খেলা হবে, টুম্পা-র চাপে পিছু হটছে জয় শ্রীরাম

0
132
শুভশ্রী মৈত্র

বাঙালি চিরকালই একটু আবেগপ্রবণ জাতি, আমাদের কাছে ভোটও আসে বেশ উৎসবের মেজাজ নিয়েই। ভোট যত এগোয় পাড়ায় পাড়ায় উত্তেজনাও তত বাড়তে থাকে, তর্ক বিতর্কের বন্যা বইতে থাকে। এছাড়াও বাঙালি একটু বেশি সৃজনশীলও বটে তাই বাংলার রাজনীতিতে স্লোগানের বেশ একটা বড় ভুমিকা আছে, সে আজ থেকে নয় বেশ কয়েক দশক ধরেই স্লোগানে বাঙালির ঐতিহ্য রয়েছে।

Jai Shri Ram parody | newsfront.co

তবে এসব কিছুর মধ্যেই এই বছরের ভোট একটু বেশিই গুরত্বপূর্ণ। সারা দেশে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ত শক্তি, বাংলাতেও তার আগ্রাসন অব্যাহত। স্বাভাবিকভাবেই তার ছায়া জনমানসেও ছড়িয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, বিপক্ষে বামফ্রন্ট, জাতীয় কংগ্রেস ও নব্য গজিয়ে ওঠা দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের জোট আর ভারতীয় জনতা পার্টি, এই ত্রিমুখী লড়াই।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় নামী দামী নেতাদের দল বদল, কিন্তু আমেজ নষ্ট হয়নি স্লোগানের। বলা যায় স্লোগান ছাড়িয়ে ব্যাপারটা পৌঁছে গিয়েছে থিমে। থিমের মধ্যেই বলা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কি কি অভিযোগ অন্য দলের প্রতি, কিই বা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এইসবই। মোটের ওপর ব্যাপারটা বেশ নতুন রকম। দেখা যাক আদতে জিনিসটা ঠিক কেমন।

প্রথমে আসা যাক শাসক দলের থিম ‘খেলা হবে’, তৃণমূল কংগ্রেসেরই নবীন কর্মী দেবাংশু চৌধুরীর লেখা গানটি সাধারণ মানুষের মনেও ভালো দাগ কেটেছে। কথায় কথায় লোকে বলে উঠছেন ‘খেলা হবে’ সে যেকোনো প্রসঙ্গেই হোক না কেন। গানের কথায় রয়েছে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা, দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নেতাদের কথা এবং আবার সরকারে ফিরে আসার আত্ম প্রত্যয়। সর্বোপরি ধর্ম নিয়ে রাজনীতির চরম বিরোধিতা আর সাথে দেবাংশুর অসাধারণ গায়কী, কিছুটা কবিতার ঢঙে এবং ছন্দে।

এরপর বাম জোটের ব্রিগেড সমাবেশ উপলক্ষে এলো প্রবল জনপ্রিয় সাম্প্রতিক একটি বাংলা গান ‘টুম্পা সোনা’র প্যারডি ‘তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাবো টুম্পা’ । এই থিম সংটি পড়লো ব্যাপক সমালোচনার মুখে, অনেকেই বললেন গানটি অত্যন্ত রিগ্রেসিভ।

শেষপাতে এলো বিজেপির থিম সং, ‘বেলা চাও’ গানটির অনুকরণে ‘পিসি যাও’। মুশকিলটা হল এখানেই, বেলা চাও গানটির একটা ইতিহাস রয়েছে। এটি একটি ইতালীয় লোকসংগীত, পরবর্তীকালে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে গানটি ব্যবহার করা হয়। নাজিবাদের বিরুদ্ধে এই গানটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এটি সারাবিশ্বে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের সংগীত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গানের মর্মার্থ না বুঝে , ইতিহাস না জেনে তারা এটি গেয়ে ফেললো। কিছুটা ‘সেমসাইড’ গোলের মত। আর এমন সময় গাইল যখন কৃষক আন্দোলনে জেরবার কেন্দ্রীয় সরকার। তবে এটা ঠিক যে বাংলায় এসে বিজেপিকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তাদের প্রচলিত থিম সং বদলের কথা।

আরও পড়ুনঃ নির্বাচনী প্রচারে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির উপর নিষেধাজ্ঞার আর্জি খারিজ শীর্ষ আদালতে

কারন নির্বাচনী প্রচারে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানকে তাদের দলের ব্র্যান্ড স্লোগানে পর্যবসিত করে ফেলেছিল। তবে এবারের বাংলার নির্বাচনে বিভিন্ন দলের বাঙালি থিম সংয়ের চাপে জয় শ্রীরাম যে পিছু হটছে তা বিজেপির ‘পিসি যাও’ গানের নির্মাণই বুঝিয়ে দিচ্ছে।

সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে অনেককিছুই, সাতের দশকের দেওয়াল লিখন আজ ফেসবুকের দেওয়ালে জায়গা করে নিয়েছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক কালচারের, সৌজন্যের আর ভাষার। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানে তাঁকে যেকোনো রকম আক্রমণ করাই ‘জায়েজ’ এখন। সে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন হোক কি তাঁর সন্তান সন্ততির জীবন হোক।

আরও পড়ুনঃ ভোট নিয়ে ব্যস্ত অধীর, লোকসভায় জাতীয় কংগ্রেসের দলনেতা রভনীত

আর ‘ভাষা সন্ত্রাস’! সে নেতা থেকে সমর্থক, কম্পিটিশনে নামতে পারেন। আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু আলোচনার একটা প্রধান পরিসর, তাই যেকোনো সামাজিক মাধ্যমে একটু যাওয়া আসা থাকলেই এসব চোখে পড়ে। খুনের হুমকি, ধর্ষণের হুমকি এছাড়া যত রকম পিতৃতান্ত্রিক গালাগাল সবকিছুর রমরমা।

সর্বোপরি ইদানিং বেশ কিছু বছর ধরে আমরা ধর্ম (অ)নিরপেক্ষতার নতুন পাঠ নিচ্ছি, হাতের কাছে অন্য ধর্মের মানুষ পেলে আমরা তাকে ভারচুয়ালি খুন করতেও পিছপা হইনা। এই যে রাজনীতির ‘মনস্টার’ তৈরি করছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে তার ফল কিন্তু সুদূরপ্রসারী, এ জিনিস যদি এখনই বন্ধ নাহয় কয়েক প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে আমাদের দোষে। এই দায় কারুর ঘাড়ে চাপিয়ে আমরা কেউই বাঁচবো না।

আর থাকলো নির্বাচন! সে তার নিয়মে হোক না! সরকারের কাছে কি প্রত্যাশা আমাদের, সরকারের প্রতি কি অভিযোগ, জাত আগে না ভাত আগে, ধর্ম আগে না মানুষ আগে লড়াই হোক এই নিয়ে একটা প্রাণও যেন না যায়। সাধারণ ভোটার হিসেবে চাইবো বাঙালীর কাছে ভোট উৎসবের আমেজেই আসুক, গনতন্ত্রের উৎসব।

নিউজফ্রন্ট এর ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন
WhatsApp এ নিউজ পেতে জয়েন করুন আমাদের WhatsApp গ্রুপে
আপনার মতামত বা নিউজ পাঠান এই নম্বরে : +91 94745 60584

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here