য, লাক্ষাদ্বীপের মানুষের উন্নতি তাঁর উদ্দেশ্য নয়।
আরও পড়ুনঃ কোকেনকাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেতার সঙ্গে রাজ্যপালের ছবি পোস্ট, আক্রমণাত্মক কল্যাণ
কেন্দ্রের কাছে চিঠি লিখে প্যাটেলের অপসারণের দাবি তুলেছেন তিনি, প্যাটেলের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি বাতিল করারও দাবি জানানো হয়েছে।এবিষয়ে প্রশাসক প্রফুল প্যাটেল অবশ্য দাবি করেছেন তিনি লাক্ষাদ্বীপের মানুষের উন্নয়নের স্বার্থেই প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মালদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপের থেকে খুব বেশি দূরে নয় কিন্তু মালদ্বীপ আজ বিশ্ববিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি।
তিনি নাকি লাক্ষাদ্বীপকে সেই স্তরে উন্নীত করতে চান। কিন্তু তার সঙ্গে গোমাংসে নিষেধাজ্ঞা এবং দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলে জনপ্রতিনিধি হওয়া যাবে না এই সিদ্ধান্তের সম্পর্ক ঠিক কিভাবে তার কোন উত্তর প্রফুল প্যাটেলের তরফে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়েও প্রফুল প্যাটেলের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের #SAVELAKSHADWIP হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। এই ঝড় যে সহজে থামার নয় এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584